সিসিক কাউন্সিলর সেলিমের ভয়ে চুপ উপশহর

প্রকাশিত: ১:২১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২০

সিসিক কাউন্সিলর সেলিমের ভয়ে চুপ উপশহর

Manual7 Ad Code

সাঈদ চৌধুরী টিপু :: সিলেটের অভিজাত এলাকা হিসেবেই উপশহরের পরিচিতি। তবে এর কোলেও আছে খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষের বাস। উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্ত সকলের মাথার উপর অভিভাবক হয়ে আছেন ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের বিপদে ভরসা, দুঃসময়ে সহমর্মী-সমব্যথী হওয়ার কথা তার। তবে তিনি তা হতে পারেননি।

Manual1 Ad Code

তিনি বরং আতঙ্কই হয়েছেন তাদের জন্য। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য ‘দম আটকে দেওয়া’ ভয়ের এক পরিবেশ তৈরি করেছে তার বাহিনী। ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান-সবকিছুতেই সালেহ সেলিমের খবরদারি। যেমনটি প্রমাণ মিললো শনিবার। উমর শাহ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সরকারি কাজ আটকে দিয়েছেন। কানাঘুঁষা রয়েছে স্কুলের মাঠের প্রতি তার বিশেষ চোখ পড়েছে। ‘গিলে খাওয়ার’ স্বপ্নে তাই কাজ আটকে দিয়েছেন।

অভিজাত এলাকার তকমা থাকায় শাহজালাল উপশহরের জমির কদর একটু আলাদাই। বাড়তি দাম দিয়ে অনেকেই এখানে জমি কেনেন। স্কুলের ‘অপ্রয়োজনীয়’ মাঠটি দখলে নিতে পারলে ভালোই কামানো যাবে। উপশহরের জমিগুলো আসলেই যেনো সালেহ সেলিমের কাছে ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো’। এখানে জমি-ঘর কেনাবেচা হলে দুদিক থেকেই লাভ হয় তার। অভিযোগ রয়েছে, তাকে বখরা না দিলে বাসা বা জমি কেনা যায় না উপশহরে। বখরা শুধু ক্রেতাকেই দিতে হয় না বিক্রেতাকে দিতে হয়। বিক্রেতা তো একবার ‘চাঁদা’ দিয়েই খালাস। ক্রেতা পড়ে যান চাঁদার চক্রে। ধাপে ধাপে চাঁদা দিতে হয় তাকে। বাড়ি তৈরির অনুমতি নিতে দিতে হয় চাঁদা, ভবন তোলার সময় চাঁদা দিতে হয়। ভবন উপরের দিকে তুলতে গেলেও চাঁদা দিতে হয়। ভাড়াটে রাখতে গেলেও ভাগ দিতে হয় তাকে।

উপশহরে গড়ে উঠা ঘরবাড়ির মালিকদের অনেকেই থাকেন প্রবাসে। এটাও সুযোগ হয়ে ধরা দেয় সালেহ সেলিমের জন্য। নিজের মানুষকে ভাড়াটে হিসেবে ঢুকিয়ে চাপে ফেলে ভাড়ার টাকা নিজের পকেটে পুরে নেন তিন বাসা নিয়ে আয়ের আরেকটি কৌশল রয়েছে সালেহ সেলিমের। উপশহরে অনেকেই ফার্নিচারসহ বাসা ভাড়া দিয়ে থাকেন। বিদেশ থেকে আসা কেউ বা কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য কেউ এক দুমাসের জন্য সে বাসাগুলো ভাড়া নেন। উপশহরের ‘হাওয়া-বাতাস’ খুব একটা তারা বুঝেন না। হঠাৎই সালেহ সেলিমের বাহিনী কলিং বেল টেপে সে বাসায়। ভয় দেখায়, হুমকি দেয় চাঁদার জন্য। সালেহ আহমদ সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই।

চাঁদাবাজি, নারী ব্যবসা, মাদক ব্যবসার সাথে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। অভিযোগ তুলেছেন রাজনীতিতে তারই আদর্শে চলার পথের সঙ্গীরা। তবে বেশির ভাগই মুখ খুলতে পারেন না ভয়ে। সালেহ সেলিম শুধু বিত্তশালীদের জন্য আতঙ্ক নন, আতঙ্ক স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্যও। মাছ বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তার বাহিনী। তার প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠা ছিনতাইকারীরা কেড়ে নেয় দিনমজুরের সারা দিনের আয়। তীর খেলার ফাঁদ পেতে সর্বস্বান্ত করেন স্বল্পবিত্তের মানুষদের। বিত্তশালীদের হয়তো বিচার দেওয়ার জায়গা থাকে। রাজনীতিবিদরা সাহসী হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু স্বল্প আয়ের মানুষদের দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর করার কিছু থাকে না। আর নিজের অজান্তেই মনের গভীর থেকে বেরিয়ে আসে অভিশাপ। সে অভিশাপ সালেহ সেলিমের জন্য বয়ে নিয়ে আসেন তার সেনানীরা। এদের মধ্যে এইচ আর সুমন, নিয়াজ বক্স আছেন কালেকশনের দায়িত্বে, মাদক ব্যবসা দেখভাল করেন চঞ্চল। মিন্নত আলী তীর খেলার এজেন্ট, সিএনজি শাহীন, সাব এজেন্ট আরজু।

সালেহ আহমদ সেলিম পেশায় আইনজীবী। তার এ পেশাটিকে তিনি তার এলাকাবাসীর উপকারে প্রয়োগ ঘটাতে পারতেন। তবে তিনি এ পেশাটিকে শুধু নিজের আখের ঘুচানোর কাজেই ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ। প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে আইনজীবী পরিচয়টা তিনি একটা অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করছেন। আইনের ফাঁক খুঁজে সে ফাঁকে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অনেক কিছুই তিনি হাসিল করেছেন। আর মামলার খেলা খেলে চাপে ফেলেন প্রতিপক্ষকে। যারা তার কথামতো চলেন না তারাই হন সে মামলার আসামি। আর বাদি হন তার কাছের মানুষরা। তবে দলছুট হলে আবার সে কাছের মানুষটি হন অন্য কোনো মামলার আসামি। জানা গেছে, তার সাথে সম্পর্ক আছে রয়েছে বা ছিলো এমন প্রায় সকলেই কোনো না কোনো মামলার হয় বাদি নয় আসামি।

Manual6 Ad Code

সালেহ সেলিমের হাত ক্রমেই যেনো আরও লম্বা হচ্ছে। ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের পর এবার তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন সরকারকে। যদিও সরকার দলীয় নেতা হিসেবেই তার পরিচয়। অভিযোগ উঠেছে তিনি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছেন। সে লক্ষ্যেই নাকি শনিবার কাজ আটকে দিয়েছেন তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাচীর নির্মাণের। সরকারি প্রক্রিয়ায় চলমান কাজটি তিনি আটকে দিয়েছেন নিজের ‘প্রক্রিয়া’য়। দুদিন কাজ চলার পর শনিবার তার দলবল এসে কাজ আটকে দেয়। জানায়, বুঝাপড়ার বাকি আছে।

Manual6 Ad Code

বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উমর শাহ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা বেগম একাত্তরের কথাকে বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের অধীনে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিলো। শনিবার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। রোকসানা বেগম জানান, তিনি বিষয়টি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে জানিয়েছেন।

ঠিকাদারের প্রতিনিধি সোনা মিয়া একাত্তরের কথাকে বলেন, দুদিন ধরে প্রাচীর নির্মাণ কাজ করছিলেন তারা। শনিবার স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজন এসে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করতে বলে। ম্যানেজিং কমিটির সাথে না কি ঝামেলা আছে।

Manual8 Ad Code

কথা হয় ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিমের সাথে। স্কুলে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ বন্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজ আমি বন্ধ করিনি। এলাকাবাসী মিলে কাজ বন্ধ করেছে। তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বৈধতা নেই। তাছাড়া স্কুলের জায়গা নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। এ নিয়ে ২ ডিসেম্বর বৈঠক হবে। তখন কাজ চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তার বিরুদ্ধে উঠা বিভিন্ন অভিযোগ এক বাক্যেই উড়িয়ে দেন সালেহ সেলিম। এইচ আর সুমন, নিয়াজ বক্স, মিন্নত আলী, চঞ্চল এদের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এরা সবাই যুবলীগের রাজনীতি করে আমি করি আওয়ামী লীগ করি তাদের সাথে আমার সম্পর্ক হওয়ার কথা নয়। সালেহ সেলিমের দাবি উপশহরের কোথাও তীর খেলা হয় না। তের রতনে তীর খেলা, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে আর দায় পড়ে ২২ নং ওয়ার্ডের। তিনি বলেন, যেহেতু কোনো অপকর্মের সাথে আমি সম্পৃক্ত নই। তাই কারো অপকর্মের দায়ও আমি নেবো না।

একটি সূত্রে জানা গেছে, সালেহ আহমদ সেলিম সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদকের পদ পেতে যাচ্ছেন। এ নিয়েও ভয়ে আছেন স্থানীয়রা। তাদের ভয় যুবলীগ থেকে আওয়ামী লীগের পদে আসলে তাকে আর রোখা যাবে না। তখন শুধু মুখ বন্ধ রাখলেই হবে না, ঠোঁটে সেলাই দিতে হবে। প্রতিবেশী টিলাগড়ের ভয়ের রাজ্যের খবর সবার জানা হলেও উপশহরের বাসিন্দা নিজের মাঝে ভয়কে আটকে রাখেন বাইরে পাঁচ কান হতে দেন না। তাদের ভয়, ভয়ের খবর জানাজানি হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। সূত্র: একাত্তরের কথা

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2020
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..