রায়হান হত্যা: সংবাদকর্মী নোমানকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশিত: ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০২০

রায়হান হত্যা: সংবাদকর্মী নোমানকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে পুলিশ

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উঠে এসেছে এক সংবাদকর্মীর নাম। আব্দুল্লাহ আল নোমান নামের ওই সংবাদকর্মীকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে পুলিশ। তবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে খুব ’চৌকশ’ হওয়ায় নোমানের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার।

গত ১১ অক্টোবর মারা যান নগরের আখালিয়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদ। এঘটনায় তার স্ত্রীর দায়েরকৃত হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশেন (পিবিআই)।

তদন্ত সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তদন্তে নোমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাকে অভিযুক্ত করেই এই মামলার অভিযোগপত্র প্রধান করা হবে।

Manual8 Ad Code

তদন্তসংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০ অক্টোবর রাতে নগরের কাষ্টঘর থেকে রায়হান আহমদকে ধরে নিয়ে যাওয়া ও ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতন চালানোর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

তবে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং নির্যাতনকালে উপস্থিত ছিলেন না সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল নোমান। পরে রায়হান হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিস্কৃত উপ পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেই ভ’ইয়ার পালানোর ঘটনায় উঠে আসে নোমানের নাম। আকবর ও নোমান পরষ্পরের আত্মীয়। রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় ১২ অক্টোবর বহিস্কার করা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ আকবরকে। এরপর ১৩ অক্টোবর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

Manual6 Ad Code

আকবরের পালানোর ঘটনায় পুলিশ সদরদপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, নোমানের সহায়তায়ই সিলেট ছেড়ে পালিয়ে যান আকবর। আকবরকে পালাতে সহায়তা করার আগে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ নোমান বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসিটিভির হার্ডডিস্ক গায়েব করে দেন।

Manual5 Ad Code

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, পালিয়ে এসআই আকবর প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ যান। সেখান থেকে নোমান ও স্থানীয় এক দালালের সহায়তায় পালিয়ে ভারতের মেঘালয়ে চলে যান তিনি।

আব্দুল্লাহ আল নোমান স্থানীয় একটি পত্রিকার প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করতেন। আকবরকে পালাতে সহায়তাকারী হিসেবে তার নাম ওঠের আসার পর নোমানকে বহিস্কার করে ওই পত্রিকা।

এদিকে, আকবর পালানোর পর থেকে নোমানকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় পুলিশ। তার পরিবারের সদস্য এবং শশুড়বাড়ির সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত নোমানকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

Manual8 Ad Code

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. নিশরুল আরিফ বলেন, এই মামলার তদন্ত করছে পিবিআই। তদন্তে যাদের সংশ্লিস্টতা পাচ্ছে তাদেরকে গ্রেপ্তারও করছে পিবিআই। তবে আকবরকে পালাতে সহায়াকারী হিসেবে নোমানের নাম আমাদের তদন্তেও উঠে এসেছে। তাই তাকে গ্রেপ্তারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

পুলিশ কমিশনার বলেন, নোমান তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের চাইতেও চৌকুস। আধুনিক প্রযুক্তিতে সে খুব দক্ষ। তাই তার অবস্থান নির্নয় করা যাচ্ছে না। তবে বিকল্প বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

পালিয়ে যাওয়ার পর গত ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে আকবরকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর সিলেটের পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, ভারত পালানোর সময় আকবরকে আটক করা হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে সেখানকার বাসিন্দারা আকবরকে আটক করে সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছেন। আকবরকে ভারতীয় খাসিয়ারা আটক করার একটি ভিডিও সেসময় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এঘটনায় আকবর ছাড়াও আরও তিন পুলিশ সদস্য ও মিথ্যে তথ্য দিয়ে রায়হানকে ধরে আনানো যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

তদন্ত সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্রে আকবরসহ গ্রেপ্তার হওয়া ৪ পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক নোমান ও ওই যুবককে অভিযুক্ত করা হতে পারে।

তবে অভিযোগপত্রে কাদের নাম থাকছে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার মো. খালেদ-উজ-জামান। তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ। শীঘ্রই এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। আমর্ওা নোমানকে ধরতে চেষ্টা করছি।

গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান আহমদ। পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যান তিনি।

ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। রায়হান নগরের স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..