রায়হান হত্যা: ভয়ঙ্কর সেই রাতের বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজি চালক

প্রকাশিত: ৪:২৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২০

রায়হান হত্যা: ভয়ঙ্কর সেই রাতের বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজি চালক

Manual5 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘নির্যাতনের ফলে’ মারা যাওয়া নগরীর আখালিয়ার যুবক রায়হান আহমদের (৪০) সঙ্গে সেই রাতে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনার বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী এক সিএনজি অটোরিকশা চালক। ওই চালক ও তাঁর আরেক সঙ্গীর দুটি সিএনজি অটোরিকশাতেই সেই রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়ির দুটি পুলিশ টিম টহল দেয়। এর মধ্যে একটি অটোরিকশাতেই রায়হানকে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে পুলিশ।

Manual1 Ad Code

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই অটোরিকশা চালক সিলেটভিত্তিক একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, শনিবার দিবাগত (১২ অক্টোবর) রাতে সিলেট নগরীর কাষ্টঘর এলাকার একটি সুইপার কক্ষ থেকে রায়হানকে বের করে নিয়ে আসে পুলিশ। এর আগে নগরীর মাশরাফিয়া রেস্টুরেন্টের সামনে অজ্ঞাত দুইজন লোক পুলিশকে এসে খবর দেয়, কাষ্টঘরের গলিতে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

সেই অটোরিকশা চালক জানান, পুলিশ গিয়ে একটি সুইপারের কক্ষ থেকে রায়হানকে ডেকে বের করে। তখন সেখানে কোনো ছিনতাই বা রায়হানকে গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটতে দেখেননি অটোরিকশা চালক। ওই গলি থেকে রায়হানকে বের করে দ্বিতীয় (ওই চালকের সঙ্গীর) অটোরিকশাযোগে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে পুলিশ। তখন সুস্থ শরীরেই ছিলেন রায়হান। এসময় রায়হান পুলিশের তর্কে লিপ্ত হন এবং বলেন- আমি কোনো ছিনতাইকারী বা অপরাধী নই।

Manual8 Ad Code

রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়ার পর দুই অটোরিকশা চালক ফাঁড়ির বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে সকালে রায়হানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই দুই চালকের মধ্যে একজনের অটোরিকশাতে করে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

অটোরিকশা চালক আরও জানান, হাসপাতালে নেয়ার পর রায়হানের অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়। এর আগে ফাঁড়ি থেকে রায়হানকে বের করার সময় তার হাটুর নিচে ও হাতের আঙ্গুলে আঘাতের চিহ্ন দেখেন ওই চালক। এসময় চালক দুই পুলিশ সদস্যকে বলতে শুনেন- ‘এমন নির্মমভাবে কেউ কাউকে মারে? স্যার আদেশ দিয়েছেন বলেই মারতে হলো।’

অটোরিকশা চালক বলেন, সেই রাতে এস.আই আকবর ফাঁড়িতেই ছিলেন এবং তার নির্দেশেই রায়হানকে মারধর করা হয়। আকবর নিজের হাতেও নির্মমভাবে রায়হানকে নির্যাতন করেছেন বলে ওই অটোরিকশা চালক জানান।

এদিকে সূত্র জানায়, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় রায়হানকে নিয়ে আসা ও নির্যাতনের পর হাসপাতালে নেওয়ার দৃশ্যটি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সিসি ফুটেজে ধরা পড়ে। সেখানে হাসপাতালের দুই তলায় নিয়ে এক্স-রে করার পর ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে ভর্তি করেন। এরপর রায়হানের অবস্থা গুরুতর হলে আইসিইউতে নেওয়ার ২০ মিনিট পর ভোর ৬টার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক রায়হানকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি ফোনে এসআই আকবরকে জানান রায়হানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্য। পরে এসআই আকবর সঙ্গে কনস্টেবল হারুনকে নিয়ে হাসপাতালে যান। হাসপাতাল থেকে ফাঁড়িতে ফিরে আসার পর সকাল ৮টার দিকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ মুছে দিয়ে (ডিলিট) বেরিয়ে পড়েন। আর ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান আকবর। এর পর থেকেই তার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়।

Manual8 Ad Code

প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ সদস্য বলেন, এসআই আকবর বাঁশের লাঠি দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেছেন। তাদের বেপোরোয়া নির্যাতনের কারণে জলজ্যান্ত মানুষটির আঙুলের নখ উপড়ে যায়, হাত ও পায়ের হাঁড় ভেঙে যায়। রায়হানকে অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি ওসি সৌমেনকে জানান তিনি। একই বক্তব্য তিনি পুলিশ কমিশনারের সামনেও দিয়েছেন।

Manual5 Ad Code

প্রত্যক্ষদর্শী ওই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন জনকে প্রত্যাহার করা হলেও আমরা ছয় জনই পুলিশ লাইনে আছি। কিন্তু এসআই আকবর নেই, তিনি রোববার সকাল থেকেই লাপাত্তা হয়ে যান। পুলিশ লাইনে কড়া প্রহরায় রাখা হয়েছে আমাদের।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

October 2020
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..