সিলেট ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:০১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মাদক ও জুয়ার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে সিলেট নগরীর উপকন্ঠ টিলাগড়, বালুচর ও আশপাশের এলাকা। মদ, জুয়া ফেনসিডিল, আফিমসহ সব ধরণের মাদক হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় সেখানে। মাদক সরবরাহের পেছনে জড়িত দু’টি পরিবার। কুখ্যাত মজিদ ডাকাত ও হেরোইন কবিরের পরিবার। আর মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করার পেছনের শেল্টারদাতা হিসেবে আলোচনায় আসছে বহিস্কৃত জেলা ছাত্রলীগ নেতা হিরণ মাহমুদ নিপুর নাম।
মরণ নেশা মাদকের ছোবল ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে ওই এলাকার যুব সমাজকে। আর মাদকের অর্থসংস্থানে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। মাদকসেবনকে ঘিরে এসব এলাকায় বখে যাওয়া যুব সমাজ জড়াচ্ছে ছিনতাই, রাহাজানি, খুনাখুনি, জায়গা দখলসহ নানা অপরাধে। এসব কিছুর পেছনে রয়েছে মাদকের কালো থাবা।
স্থানীয়রা চোখ বন্ধ করে এসব অপরাধ সহ্য করে যাচ্ছেন নিরবে। জায়গা দখল হলেও প্রাণ সংহারের ভয়ে অভিযোগ দেওয়া থেকেও বিরত থাকছেন। এলাকাবাসী অনেকে বলছেন, নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা ‘বুবা’ দর্শক’। ‘আমরা অনেক কিছু দেখেও দেখি না। কারণ, কোনো প্রতিকার হয় না। উলটো বিপদ আসে।’
অন্যদিকে সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এমনকি নিজ বাড়িতে পর্যন্ত শিশু-কিশোর, তরুণী, গৃহবধূ, সন্তানের জননী অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অহরহ ঘটছে ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনাও।
সম্প্রতি সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের পেছনেও অপরাধিদের মাদক সেবনে জড়িত থাকার আলামত পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান হত্যার ঘটনায় এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে।
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের বলেন, মাদক নির্মুলে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে মাঠ পর্যায়ে পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ কমিশনার। সেপ্টেম্বরে এমসি কলেজের গণধর্ষণের ঘটনা এবং অক্টোবরে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় কর্মব্যস্ত ছিল এসএমপি। এখন নতুন উদ্যমে মাদক নির্মুল ও বিভিন্ন অপরাধ দমনে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শেল্টারদাতা যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহপরান (র.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, নগরীর বালুচর এলাকায় জায়গাজমি নিয়ে ছোটখাটো কিছু অভিযোগ ছিল। সেগুলো মামলা পর্যন্ত গড়ানোর ঘটনা নয় বা গড়ায়নি। তবে মাদক জিরো টলারেন্সে নীতি অনুসরণ করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বালুচর নির্জন এলাকাগুলোতে রাতের আধারে বসে মাদক সেবীদের আড্ডা। যার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের ত্রাতা হিসেবে হিরণ মাহমুদ নিপুর নাম উঠে এসেছে। এছাড়া ওই সব এলাকায় একাধিক প্রবাসীদের জায়গা দখলের নেপথ্যে রয়েছে বহিস্কৃত ওই ছাত্রলীগ নেতার হাত। জায়গা কেনা বেঁচায়ও চাঁদার ভাগ বসান হিরণ মাহমুদ নিপুর ক্যাডাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী নারী জানান, তার জায়গা দখল করে রেখেছে নিপু গ্রুপের লোকজন। তাদের ভয়ে তিনি অভিযোগও করেননি।
এদিকে, মাদক সেবনের প্রতিবাদ করায় রোববার (৮ নভেম্বর) দুপুরে বালুচরের নয়াবাজার এলাকায় লাহিন চৌধুরী নামে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করে বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা নিপুর ক্যাডাররা। লাহিন সিলেট মহানগরের শাহপরাণ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। গুরুতর আহত লাহিন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একইভাবে মাদকের টাকা নিতে বন্ধুকে হত্যা করে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে বালুচরে।
এছাড়া ৮ সেপ্টেম্বর বালুচর থেকে একটি তাজা কার্তুজসহ একনলা একটি বন্দুক উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট বালুচর এলাকা থেকে নাঈম আহমদ (১৫) নামে এক কিশোরের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খুন হওয়া কিশোর নাঈম আহমদের বাড়ি বালুচর এলাকায়। এ ঘটনায় রূপম ও পারভেজ নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। মাদক সংক্রান্ত ইস্যুতে ওই যুবক খুনের ঘটনা ঘটেছিল, এমনটি প্রমাণ পায় পুলিশ। এরআগে শহরতলীর বালুচরে আল ইসলাহ-১২৪নং বাসায় প্রবাসীর স্ত্রীকে গলায় ছুরি ধরে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা ঘর তছনছ করে ১২/১৩ ভরি সোনা, ২ট মোবাইল ফোনসহ কিছু নগদ টাকা নিয়ে যায়। এরআগে ছিনতাইয়ের অভয়ারণ্য বালুচরে ছিনতাইর ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। সন্ধ্যার পর ওই সড়কে চলাচল হয়ে পড়ে বিপজ্জনক। নগরীর বালুচর এলাকা থেকে দিনে দুপুরে ব্যবসায়ীর ৬ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার নজির রয়েছে। এ ব্যাপারে শাহপরান থানায় মামলাও হয়।সূত্র-দৈনিক শ্যামল সিলেট
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd