ওসি আহাদের বিরুদ্ধে জাফলংয়ের পাথর খেকো পরিবারের নানাবিধ ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১

ওসি আহাদের বিরুদ্ধে জাফলংয়ের পাথর খেকো পরিবারের নানাবিধ ষড়যন্ত্র

Manual5 Ad Code

আলী হোসেন, গোয়াইনঘাট :: জাফলংয়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী আলিম উদ্দিন। ১২ বছর বয়স থেকেই তার বাবা ইনছান আলীর সাথে বারকী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো সে। মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে সে এখন কোটিপতি। তার এখন অঢেল সম্পত্তি। ভাইদের নামেও গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। আর এসব হয়েছে জাফলং কেয়ারীর সুবাদেই। তার পরিবারে ভাইদের সংখ্যা বেশি। আত্মীয়-স্বজনের সংখ্যাও কম নয়। থানা পুলিশও এসে যায় হাতের মুঠোয়। জাফলং নয়াবস্তির যুবক সালামকে প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়ার পরেই তিনি আলোচিত হয়ে ওঠেন।

Manual1 Ad Code

এঘটনায় জাফলংয়ে সন্ত্রাসী হিসেবে আলিম উদ্দিনের নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে। তার নেতৃত্বে গত ৭ বছর ধরে জাফলংয়ে অবাধে লুটপাট করা হয়। এতে প্রায় শতকোটি টাকার পাথর লুটপাট হয়েছে। পাথর লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় মামার দোকানে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সালেক নামের এক ট্রাক চালককে। এ ঘটনায় আলিমউদ্দিন আসামি না হলেও গ্রেপ্তার হয় তার ভাই শাহজাহান। উক্ত ঘটনার প্রতিবাদ করার কারণেই সালেখকে মামার দোকানে প্রকাশ্য রড দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয়। জাফলংয়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন- আলিম উদ্দিন তার ভাইরা ৭ বছর আগেও এতো সম্পত্তির মালিক ছিলো না।

Manual2 Ad Code

আলিম উদ্দিন ছিলো বারকি শ্রমিক। নয়াবস্তির বাসিন্দা হওয়ায় গ্রামের ওপারে জাফলং চা বাগান এলাকার লুটপাট করা পাথর সে নৌকা দিয়ে বহন করতো। এরপর থেকে শুরু হয় তার রাজত্ব।

কিছু দিনের মধ্যে আলিম উদ্দিনই হয়ে ওঠে জাফলংয়ের মূল নিয়ন্ত্রক। এখন আলিম উদ্দিন ও তার ভাইরা প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় করে নিজেদের গ্রামে তিনটি আলাদা বাড়ি তৈরি করছে। এর মধ্যে আলিম উদ্দিনের বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। অপর দু’টি বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। নিজের নামে জাফলংয়ে অনেক জমি কিনেছেন আলিম উদ্দিন। তিনি গত বছর স্থানীয় লক্ষ্মীপুর গোরস্থানের কাছে তোফাজ্জুলের কাছে থেকে ২৫ শতক জমি ক্রয় করেছেন।

দলিলে এই জমির মূল্য ৭৫ লাখ টাকা দেখানো হলে মালিককে দেয়া হয়েছে দেড় কোটি টাকা। পূর্বের মালিকপক্ষ সূত্র জানিয়েছে- আলিমউদ্দিন নিজের নামেই ওই ভূমি ক্রয় করেন। এবং টাকা পরিশোধ করেন তিনি। পরে তিনি জাফলং বল্লাঘাটের পুঞ্জিতে উডি খাসিয়ার কাছ থেকে কোটি টাকা দিয়ে ৬১ শতক জমি ক্রয় করেছেন। এখনো দলিল রেজিস্ট্রি না হলেও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে রেখেছেন। ক্রাশার মিল স্থাপন করতে এই জমি ক্রয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তানিশা স্টোর ক্রাশার মিল রয়েছে তার।

প্রায় কোটি টাকার পাথর তার স্টোন ক্রাশার মিলে স্টক করা রয়েছে। ক্রাশার মিল এলাকার এক নম্বর সারিতে অবস্থিত ওই ক্রাশার মিলের মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। দেড় বছর আগে অন্য এক মালিকের কাছ থেকে আলিম উদ্দিন ওই স্টোন ক্রাশার মিল ক্রয় করে।জাফলং নয়াবস্তি গ্রামের বাসিন্দা আলমাছ উদ্দিনসহ কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন- জাফলং কোয়ারি সংরক্ষিত এলাকা হওয়ার পর পাথর খেকো আলিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা জুম মন্দির এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট চালিয়েছিলেন। তারা গত চারবছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পাথর লুট করেছে। এসব পাথর তুলতে গিয়ে অন্তত ১০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও অদৃশ্য কারণে আলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। এদিকে- জাফলং জুম মন্দির এলাকা ছাড়াও চা বাগান এলাকায় অবাধে পাথর লুটপাট চালানো হয়েছে। সংরক্ষিত বাগান ভেঙে পাথর লুট করা হলেও প্রশাসন ছিল নির্বিকার। ইতিপূর্বেই আলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে চা বাগান এলাকায় প্রতিদিন ৫০-৬০টি সেভ ও বিলাই মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট করা হতো। এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন ও থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদের নেতৃত্বে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। ফলে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের উপর ক্ষেপে বসেন ইনছান আলী ও তার পরিবার।

Manual3 Ad Code

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইনছান আলীর মুল বাড়ী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। সেখানেও তিনি বহুবিবাহ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য সমালোচিত ছিলেন। তার অপকর্মের কারণে সেই এলাকার মানুষ তাকে এলাকা ছাড়া করে। পরে ইনছান আলী গোয়াইনঘাটের জাফলং এলাকায় বসতি গড়ে তোলেন। জাফলংয়ের নয়াবস্তি এলাকায় এসেও তিনি বহুবিবাহে মগ্ন হয়ে ওঠেন।তার কয়েকজন স্ত্রীর বহু সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তার বাবা ইনছান আলী অপরাধী ছেলেদের বাচাঁতে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল আহাদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইনছান আলী জাফলংয়ে শীর্ষ চাঁদাবাজ ও নারী নির্যাতনকারী আলীম উদ্দিনের পিতা। এই আলীম উদ্দিনকে রক্ষা করতে বড় অংকের টাকা দিয়ে ওসিকে ম্যানেজ করতে না পেরে তিনি সর্বশেষ একটি চক্রের প্ররোচনায় তিনি এ মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে একাধীক মামলার পলাতক আসামি আলীম উদ্দিন। মুক্তিযোদ্ধা ইনছান আলীর ৯জন ছেলে রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ জনই বড় বড় অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছেন। যার ফলে এলাকার লোকজন এই পরিবারকে সন্ত্রাসী পরিবার হিসাবে চিনেন। এই পরিবারের ভয়ে স্থানীয় সর্বদা আতঙ্কে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করা সাহস পায়নি।

Manual2 Ad Code

স্থানীয়রা জানান, গোয়াইনঘাট থানায় নতুন ওসি যোগদানের সাথে সাথে ইনছান আলীর ছেলে আলীম উদ্দিন হাত মিলানোর চেষ্টা করেন। বড় অংকের টাকা দিয়ে ওসিদের ম্যানেজ করে নেন তিনি। ওসি হাতে মুঠোয় আসলেই শুরু হয় জাফলংয়ে তার ত্রাসের রাজত্ব। বিগত ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত গোয়াইনঘাট থানায় ওসি ছিলেন আব্দুল হাই। তিনি ওসি থাকাকালীন সময়ে এই সন্ত্রাসী পরিবারের অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছিলেন। তখন ওই মুক্তযোদ্ধা ওসি আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু তার অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এছাড়া গোয়াইনঘাট থানায় মোঃ আব্দুল আহাদ অফিসার ইনচার্জ হিসেবে নিয়োগের পর তিনি জাফলংয়ে আলিম উদ্দিনের রাজত্ব ভেঙেদেন এবং সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করেন। ফলে ফুঁসে ওঠে আলিম বাহিনী, শুরু করেন নানা ষড়যন্ত্র। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে জেলা শ্রেষ্ট ওসি আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে শুরু করেছেন নানাবিধ ষড়যন্ত্র।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2021
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728  

সর্বশেষ খবর

………………………..