আজ মনে পড়ছে সেলিম ভাই আমার প্রত্যায়ন পত্রে লিখে ছিলেন ষ্টাফ রিপোর্টার `ক্রাইম’

প্রকাশিত: ৯:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২০

আজ মনে পড়ছে সেলিম ভাই আমার প্রত্যায়ন পত্রে লিখে ছিলেন ষ্টাফ রিপোর্টার `ক্রাইম’

Manual5 Ad Code

বাবর হোসেন :: আজ থেকে ৪০ বছর আগে ১৯৮০ সালে সে সময়কার সিলেটের তিন তরুন সাংবাদিক শ্রীমঙ্গল বেড়াতে গিয়ে রিকসায় চড়ে বেড়াচ্ছিলেন। সেই রিকসার ড্রাইভার ছিলেন ছড়াকার ও সাংবাদিক সৈয়দ মিলু কাসেম, আর রিকসার দুই পেসেঞ্জার ছিলেন নুরুজ্জামান মনি ও আজিজ আহমদ সেলিম। নুরুজ্জামান মনি এক সময় জৈন্তা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, তিনি দৈনিক শ্যামল সিলেট পত্রিকার প্রকাশক। রিকসার ড্রাইভার মিলু কাসেম’র রিকসার দুই যাত্রীর একজন আজিজ আহমদ সেলিম ভাইকে আজ ১৯ অক্টোবর ২০২০ সোমবার বাদ যোহর জানাযা শেষে জনমের বিদায় দিয়ে চলে এলাম।

সেলিম ভাই শুয়ে আছেন শাহজালাল (র:) এর মাজার পাশবর্তী কবরস্থানে। করোনার কালো থাবার কাছে সেলিম ভাই হেরে গিয়ে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন। সেলিম ভাই,র দাফন শেষে বাড়ী ফেরার পথে বাংলা টিভি,র আব্দুল কাইয়ুম বাহাপুরী বলেই দিলো, বারুদের আগামী সংখ্যায় যেনো সেলিম ভাইকে নিয়ে কিছু পাওয়া যায়। বাড়ীতে আসার পর ফোন পেলাম দক্ষিণ সুরমা জার্নালিষ্ট ক্লাবের সভাপতি ও সিলেট ভিউ,র সাংবাদিক রাসেদুল হাসান সোয়েব এবং ডিজিটাল এক্সপার্ট সাংবাদিক এম এ মালেক, যিনি আমাকে ডিজিটাল প্রতিবন্ধী থেকে কিছুটা সুস্থ করার প্রথম কারিগর।

এ দুজন বললেন, আমি কি সেলিম ভাইকে নিয়ে কিছু লিখবো। চিন্তা করছিলাম আমি তো ‘ছাগলের তিন নাম্বার শাবক, আমি আর কি লিখবো সেলিম ভাইকে নিয়ে। এরই মধ্যে সুরমা ডাক,র সম্পাদক শাব্বীর ফয়েজ ওরফে ভাইজান ফোন করে জানালো, রোববার রাতেই সিলেট মিরর সম্পাদক আমার ভগ্নিপতি ও এক সময়ের ঘনিষ্ট বন্ধু ও সহকর্মী আহমেদ নূর সেলিম ভাইকে নিয়ে কিছু লিখে ফেলেছেন। বেচারা কবি, লেখক এবং সাহিত্যিকও বটে, লিখতে হলে আমার মত কলম ভেঙ্গে যাবে না। সেলিম ভাইকে নিয়ে লিখতে পারেন, তাপস দাস পুরকায়স্থ, আল আজাদ এবং লিয়াকত শাহ ফরিদী, তিনিতো আবার প্রিন্সিপাল মানুষ। আরো একজন সুস্থ থাকলে হয়তো লিখতেন, তিনি হচ্ছেন তুষার কর। জানাযার পরে দাফনের সময় দেখলাম লিয়াকত শাহ ফরিদী দরগাহ,র কবরস্থানের এক স্থানে দাঁড়ীয়ে আরেক অধ্যাপক সুজাত আলী রফিকের সাথে কথা বলছেন কিন্তু মুখের ভেতর বাম গালে সুপারী আছে।

Manual8 Ad Code

যাদের নাম উল্লেখ করলাম তাঁরা জাত লেখক, তাদের লেখা পড়লে বার বার পড়তে মন চাইবে পাঠকের। আজিজ আহমদ সেলিম ভাই,র সাথে ১৩ বছর এক পত্রিকা অর্থাৎ দৈনিক যুগভেরীতে কাজ করেছি, সেই ১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীতে দৈনিক যুগভেরীর যাত্রা শুরু হয়েছিলো। এর আগে থেকেই সেলিম ভাই ও তাপস দা যুগভেরীতে যথাক্রমে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছিলেন। আমি দৈনিক হবার প্রাক্কালে যোগদান করেছিলাম ষ্টাফ রির্পোটার হিসেবে। ক্রাইম রিপোর্টার বলতে কোনো পদ ছিলো না, ৯৭ সালে পুলিশ ও আওয়ামীলীগারদের রোষানলে পড়ে আমি একটি মামলায় আসামী হয়ে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনের জন্য গিয়েছিলাম। আমার উকিল ছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা) পরবর্তীতে যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন এবং বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। আগাম জামিনের আবেদন করার ব্যাপারে উকিল বলেছিলেন পত্রিকার একটি প্রত্যায়ন পত্র লাগবে। আমি তখন পলাতক অবস্থায় দুলাল চৌধুরীর মাধ্যমে অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে হতো। দুলাল চৌধুরী তখন যুগভেরীতে ষ্টাফ রিপোর্টার ছিলেন, তিনি বর্তমানে জাতীয় দৈনিক মানবকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদকের দায়ীত্ব পালন করছেন। দুলাল চৌধুরী যখন যুগভেরী থেকে প্রত্যায়ন পত্রটি নিয়ে আমার হাতে দিলেন, তখন দেখলাম ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেলিম ভাই,র হাতে লেখা প্রত্যায়নপত্রে আমার পদবী উল্লেখ করেছিলেন ‘ষ্টাফ রির্পোটার (ক্রাইম) তখনই মনে হয়েছিলো, আমি একজন ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছিলাম।

Manual6 Ad Code

যুগভেরীতে ১৩ বছরের কর্মকালীন সময়ে আমি কোনোদিন দেখিনি সেলিম ভাই সম্পাদক হিসেবে অধিনস্থ সাংবাদিক কিংবা অন্য কোনো সেকশনের ষ্টাফদের কর্মচারী হিসেবে আচরন করতে। কোনো সাংবাদিক বিপদে পড়লে তার অপরাধ যত বড় হউক না কেনো তাকে আগে রক্ষা করে তারপর ব্যবস্থা নিতেন সেলিম ভাই। ৯৭ সালেই আমি পুলিশ ও আওয়ামীলীগারদের রোষানলে পড়ে গ্রেফতার হয়ে ডিটেনশনে জেলহাজতে থাকাকালীন সময়ে আমাকে অব্যাহতি দিয়ে পত্রিকায় ঘোষনা দেবার জন্য সিলেটের তৎকালীন অনেক রথি-মহারথি সাংবাদিকরা প্রস্তাব ও দাবী নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে সেলিম ভাই তাতে সায় দেননি।

বর্তমান সময়ের ভূয়া ও জাল প্রত্যায়নপত্রের বদৌলতে পত্রিকার সম্পাদক বনে যাওয়া অনেকেই এ ধরনের সু-জ্ঞান মূলক আচরণ করতে পারবেনা। কারণ তারাজাত সাংবাদিক নয়। সেলিম ভাই,র আরেকটি গুণ ছিলো রিপোর্ট সত্য হলে, সেই রির্পোট প্রকাশের ব্যাপারে যত বাঁধা আপত্তি আসুক না কেনো রির্পোট গায়েব করার পক্ষপাতি তিনি কোনোদিন হননি। আমার মনে আছে ৯৬তে আওয়ামীলীগ ক্ষমতাশীন হবার পর পরই আমি যুগভেরীতে একটি অনুসন্ধান মূলক রিপোর্ট করেছিলাম, যার শিরোনাম ছিলো ‘স্পীকার হত্যা প্রচেষ্টা মামলা একটি সাজানো নাটক’ তখন স্পীকার ছিলেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, যুগভেরী পত্রিকার মালিকানা এবং সম্পাদক স্পীকারের পরিবার, এ ছাড়া স্পীকারের একান্ত সহকারী সচীব যিনি ছিলেন, সেই সিরাজুল ইসলাম বাদশা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আজিজ আহমদ সেলিম ভাই,র ক্লাস মেইট। তদুপরি আমার প্রতি এবং আমার রিপোর্টের প্রতি সেলিম ভাই,র অগাধ বিশ্বাস থাকার কারনে কোনো প্রতিবাদ তো ছাপাই হয়নি। রিপোর্টের ফলোআপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সেলিম ভাই আমাকে গোপনে উৎসাহ দিয়েছিলেন। যদিও তাপস দা সব সময় মালিক পক্ষকে রাজ ও খুশি করার পক্ষপাত মূলক মনোভাব পোষন করতেন। সেলিম ভাই কারো উপর নারাজ হলে তা কখনো প্রকাশ করতেন না।

Manual2 Ad Code

আমার আমল-খাসলত জনিত কারনে যুগভেরীর ১৩ বছরের কর্মকালীন সময়ে তিনবার ও এস ডি হয়েছি কিন্তু সেলিম ভাই আমার পক্ষে বা বিপক্ষে ছিলেন তা আমি টের পাইনী। পত্রিকার সম্পাদনা বোর্ডের সিদ্ধান্তে প্রত্যেকবরাই আমি ২/৩ মাস পর অফিসে যোগদান করেছি কিন্তু সেলিম ভাই,র আচার-আচরনে ব্যতিক্রম কিছু লক্ষ্য করিনি। যা কথা-বার্তা শুনতাম তাপস দা,র কাছ থেকেই। আমার ১৩ বছর যুগভেরীতে এবং পরবর্তীকালে উত্তর পূর্বর প্রধান সম্পাদক হিসেবে সেলিম ভাইকে কোনো দিন টাকার বিনিময়ে কিংবা অন্য কোনো কারনে নিউজের মৃত্যু ঘটানোর মত অপরাধ করতে দেখিনি এবং শুনিনী। তিনি কেনো জানি আমাকে এত বিশ্বাস করতেন জানিনা, সাংবাদিক মালেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মরহুম দারা মিয়ার ছেলে গুলজার আহমদ। সেই ঘটনার আপোষ নামা নিয়ে আমি এবং নয়া দিগন্তের সাংবাদিক আফতাব উদ্দিন গিয়েছিলাম সেলিম ভাই,র কাছে।

Manual1 Ad Code

তিনি তখন জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি। আপোষনামা না পড়েই স্বাক্ষর দিচ্ছিলেন, কে একজন বলেছিলো পড়ার জন্য, সেলিম ভাই বলেছিলেন, বাবর যখন আছে তখন আর পড়ার দরকার নেই, সেলিম ভাইকে নিয়ে আমি আজ আর লিখতে পারছিনা। আমাদেরকে রেখে তিনি চলে গেছেন, আমরা অভিভাবকহীন হয়ে গেলাম, দোয়া করি আল্লাহ সেলিম ভাইকে জান্নাতবাসীর মর্যাদা দান করুন আমীন।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

October 2020
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..