কোম্পানীগঞ্জের উৎমা কোয়ারীতে চেয়ারম্যান ফরিদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ৭:২৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১

কোম্পানীগঞ্জের উৎমা কোয়ারীতে চেয়ারম্যান ফরিদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

Manual4 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সিলেট তথা দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জসহ সবকটি পাথর কোয়ারী। বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও পাথরখেকোদের মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংসের জন্যই পাথর কোয়ারীগুলো বন্ধ থাকার অন্যতম কারণ। তবে ইজারার কারনেই সচল রয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের উৎমা পাথর কোয়ারী। যে কারণে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পাথর ব্যবসায়ীসহ খেটে খাওয়া হাজার হাজার পাথর শ্রমিকরা।

দীর্ঘদিন ধরে পাথর কোয়ারীগুলো বন্ধ থাকার কারনেই এখনো আহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। ঋণের দায়ে দেউলিয়া হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন পাথর ব্যবসায়ীসহ পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

Manual5 Ad Code

উৎমা কোয়ারী সচল থাকার সুবাদে অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও অতীতের ন্যায় তাতেও শুরু হয়েছে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি। মিনি বোমামেশিন নামক এক ধরণের শক্তিশালী লিস্টার মেশিন দিয়ে চলছে পাথর উত্তোলন। ধ্বংস করা হচ্ছে রাস্তাঘাট এবং সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বনশ্রী আদর্শ গ্রামসহ দৃষ্টিনন্দন স্থান। আর এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি। প্রভাবশালী হওয়ার কারনে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলতে মুখ খুলেন না কেউ। ওই প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির নামে আদায় হচ্ছে বিপুল অংকের টাকা।

জানা যায়, উৎমা পাথর কোয়ারী ইজারা নিয়ে চলছে বললেও ইজারা বর্হিভূত জায়গায় প্রায় শতাধিক গর্ত করে উত্তোলন করা হচ্ছে পাথর। ইজারাকৃত ও ইজারা বর্হিভূত এসব জায়গা থেকে পাথর উত্তোলনে কোনো ধরণের নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। যে যার মতো করে উত্তোলন করছেন পাথর। শর্ত অনুযায়ী ইজারাদার তার ইজারাকৃত স্থানের সীমানা চিহ্নিত করে পাথর উত্তোলন করবেন। কিন্তু ইজারাদার তার ইজারাকৃত স্থানের সীমানা চিহ্নিত না করায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন অসাধু কিছু পাথর ব্যবসায়ীদের দিয়ে যত্রতত্র গর্ত করিয়ে লুটপাট করাচ্ছেন পাথর। বিনিময়ে তিনি নিচ্ছেন প্রতিটি গর্ত থেকে বিনা পুঁজিতে ষোল আনার মধ্যে চার আনার অংশীদারিত্ব।

Manual2 Ad Code

স্থানীয়রা জানান, শুধু ইজারা বর্হিভূত এলাকা নয় সীমান্তের “নো ম্যানস ল্যান্ড” ঘেঁষে হওয়া গর্তগুলোতেও রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিনের বিশাল আধিপত্য। যিনি তাকে অংশ দেবেন তিনিই “নো ম্যানস ল্যান্ড” ঘেঁষে করতে পারবেন গর্ত। চেয়ারম্যান ফরিদের তৈরী একটি বাহিনীও রয়েছে কোয়ারী এলাকায়।

স্থানীয়রা আরও জানান, পাথর কোয়ারীতে নিরাপত্তার নামে চেয়ারম্যান কর্তৃক গঠিত বাহিনী দিয়ে প্রতিদিন আদায় করা হয় কয়েক লাখ টাকা। যেসব গর্ত মালিকরা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তখন ওই বাহিনী দিয়ে প্রথমে গর্ত বন্ধ করার হুমকি প্রদান করা হয়। তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেসব গর্ত।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উৎমা কোয়ারী এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক গর্ত রয়েছে। এসময় স্থানীয়রা জানান, প্রত্যেক গর্ত থেকে প্রতিদিন দুই ধাপে চাঁদা আদায় করা হয়। প্রথম ধাপে ৩ হাজার আবার দ্বিতীয় ধাপে ২ হাজার টাকা করে মোট ৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ১০/১৫টি পে-লোডার ও এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে গর্ত বড় ও গভীর করার কাজ করা হয়। এক রাত কাজ করতে হলে প্রতিটি পে-লোডার ও এক্সকেভেটর মালিককে গুনতে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর আদায়কৃত সেসব টাকা ঢুকে উৎমা কোয়ারীর “ওয়ান ম্যান আর্মি” খ্যাত চেয়ারম্যান ফরিদের পকেটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পাথর ব্যবসায়ীরা কোয়ারীতে বিভিন্ন স্টাইলের চাঁদাবাজির বিস্তর তথ্য দেন। তারা বলেন, দিনে গর্ত আর রাতে পে-লোডার ও এক্সকেভেটর থেকে ইচ্ছে মাফিক চাঁদা আদায় করা হয় চেয়ারম্যানের নামে।

Manual3 Ad Code

উৎমা কোয়ারী এলাকার একটি বাড়িতে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর আদায়কৃত চাঁদার টাকা নিয়ে চেয়ারম্যান ও অন্যান্যদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারার আসর বসে। সেই আসরের সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান নিজেই। ভাগ-বাটোয়ারার সিংহভাগ টাকা চলে আসে চেয়ারম্যানের দখলে।

Manual2 Ad Code

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিনের বেপরোয়া অনিয়ম ও চাঁদা বানিজ্যের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের দেয়া অসংখ্য বক্তব্য বর্তমান সিলেট-এর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

এবিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2021
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728  

সর্বশেষ খবর

………………………..