সিলেট ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:১২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেট সদর উপজেলার টুলটিকর ইউনিয়নের মিরাপাড়া এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মামলাবাজ, ভূমিখেকো রুহুল আমিন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। জায়গা দখল করে চাঁদা দাবি করা, চাঁদা না দিলে মা, বোন, স্ত্রী দিয়ে থানায় মামলা করা তাঁর নেশায় পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার মূল পেশা।
কখনও আওয়ামী লীগ নেতা, কখনও বিএনপি নেতা আবার কখনও নিজেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দিয়ে মানুষের উপর চালিয়ে যাচ্ছেন নির্যাতনের ষ্টিম রোলার। বারবার খোলস পাল্টানোর কারনে ও মামলার ভয়ে সিলেটে এই নব্য সাহেদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাননি।
মামলাবাজ ও ভূমিখেকো রুহুল আমিন সিলেট সিটি কর্র্পোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের মিরাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল গফুর উরফে উনাই মিয়ার পুত্র।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন নগরীর কাজিটুলার বাসিন্দা শাহ নূর আহমদ খান। তিনি জানান, জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে সিসিকের ২৪নং ওয়ার্ডের পাশে সদর উপজেলার ৫নং টুলটিকর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মিরাপাড়া গ্রামে ৭ শতক জায়গা ক্রয় করেন। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তিনি ওই জায়গায় বাউন্ডারী দিয়ে টিনসেডের ঘর বানিয়ে ভোগ করে আসছিলেন।
শুক্রবার (৬ নভেম্বর) শাহ নূর আহমদ খান তার ক্রয়কৃত জায়গায় কলোনী বানাতে গেলে বাঁধা দেন ভূমিখেকো রুহুল আমিন। কলোনী বানাতে গেলে তাকে ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে। অন্যথায়- তাকে মিথ্যা মামলা দেয়ার ভয় দেখান। শাহ নূর আহমদ খান তখন শাহপরাণ থানা পুলিশকে ফোন দেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী শাহপরাণ থানার এএসআই মঞ্জুর হোসেন জানান, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের খবর পেয়ে আমি ফোর্স নিয়ে মিরাপাড়া এলাকায় যাই। গিয়ে উভয় পক্ষকে জায়গার দলিল দেখানোর জন্য বলি। তখন জায়গার শাহ নূর আহমদ খান দলিল দেখান কিন্তু রুহুল আমিন কোন দলিল দেখাতে পারেননি। পরে উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে আজ শনিবার রাত ৯টায় শাহপরাণ থানায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে- এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান শাহ নূর আহমদ খান।
মিরাপাড়ার বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব জামাল মোহাম্মদ নূর উরফে ফেছন মিয়া জানান, রুহুল আমিন তার মা ছুরেতুন নেছা দিয়ে আমার কলেজ পড়–য়া ছেলের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১৪/১৪, তাং- ০১.০১.২০১৫। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমার সম্পত্তির উপর তার কূনজর পড়েছে। আমার জমি দখল করার জন্যই রুহুল আমিন বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতে মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানি প্রতিবেদন দিয়ে তাকে মামলাবাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছে শাহপরাণ থানা পুলিশ। বিগত ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইসমাইল পিপিএম এ প্রতিবেদন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বরাবরে দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, রুহুল আমিন একজন চিহ্নিত মামলাবাজ। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানা ও আদালতে প্রায় ১৫/২০টি মামলা বিচারাধীন আছে। রুহুল আমিন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ থানা পুলিশের কোন সালিশ বিচার মানেন না। তিনি চাঁদা দাবি করে তা আদায় করতে না পারলে অন্যায়ভাবে তার স্ত্রী, মা, বোন দিয়ে আদালতে বা থানায় মামলা দায়ের করেন। উক্ত প্রতিবেদনের স্মারক নং- কে.অপ. (এসএমপি) ভি/৯৪৭ তারিখ- ২৪/০২/২০১৭ খ্রি এবং উপ-পুলিশ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ), এসএমপি সিলেট এর কার্যালয় স্মারক নং- ১৩৪০, তাং- ০১.০৩.২০১৭ খ্রি:।
টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী হোসেন বলেন, শাহ নূর আহমদ খানের সাথে রুহুল আমিনের বিরোধের বিষয়টি আমি জেনেছি। এছাড়াও রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে মামলা দিয়ে হয়রানির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যা আমি অবগত আছি। যেকোন সমস্যা নিয়ে বিচার সালিশ গঠন করা হলে রুহুল আমিন সালিশ বৈঠকে না এসে হামলা-মামলা দেখিয়ে ঘটনা এড়িয়ে যান। রুহুল আমিন মুলত ওই প্রকৃতির লোক।
এছাড়াও রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে এলাকার একাধিক ব্যক্তি হয়রাণির শিকার হয়েছেন। তারা হলেন, স্থানীয় ফয়জুল ইসলাম তারেক, ইকবাল, আনোয়ার, দিপু আহমদ, মো. আতাউর রহমান, আব্দুল খালিক বাবর। এছাড়াও অনেক ভুক্তভাগী নাম প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।
এদিকে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও হয়রানির করার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ২০১৪ সালে ডাকাতির মামলার আসামী ধরতে গেলে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে রুহুল আমিন। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানার এসআই মো. হাদিউল ইসলাম তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন, যার নং- ১২/১১৪। যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd