মাহমুদার ২৫ বছরের স্বপ্ন ব্যাংক থেকে ‘উধাও’

প্রকাশিত: ৭:২৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২০

মাহমুদার ২৫ বছরের স্বপ্ন ব্যাংক থেকে ‘উধাও’

Manual2 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : এইচ এম সৌরভ: বিশ পঞ্চাশ কিংবা একশো টাকার নোটে স্বপ্ন বুনে ছিলেন মাহমুদা নাছরিন। আর স্বপ্নটা নিরাপদ রাখতে জমা রেখে ছিলেন আশুলিয়ার গনকবাড়ী শাখার প্রাইম ব্যাংকে। কিন্তু সেই ব্যাংক থেকে স্বপ্ন এখন উধাও! অল্প অল্প করে জমানো সঞ্চয়ের টাকায় বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন এই নারী। জামানো কষ্টের টাকায় ভবিষ্যতে শান্তিতে থাকার আশা ছিল তার। কিন্তু ২৫ বছরের জমানো এই টাকা আকাশ নামে কেউ একজন চেক জাল করে তুলে নিয়ে গেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বেসরকারি প্রাইম ব্যাংকের আশুলিয়ার গণকবাড়ি শাখায়।

Manual1 Ad Code

টাকার পরিমাণ দুই লাখ। তবে মাহমুদার কাছে এর অংক বিশাল। ১০ বছর পোশাক কারখানায় চাকরি জীবনের যা কিছু উদ্বৃত্ত, সবজি বিক্রি করে পাওয়া টাকা, আর শখ পূরণের জন্য স্বামীর দেয়া টাকা খরচ না করে রেখেছিলেন ব্যাংকটিতে।

গত মাসে চেক বই খুঁজে না পেয়ে ব্যাংকে যান মাহমুদা। গিয়ে দেখেন তার হিসাব থেকে ২ লাখ টাকা ‘আকাশ’ নামে এক ব্যক্তি জাল স্বাক্ষর করে তুলে নিয়ে গেছেন। তবে তিনি তাকে চেনেন না, কোনও চেকও দেননি।

এই ঘটনায় মাহমুদা ২৮ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় চেক জালিয়াতির একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, গত ১১ অক্টোবর বাসায় চেক বই খুঁজে না পেয়ে দ্রুত ব্যাংকে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তার ২ লাখ টাকা আকাশ নামের কেউ চেক জাল করে তুলে নিয়ে গেছে।

মাহমুদা বলেন, গ্রাহক নিজে উপস্থিত না থাকলে ৩০ হাজার টাকা তুললেও ব্যাংক থেকে ফোন করা হয়। আর দুই লাখ টাকা যে তুলে আনতে গিয়েছেন, তার জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু প্রাইম ব্যাংক তার কিছুই করেনি।

তিনি জানান, ব্যাংকের হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের কাছে এসব নিয়ে জবাব জানতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে কিছু না বলে ‘কটূকথা’ বলা হয়েছে। টাকা হারানোর শোকের পর উল্টো অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

Manual5 Ad Code

এই নারী আরও বলেন, সংসারে অভাবের কারণে ১৪ বছর বয়সেই মা-বাপ বিয়ে দেয়। ১৯৯৬ সালে দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসি। স্বামী রেজাউল করিমও আমার সঙ্গে আসে। আমি চাকরি নেই ইপিজেডের গার্মেন্টসে। আর স্বামী ছোট্ট একটা কসমেটিকসের দোকান দেয়। তখন থেকে আমি অনেক কষ্ট করছি। শ্রীপুর খান কলোনি থাইক্কা ৪০-৪৫ মিনিটের পথ হেটে গার্মেন্টসে গেছি। গাড়ি ভাড়ার ৫-৬ টাকা বাঁচাইছি। অফিসে দুপুরের টিফিন না খাইয়া সেই টাকাও রাখছি। অফিসের ইনক্রিমেন্ট আর ওভারটাইমের কিছু টাকাও জমাইছি। স্বামী শখ কইরা কিছু কিনতে দিলে সেটা কিনি নাই।

তিনি বলেন, মাসে ২০০-৫০০ টাকা স্বামীরে না জানাইয়া গোপনে পোস্ট অফিসে রাখছি। চাকরি করার সময়ই দুই মেয়ে ও এক ছেলের মা হই। ছেলে-মেয়ের দেখাশুনা করে চাকরি করা কষ্ট হয় বলে ১০ বছর পর চাকরি ছেড়ে দেই।

Manual1 Ad Code

‘২০১২ সালে পোস্ট অফিস থাইক্কা জমানো ৫০ হাজার টাকা তুইলা দ্যাশে মায়ের কাছে পাঠাই। টাঙ্গাইলেই মা কিছু জমি বর্গা নিয়া চাষ করতো। ছাগল কিন্যা দিছিলাম সেগুলা মা পালতো। চাকরি ছাড়ার পর কখনও বইসা থাকি নাই। বাড়ির পাশে মাইনসের পতিত জমিতে কুবাইয়া তরকারি লাগাইতাম। আবার সেই তরকারি বেঁচছি, দর্জির কাম করছি। হেই টাকা মাসে মাসে নিজের কাছে জমায় রাখছি। তিন-চার বছর আগে একজনের পরামর্শে প্রাইম ব্যাংকে একাউন্ট খুলছি। তখন কিছু টাকা রাখছিলাম। বছরে ৮০ হাজার, ৫০ হাজার, ২০ হাজার, ১০ হাজার ট্যাকাও রাখছি। এছাড়া যখন কিছু ট্যাকা জমত তখনই ব্যাংকে রাখতাম। এ্যামনে কইরা সাড়ে তিন লাখ টাকা আমার একাউন্টে জমা অয়।’

Manual6 Ad Code

তিনি আরও বলেন, শাহিন ও আনোয়ার নামে দুই অফিসারের কাছে জানতে চাই, এতগুলা টাকা দিলেন আমাকে ফোনও দিলেন না। ভোটার আইডি কার্ডও রাখেন নাই। এসব কথা বললে, আমারে যাচ্ছেতাই বলে দুই অফিসার। আমারে পাগল সাব্যস্ত করে। যে নামে টাকা তুইলা নিয়া গেছে আমার সে চেকটাও দেখাতে চায় নাই। তারা বলেন, আমি চেক দিছি তাই তারা টাকা দিয়া দিছেন। এখানে তাদের কিছুই করার নাই। পরে ম্যানেজারের কাছে গিয়া ওই চেকের ছবি তুইলা আনি।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল যান মাহমুদা। সেখানে পানিতে ডুবে মারা যায় ১১ আর ৯ বছরের দুই সন্তান। আর সেই অজুহাতে মাথা ঠিক নাই বলে ব্যাংক থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় এই নারীকে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বলিভদ্র শাখার প্রাইম ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ব্রাঞ্চ শাহতাব রিজভী ফোনে কথা বলতে রাজি হননি।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি সেনসিটিভ। তাই অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ব্যস্ততার কারণে তদন্তে যেতে পারেননি বলে জানান এই অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক জসিম।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2020
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..