গোয়াইনঘাটের ওসি সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, বাদির বিরুদ্ধে স্বাক্ষীদের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১:৫৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১

গোয়াইনঘাটের ওসি সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, বাদির বিরুদ্ধে স্বাক্ষীদের অভিযোগ

Manual2 Ad Code

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: নিজেদের অপকর্ম লুকিয়ে রাখতে, গোয়াইনঘাটের ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী রবিবার সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল দায়রাজজ আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোাগকারী গোয়াইনঘাট থানাধীন জাফলং নয়াবস্তি গ্রামের মামলাবাজ ইনছান আলী। তিনি গোয়াইনঘাট থানার ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ষড়যন্ত্র মূলক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। যাহা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যদিও অভিযোগটি এখনো আমলে নেয়নি সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল দায়রাজজ আদালত। তথাপি এরই সূত্রধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গোয়াইনঘাট থানার ওসি সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
উক্ত অভিযোগে মিথ্যা স্বাক্ষী হিসাবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারাই একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।

Manual2 Ad Code

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে মদরিছ আলী বলেন, সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল দায়রাজজ আদালতে করা অভিযোগ পত্রে তার অনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষী হিসেবে তাদের নাম ব্যাবহার করেছেন জাফলংয়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী আলিম উদ্দিনের পিতা ইনছান আলী। যে বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত নই।

তিনি আরও বলেন, জাফলংয়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী আলিম উদ্দিন ও তার পিতা ইনছান আলীর উপর গোয়াইনঘাটের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সফিক মিয়া হত্যা মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন সহ সর্বমোট ৯ টি মামলা বিদ্যমান রহিয়াছে। তার মধ্যে দুটি মামলায় সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া ইনছান আলী এলাকার চিহ্নিত মামলাবাজ, দখলবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। আলিম উদ্দিন ১২ বছর বয়স থেকেই তার বাবা ইনছান আলীর সাথে বারকী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে এখন সে কোটিপতি। তার এখন অঢেল সম্পত্তি। ভাইদের নামেও গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। আর এসব হয়েছে জাফলং কেয়ারীর সুবাদেই। তার পরিবারে ভাইদের সংখ্যা বেশি। আত্মীয়-স্বজনের সংখ্যাও কম নয়। জাফলং নয়াবস্তির যুবক সালামকে প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়ার পরেই ইনছান আলীর পরিবার আলোচিত হয়ে ওঠে। এঘটনায় জাফলংয়ে সন্ত্রাসী হিসেবে আলিম উদ্দিনের নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে। তার নেতৃত্বে গত ৭ বছর ধরে জাফলংয়ে অবাধে চলে লুটপাট।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষীরা আরও বলেন, আলিম উদ্দিনের পাথর লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় মামার বাজারে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সালেক নামের এক ট্রাক চালককে। আলিম উদ্দিন ছিলো বারকি শ্রমিক। নয়াবস্তির বাসিন্দা হওয়ার গ্রামের ওপারে জাফলং চা বাগান এলাকার লুটপাট করা পাথর সে নৌকা দিয়ে বহন করতো। এরপর থেকে শুরু হয় তার রাজত্ব। কিছু দিনের মধ্যে আলিম উদ্দিনই হয়ে ওঠে জাফলংয়ের মূল নিয়ন্ত্রক। এখন আলিম উদ্দিন ও তার ভাইরা প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় করে নিজেদের গ্রামে তিনটি আলাদা বাড়ি তৈরি করেছেন। এর মধ্যে আলিম উদ্দিনের বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। অপর দু’টি বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। নিজের নামে জাফলংয়ে অনেক জমি কিনেছেন আলিম উদ্দিন। তিনি গত বছর স্থানীয় লক্ষীপুর গোরস্থানের কাছে তোফাজ্জুলের কাছে থেকে ২৫ শতক জমি ক্রয় করেছেন। দলিলে এই জমির মূল্য ৭৫ লাখ টাকা দেখানো হলে মালিককে দেয়া হয়েছে দেড় কোটি টাকা। পূর্বের মালিকপক্ষ সূত্র জানিয়েছে- আলিমউদ্দিন নিজের নামেই ওই ভূমি ক্রয় করেন। এবং টাকা পরিশোধ করেন তিনি। পরে তিনি জাফলং বল্লাঘাটের পুঞ্জিতে উডি খাসিয়ার কাছ থেকে কোটি টাকা দিয়ে ৬১ শতক জমি ক্রয় করেছেন। এখনো দলিল রেজিস্ট্রি না হলেও স্ট্যাম্পে দস্তখত করে রেখেছেন। ক্রাশার মিল স্থাপন করতে এই জমি ক্রয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তানিশা স্টোর ক্রাশার মিল রয়েছে তার। প্রায় কোটি টাকার পাথর তার স্টোন ক্রাশার মিলে স্টক করা রয়েছে। ক্রাশার মিল এলাকার এক নম্বর সারিতে অবস্থিত ওই ক্রাশার মিলের মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। দেড় বছর আগে অন্য এক মালিকের কাছ থেকে আলিম উদ্দিন ওই স্টোন ক্রাশার মিল ক্রয় করে।জাফলং নয়াবস্তি গ্রামের বাসিন্দা আলমাছ উদ্দিনসহ কয়েকজন বাসিন্দা জানান- জাফলং কোয়ারি সংরক্ষিত এলাকা হওয়ার পর পাথরখেকো আলিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা জুম মন্দির এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট চালিয়েছিলেন। তারা গত চারবছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পাথর লুট করেছে। এসব পাথর তুলতে গিয়ে অন্তত ১০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও অদৃশ্য কারণে আলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

Manual2 Ad Code

গোয়াইনঘাট থানায় অফিসার্স ইনচার্জ হিসেবে মো: আব্দুল আহাদ যোগদানের পর জাফলং নয়াবস্তি এলাকার ইনছান আলী তার ছেলে আলিম উদ্দিনসহ তাদের পোষা বাহিনীদের নিয়ে জাফলং কোয়ারী এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বোমা মেশিন, বিলাই মেশিন ও সেইভ মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আব্দুল আহাদের সাথে রফা দফা করতে আসেন। উক্ত বিষয়ে আব্দুল আহাদ স্পষ্ট বিরোধীতা ও তাদের সাথে আতাঁত করতে অপারগতা প্রকাশ করিলে ওসি আহাদের বিরুদ্ধে ইনছান আলী ও তার পোষা বাহিনী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যার্থ হন। এছাড়া সম্প্রতি জাফলং এলাকার জনৈক কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও ছবি ভাইরালের বিষয়ে মামলা রুজু করা হলে ওসি আহাদের বিরুদ্ধে চওড়া হয়ে উঠেন আলীমউদ্দিন পরিবার। পাশাপাশি পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক সফিক মিয়ার সাথে প্রকাশ্যে মারামারি ও এঘটনায় সফিক মিয়া হত্যায় আলিম উদ্দিন পরিবারের উপর মামলা গ্রহণ করা হলে আরো চওড়া হয়ে উঠেন ইনছান আলী। তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশ ও শেষপর্যন্ত উল্টো আদালতে ওসি সহ ০৯ জনের বিরুদ্ধে ০১ টি অভিযোগ দায়ের করেন।

তারা বলেন, সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল দায়রাজজ আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগটি সম্পুর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত কারণ। তাদেরকে স্বাক্ষী হিসেবে নাম উল্লেখ করেছেন অথছো তারা জানেনা। এ থেকে প্রমাণিত হয় অভিযোগটি মিথ্যা। থানা জিডি, মামলা রুজু ও তদন্তে কোন টাকা লাগে না। তিনি থানার অবকাঠামোগত দৃষ্টি নন্দন উন্নয়ন উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক সহ বৈশি^ক করোনা পরিস্থিতি, বন্যা পরিস্থিতি সহ প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে গোয়াইনঘাট বাসীর পাশে দাড়িয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। তারা মিথ্যা অভিযোগকারী ইনছান আলী ও তার ছেলে আলিম উদ্দিনসহ পুষিত বাহিনীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এই মিথ্যা ও সাজানো মামলায় দায় থেকে গোয়াইনঘাট থানার ওসিকে অব্যহতি প্রধানে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আশু হস্থক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
উপস্থিত ছিলেন এ অভিযোগের স্বাক্ষী মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল জলিল, শ্রমিক নেতা ফয়জুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক হাজী মুজিবুর রহমান। সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন মদরিছ আলী।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2021
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728  

সর্বশেষ খবর

………………………..