মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে এমপিওতে ঘুষ বাণিজ্য

প্রকাশিত: ২:০২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২০

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে এমপিওতে ঘুষ বাণিজ্য

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : শিক্ষক কর্মচারিদের এমপিওভুক্তিতে (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) ৭টি স্তরে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পদে পদে ঘুষ বাণিজ্য সব দপ্তরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ের নামে ঘুষ, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ,আঞ্চলিক উপ পরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক, মাদ্রাসা সুপার,অধ্যক্ষ, প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতি , সদস্যদের ঘুষ বাণিজ্য একচ্ছত্র প্রভাব নিয়ে চলছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সরকারি কর্ম দিবসকালে নিত্যদিন শত শত শিক্ষকদের ভিড়ের চিত্র। সেইসব শিক্ষকদের অঝোরে চোখের পানি ঝড়তে দেখা যায়। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে কথা বলতে গেলেও ঘুষ লাগে। শিক্ষকদের অভিযোগ, ঘুষ না দিলে ডিজির রুমে পর্যন্ত ঢুকতে দেয়া হয় না। সিন্ডিকেট প্রধান মাদ্রাসা শিক্ষা অধিপ্তরের সহকারি পরিচালক (অর্থ) আব্দুল মুকিত। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে সেখানে কোনো শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তা আমলে নিতে হলেও চাহিদা মাফিক টাকা খরচ করতে হয়।

Manual5 Ad Code

সেসব অভিযোগ তদন্ত করাতে যেমন টাকা লাগে, আবার তদন্ত টিমের কার্যক্রম থামিয়ে দিতেও লাগে ঘুষ। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আব্দুল মুকিত ইনডেক্স কোডের জন্য ঘুষ হিসাবে টাকা দাবি করেন। ঘুষের প্রচলন রয়েছে। শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রুটিন পরিদর্শনে গেলেও তাদের খুশি না করে উপায় থাকে না। শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তিতে ৭টি ধাপে লাখ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। এ ছাড়াও নাম, বয়সসহ নানা বিষয় সংশোধন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ফাইল পাঠাতে ঘুষ দিতে হয় নির্দিষ্ট অংকের। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, আঞ্চলিক অফিসের নির্দিষ্ট অংকের ঘুষ দিতে হয় এমপিওভুক্তি, পদোন্নতি, টাইম স্কেল করতে । ঘুষ লেনদেন বাণিজ্য সফল করতে গড়ে উঠেছে ৮টি সিন্ডিকেট। জানা যায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গার অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ মৃধা যিনি ফরিদপুর অঞ্চলের সিন্ডিকেট প্রধান । আবু ইউসুফ মৃধা সকল জায়গা থেকেই ঘুষ নেন । শুধুমাত্র ভাঙ্গার কয়েকটি মাদ্রাসা থেকে ঘুষ নিয়েছেন ১ কোটি টাকা । ১৮ জন শিক্ষক মন্ত্রী বরাবর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ৫০টি অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে জমা পড়েছে, তদন্তও চলছে ।

এই একজন সিন্ডিকেট প্রধানের মত সারাদেশে বাকী সিন্ডিকেট প্রধানদের কথাতেই এমপিও হয়। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির,ঘুষের অসংখ্য অভিযোগ জমা আছে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে। যদিও অভিযোগের সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক- কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট সাইফুর রশিদ সবুজ সম্প্রতি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সচিব, মহাপরিচালক মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ঢাকা অঞ্চলকে একটি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।বাদী সুপারিডেন্টেন ওহাহিদুজ্জামান মিয়া এবং তার বোন তাসলিমা আক্তার , সহকারি মৌলভী উভয় পিতা নুর মোহাম্মদ মাওলানা এবং সুলতান মিয়া, সহকারি সুপার আদমপুর এ,কে দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা ভাঙ্গা, ফরিদপুর । নোটিশে বলা হয়, সুপারসহ ১৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারির নিকট থেকে এমপিওভূক্ত করার জন্য বর্তমান কমিটিসহ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ জমশেদ, ডিডি ঢাকা অঞ্চল, সহকারি পরিচালক আব্দুল মুকিত সাড়ে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নেন। লেনদেন করা হয় অধ্যক্ষ ইউসুফ মৃধার মাধ্যমে। আব্দুল মুকিতের বিকাশ নাম্বারে কিছু লেনদেন হয়।

Manual7 Ad Code

এব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুল মুকিত বলেন, ভাঙ্গার কয়েকটি মাদ্রাসার ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে । মাওলানা ইউসুফ মৃধার বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন, আগে ঘন ঘন অফিসে আসতেন । এখন কম আসেন । বিকাশে ঘুষ লেনদেনের কথা মনে নেই। একমাসে ১২শ’ ইনডেক্স দিয়েছি। ইনডেক্স করতে কোন ঘুষ নেই না। নিলে মাসে ১০ কোটি টাকা নিতে পারতাম। ফাইল আটকে রাখেন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিরব থাকেন। দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) জানিয়েছেন, এমপিও কোড পাওয়া শিক্ষকদের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে কোনো কোনো উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস এবং আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ দাবি করছেন, এমর্মে কমিশনে অভিযোগ এসেছে । এছাড়াও দুদক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ঘুষ নেওয়া যেমন ফৌজদারি অপরাধ, তেমনি ঘুষ দেওয়াও একই জাতীয় সমান অপরাধ। এ অপরাধে যারাই সম্পৃক্ত হবেন তাদেরকে আইনের মুখোমুখি করা হবে।

Manual7 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..