শারীরিক সম্পর্কের মধ্যেই ফাতেমাকে খুন করে ইউনুছ: জৈন্তাপুর সীমান্ত থেকে আসামি আটক

প্রকাশিত: ১:০৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০

শারীরিক সম্পর্কের মধ্যেই ফাতেমাকে খুন করে ইউনুছ: জৈন্তাপুর সীমান্ত থেকে আসামি আটক

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: ফাতেমার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রবাস ফেরত ইউনুছ আলীর। পরে প্রেমিকা ফাতেমা বিয়ের চাপ দেয়ায় তাকে খুন করার পরিকল্পনা করে ইউনুছ। ৪ মাস আগে প্রেমিকা ফাতেমাকে ডেকে এনে শারীরিক সম্পর্কের একপর্যায়ে ফাতেমাকে খুন করে ইউনুছ।

Manual1 Ad Code

সেই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে পাশের নির্মাণাধীন ঘরের ভিটি খুঁড়ে লাশ বালিচাপা দেয় ঘাতক ইউনুছ আলী নিজেই। নির্মাণাধীন বাড়ির মালিককে ঘরের ভিটি কংক্রিটের ঢালাই করার জন্য অর্থ দেয়ারও প্রস্তাব দেয় ঘাতক ইউনুছ আলী। তবে দুই দিন পরে ওই নির্মাণাধীন ঘর থেকে লাশের পচা গন্ধ বেরিয়ে পড়লে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলার তদন্তভার পেয়ে মাত্র ৪৩ দিনের মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ। ঘাতক প্রেমিক ইউনুছ আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুর ভারতীয় সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা থেকে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত ফাতেমা আক্তার আড়াইহাজার থানার গহরদী এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। তিনি মানিকপুর এলাকায় মামা ইলিয়াস মোল্লার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ঘাতক ইউনুছ আলী আড়াইহাজারের বিশনন্দী এলাকার আবদুলের পুত্র।

তিনি জানান, চলতি বছরের ১৫ আগস্ট আড়াইহাজার থানার বিশনন্দী ডেংপাড়া এলাকায় ডালিমের নির্মাণাধীন ঘরের বালুভর্তি ভিটি হতে অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে গোপালদী তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মুক্তার হোসেন। পরে এসআই মুক্তার হোসেন বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটির তদন্তভার পায় পিবিআই। তদন্তকালে পিবিআই জানতে পারে, ঘাতক ইউনুছ আলী অবিবাহিত এবং ৯ বছর মালয়েশিয়ায় চাকরি করে গত ফেব্রুয়ারিতে ছুটিতে দেশে আসে। ইউনুছরা পূর্বে মানিকপুর এলাকায় থাকত।

Manual7 Ad Code

তিনি জানান, নিহত ফাতেমার নানা-নানি বিভিন্ন অজুহাতেই ইউনুছকে তাদের ঘরে থাকতে দিত। একপর্যায়ে ইউনুছকে ফাতেমার সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি বাড়িতে থাকা অবস্থায় ফাতেমার সঙ্গে ইউনুছের প্রেমের সম্পর্ক হয়।
ইতোমধ্যে ইউনুছ আলীর পরিবার আড়াইহাজার থানার বিশনন্দী ডেংপারায় নতুন বাড়ি করে সেখানে চলে যায়।

বিভিন্ন সময়ে ইউনুছ আলী মানিকপুরে অবস্থিত তাদের পুরাতন খালি বাড়িতে আসত এবং উক্ত খালি বাড়িতে ফাতেমার সঙ্গে প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করে একপর্যায়ে ভিকটিমের সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা শুরু করে। তাদের প্রেমের বিষয়টি উভয় পরিবারের লোকসহ প্রতিবেশীরা জেনে যায়। ইউনুছের পরিবার তাদের সম্পর্কের বিরোধিতা করেই ইউনুছের বিয়ের জন্য কনে দেখা শুরু করে।

অপরদিকে ইউনুছ প্রেমিকা ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে মেলামেশার ফলে ফাতেমা গর্ভবতী হওয়ার আশঙ্কা এবং ইউনুছের জন্য কনে দেখার বিষয় জানতে পেরে ইউনুছকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু ইউনুছ ফাতেমাকে বিয়ে করতে রাজি ছিল না।

গত ১০ আগস্ট বিকালে ইউনুছ মোবাইল ফোনে ভিকটিম ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে কথা বলে তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে সন্ধ্যার পর তাদের নতুন বাড়ির পেছনের গাছ-গাছালিবেষ্টিত জায়গায় ভিকটিমকে রেখে বাড়ি আসে। ওই রাত ১০টার দিকে ইউনুছ তার বাড়ি থেকে ফাতেমার কাছে গিয়ে শারীরিক মেলামেশা করে এবং একপর্যায়ে কৌশলে ফাতেমার পেছন দিক থেকে বাহুদিয়ে গলা চেপে ধরে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে।

ফাতেমাকে হত্যা করার পর তার লাশ আসামির নতুন বাড়ির পেছনের পরিত্যক্ত জায়গা থেকে ঘটনাস্থল ডালিমের নির্মাণাধীন ঘরের বালুভর্তি ভিটিতে এনে কোদাল দিয়ে গর্ত করে বালুচাপা দেয়। বালুচাপা দেয়ার পর আসামি ইউনুছ বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে কখন ঘরের ভিটি পাকা করবে।

Manual7 Ad Code

তখন বাড়ির মালিক বলেন- টিনের কাজ শেষে ভিটি পাকা করবেন। এ সময় ইউনুছ বলে- দ্রুত ভিটি পাকা করে ফেলেন, যদি টাকা লাগে আমার কাছ থেকে নেবেন। ডালিম ঘরের কাজ করা অবস্থায় গত ১৫ আগস্ট ভিটি হতে দুর্গন্ধ পান এবং কোদাল দিয়ে বালু সরিয়ে ভিকটিমের অর্ধপচা লাশ পেয়ে এলাকার লোকজনদের খবর দেন। স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ মর্গে প্রেরণ করে এবং অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে তদন্ত শুরু করে।

Manual4 Ad Code

পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার পেয়ে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ মামলার তদন্ত শুরু করে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি ইউনুছকে গত ১০ ডিসেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থানার বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় এক ঘণ্টাব্যাপী এক দু:সাহসিক অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে। আসামিকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে যে কোদাল দিয়ে গর্ত করে ভিকটিমের লাশ বালুচাপা দেয়া হয় সেই কোদাল ইউনুসের দেখানো মতে উপস্থিত সাক্ষীদের মোকাবেলায় ইউনুছের পুরাতন বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়।

পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল সেট, সিম, জাতীয় পরিচয়পত্র, গলার হার, কানের দুল, হাতব্যাগ, ওড়না গোপালদী বাজার গাজীপুরা ব্রিজ থেকে হাড়িদোয়া নদীতে ফেলে দেয় বলে আসামি জানায়। উল্লেখিত স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করা হয় কিন্তু সম্ভব হয়নি। ১০ ডিসেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে ঘাতক ইউনুছ। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..