বিয়ানীবাজারে ‘ভিআইপিদের কাণ্ডে’ সমালোচনার ঝড়!

প্রকাশিত: ১:২২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২০

বিয়ানীবাজারে ‘ভিআইপিদের কাণ্ডে’ সমালোচনার ঝড়!

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সারা বিশ্ব করোনার ২য় ঢেউ পার করছে। বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছ। জরুরী কার্যক্রম সীমিত পরিসরে করলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। মাস্ক না পরলে পথচারী থেকে শুরু করে দিনমজুর সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।

Manual2 Ad Code

কিন্তু শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বিয়ানীবাজারে ঘটে গেল এর ঠিক বিপরীত ঘটনা। পৌরশহরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের ঘটনা সচেতন মহলে নতুন করে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকে উদ্বেগ ও আতংকে রয়েছেন। অথচ এই খেলা অতিথি ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান,বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার সৈয়দ সায়েদুৃল হক সুমন, বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুস শুকুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) সুদীপ্ত রায়, সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জয়াগীরদার, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল বারী, এডভোকেট আব্বাছ উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবাদ আহমদ, বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায়, ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন ও আব্দুল মন্নান, পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাছিব জীবন। গ্যালারিভর্তি দর্শক কিংবা মঞ্চে আমন্ত্রিত অতিথি- কেউই মানেন নি স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব। মাস্কও ছিল না কারও মুখে।

Manual4 Ad Code

স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতা ও রাজনৈতিক নেতাদের কান্ডজ্ঞান নিয়েও কথা তুলেছেন অনেকে। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের নাকের ডগায় সমাজিক ও শারিরিক দুরত্ব বজায় না রেখে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি অনুস্মরণ না করে এতবড় আয়োজন নিয়ে এখন সচেতন মহলে চলছে আলোচনা সমালোচনা। অনেকে এমনও বলছেন, মাস্ক না পরায় যেখানে সাধারণ পথচারী ও চালকদের ১’শ-৩’শ টাকা জরিমানা আদায় করছে প্রশাসন, সেখানে ১৫ হাজারেরও বেশি দর্শক-অতিথির মাস্ক না থাকায় প্রশাসন নীরব কেন?

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষক আরবাব হোসেন তার ফেইসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, বিয়ানীবাজারের ভ্রাম্যমান আদালত ও সাংবাদিক কোথায়। এরকম জনসমাগমের পরে ভ্রাম্যমান আদালতের মাক্স না পরার জন্য বিয়ানীবাজারের সাধারণ মানুষ কে শাস্তি দেওয়া আর খাশা বারোপালের দীঘিতে থেকে এক গ্লাস পানি বিশুদ্ধকরণ ঔষধ দিয়ে পুরো দীঘি বিশুদ্ধ করণের দাবি করার সমান। মাঝে মাঝে বিয়ানীবাজারের কোন কোন রাস্তায় মাক্স বিহীন মানুষকে দাড় করিয়ে জরিমানা করেন যা আইন সম্মত । আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি এই জনসমাগমের পর আর ভ্রাম্যমান আদালতের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আর এই করনাকালীন মহামারীর সময়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ যারা সরকারি চাকুরী করেনা, চুরি ডাকাতি করেনা, চাঁদাবাজি করেনা তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য কোননা কোন ভাবে তারা নিজেদের পেশার কাজ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তাদেরকে নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লিখতে পারেন। কিন্তু এরকম জনসমাগম লিখতে পারেন না। পারবেন ও না কারণ প্রকৃত সাংবাদিক হলে পারতেন।

খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতনের সাবেক শিক্ষক মোহাম্মদ সামস উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে লিখেছেন, এই সেই মাঠ। দুরন্ত শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের বিশেষ সময় ঐ মাঠে ই দৌড়াদৌড়ি করে কেটেছে। পায়ের শহবব হারিয়েছিলাম ঐ মাঠেই। প্রিয় পিএইচজি মাঠ। এই মাঠের খেলায় হতো হৃদয় স্পন্দিত। আর এই মাঠে ই হলো আজ মৃত্যুখেলা। হৃদয় আজ শংকিত। হে আল্লাহ প্রিয় বিয়ানীবাজারকে ও প্রিয় মানুষগুলোকে রক্ষা করুন।

সমাজসেবী শমসের আলম ফেসবুকে লিখেছেন, বিবেক যখন বন্দী হয়ে যায় বাকী দেহটা তখন সমাজের জন্য বিড়ম্বনা। সরকারের কড়া নির্দেশ করোনা কালিন জনসচেতনতা বাড়াতে, প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে। সরকারি এমন ঘোষণাকে লঙ্ঘন করে আজ পিএইচজি হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল হাজার হাজার দর্শকের সমাগম। সম্পন্ন হলো প্রীতিম্যাচ ফুটবল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে,দায়িত্বশীল নেতাদের মুখে মাস্ক নেই, জনসচেতনতার ধারক ব্যারিষ্টার সুমন সাহেবও ষ্টেইজে, তিনি তাঁর টিম নিয়ে বিয়ানীবাজার এসেছেন প্রীতি ম্যাচ খেলতে। আশ্চর্য হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। উনি কিভাবে এই করোনাকালে এমন একটা আত্মঘাতী পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত হতে পারলেন? অথচ মাত্র দু’দিন হয় বিয়ানীবাজারে মোবাইল কোট পরিচালনা করা হল। জরিমানাও করা হল বলে জানা গেল । সরকারী নির্দেশ “মাস্ক নেই, সার্ভিস নেই” অথচ এত বড় জনসভা হয়ে গেল প্রশাসনের কারও কোন খবর নেই। এই যদি হয় সমাজের জনপ্রতিনিধি ও বিবেকবানদের মনোজগত ,তাদের জাতীয় কর্তব্য ও চিন্তা চেতনার পরিসর! একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে যদি এলিটদের জ্ঞান গরিমা ও বিবেকের মানদন্ড তাই হয়, তবে কোন অলৌকিক শক্তির বলে এই দায়িত্বশীলরা সমাজের কান্ডজ্ঞানহীন মানুষগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আশা করেন। আমার বোধে আসে না, কেমন করে তাঁরা এমন নড়বড়ে আদর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন বলে জনসম্মুখে লম্বা লম্বা নছিহত ছুঁড়েন। আর যাই হোক সরকারী আদেশ অমান্য করে খেলার নামে এতবড় একটা জনসমাগমের উন্মাদনা ঘটানো আর সরকারী নিয়মনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা একই কথা। ক্ষমতা থাকলেই যে সব কিছু করা যাবে, তা তো নয় বরং সমাজ, রাষ্ট্র ও বহিবিশ্বের বাঙ্গালীপাড়ার মানুষগুলো কি ভাবছে এই সামান্যটুকুও কি ভাবার দরকার নেই ?

আব্দুস সামাদ লিখেছেন, আমি খেলাধুলার বিপক্ষে নয়, কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে। আজকের বিয়ানীবাজার পি এইচ জি হাইস্কুল মাঠের চিত্র। প্রশাসনের সামান্য লজ্জাবোধ থাকলে রাস্তায় মাক্সের জন্য সাধারন পথচারী বা খেটে খাওয়া মানুষকে ভ্রামমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করতো না, আজ কোথায় ছিলেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোসফিকীন নূর। কয়েক দিন আগে দেখেছি তিনি রাস্তায় বৃদ্ধ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষকে দাড় করিয়ে কান দরিয়ে ফটো তুলে জরিমানা আদায় করতেছেন, ছি লজ্জা লাগে, মানবতা আজ কোথায়? আল্লাহর কাছে সব কিছুর জবাব একদিন দিতে হবে, অপেক্ষায় থাকো…!

আজিজ ইবনে গণি তার ফেইসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, এই কিছুদিন আগে বিয়ানীবাজারের রাস্তায় যারা মাস্ক ব্যবহার করেনি, কর্তৃপক্ষ তাদের নগদ জরিমানা করে। কথা বল্লেই, আরো জরিমানা। কিন্তু এই মাঠে কয়জনের মুখে মাস্ক আছে? এখানে জরিমানা করবে কে?

এছাড়াও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ফেইসবুকের টাইমলাইনে রয়েছে নেতিবাচক উক্তিতে সরব।

Manual2 Ad Code

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একজন দায়িত্বশীল জানান, সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় ছিল না এই ম্যাচে আসা দর্শকদের তা তিনি ছবিতে দেখেছেন। তাঁর মতে স্বাস্থ্য বিধি না মেনে এ রকম আয়োজন এক সময় আনন্দের চেয়ে বেশি বিষাদে পরিণত হতে পারে।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..