সিলেট ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:০২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২০
এ টি এম তুরাব : সীমান্তবর্তী অঞ্চল হলো সিলেট বিভাগ। ভারতের সাথে বিভাগটির চারটি জেলার রয়েছে বিস্তৃর্ণ এলাকা। করোনাভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত ও আমদানি-রফতানি খুলে দেয়া হলেও বন্ধ আছে সীমান্ত হাটগুলোও। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে সীমান্তের দরিদ্র মানুষগুলো। ফলে কর্মহীন মানুষেরা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে বেড়ে গেছে অবৈধ অনুপ্রবেশ। এতেই বেড়েছে সীমান্ত হত্যা। শুধুমাত্র করোনাকালীন সময়ে সিলেটের গোয়াইঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে ৫ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো অন্তত ১০ জন।
এদিকে, সীমান্তে চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলেও কোন অবস্থায় বন্ধ হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারকারিদের দৌরাত্ম। গত এক মাসে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চোরাই পথে আসা ভারতীয় মোবাইল ফোন, ঔষধ, সিগারেট ও মাদকের চালন আটক করেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। যাহার বাজার মূল্য দুই কোটি টাকার ওপরে। সর্বশেষ রোববার রাতে জকিগঞ্জের শাহগল্লি এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারি সিরাজ মিয়াকে আটক করে র্যাব-৯। এ সময় তার হেফাজতে থাকা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫শ’ ভারতীয় পাতার বিড়ি জব্দ করে। ২৬ জুলাই রাতে দুই চোরাকারবারিসহ ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের ৭১টি চোরাই মোবাইল ফোন আটক করে র্যাব। এছাড়াও গত শুক্রবার রাতে নগরীর বালুচর এলাকায় পরিত্যক্ত একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঔষধ উদ্ধার করেছে র্যাব।
তথ্যটি জানিয়ে র্যাব-৯ এর মিডিয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম কামরুজ্জামান বলেন, উদ্ধারকৃত ঔষধগুলো ভারতীয় বিভিন্ন ব্রান্ডের। যাহার বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা। এরপরও থেমে নেই চোরাকারবারিরা।
সরেজমিন দেখা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের সিঙ্গারীরপাড়, বালিদাঁড়া, ইয়াংরাজা, আফিফা-নগর চা-বাগান, বাঘছড়া, তুমইর, জঙ্গীবিল, লালখাল চা-বাগান, লালাখাল গ্রান্ড। নিজপাট ইউনিয়নের লালাখাল রিসোর্স সেন্টার এলাকা, কালিঞ্জিবাড়ী, জালিয়াখলা, হর্নি, বাইরাখেল, নয়াগ্রাম, মাঝরবিল, গোয়াবাড়ী, কমলাবাড়ী, টিপরাখলা, ফুলবাড়ী, মহিষমারা, ঘিলাতৈল, খলারবন্দ, আতাউরের বাগান, আসামপাড়া, ডিবির হাওর, জৈন্তাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রী বিল, কেন্দ্রী হাওর, কাঁঠালবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, মিনাটিলা, ছাগল খাউরী, আসামপাড়া, আদর্শগ্রাম, শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি, আলুবাগান, নলজুরীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন চোরাচালান বাংলাদেশে ঢুকছে। এ যেনো চোরাকারবারিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে জৈন্তাপুর ও ভারতের মেঘালয় সীমান্ত। এসব এলাকায় দেড় থেকে দুই শতাধিক মানুষ চোরাকারবারের সাথে জড়িত রয়েছে। তারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টের নদী, পাহাড় দিয়ে নানা কৌশলে চোরাই পথে প্রবেশ করছে ভারতীয় নাছির বিড়ি, পাতার বিড়ি, টাটা গাড়ির পার্টস, টায়ার, মোটরসাইকেল, ভারতীয় বিড়ি, নিম্নমানের চা-পাতা, হললিক্স, ঔষধ, কসমেটিক্স, সুপারী, ইয়াবা ও বিভিন্ন ব্রান্ডের মদসহ ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসছে। আর বাংলাদেশ থেকে মটরশুটি, মশুর ডাল, রসুন, স্বর্ণের বার প্রভৃতির পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রজাতির সুন্ধি কাছিম (কচ্ছপ) ভারতে পাচার হচ্ছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার চারিকাটা ইউনিয়নের অন্তত ৪০ জন, নিজপাট ইউনিয়নে ৭০ জন এবং ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নে ৬০ জন ব্যবসায়ীরা গরু-মহিষ অবৈধ পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। তিন ইউনিয়নে প্রায় ৮৫ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং মোবাইল ফোন, মটর সাইকেল, হরলিক্স, জুতা, প্যামপাস, কসমেটিক্স, জিরা অবৈধ পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জৈন্তাপুরে চোরাকারবারীদের একাধিক সিন্ডিকেট রয়েছে। এ তালিকায় আনোয়ার হোসেন, রাম কিশ্বাস, হারুন মিয়া, আলমগীর হোসেন, শ্রমিকনেতা সাইফুল ইসলাম, আমিন উদ্দিন, মানিক মিয়া, ইমরান হোসেন, সোহেল আহমদ, ইউনুছ মিয়া, গুলজার মিয়া, আব্দুল করিম, আব্দুল্লাহ মিয়া, লালা মিয়া, পারভেজ মিয়া, নজরুল ইসলাম নজাই, নাজিম মিয়া, আব্দুল মন্নান, সোহেল আহমদ, বিলাল মিয়া, সেলিম আহমদ, রহিম উদ্দিন, রফিক আহমদ, আলী আকবর, হেলাল উদ্দিনসহ ২শতাধিক চোরাকারবারীর নাম রয়েছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।
তারা অভিযোগ করে বলেন, দিন রাত সমানভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্য। এতে খুব একটা বাধার মুখে পড়ছে না চোরাকারবারিরা। প্রতিদিন সন্ধ্যা হতে না হতেই জৈন্তাপুর বাজার থেকে বড় বড় ট্রাকযোগে নিয়ে আসা মটরশুটি, মশুর ডালসহ উল্লেখিত বিভিন্ন পণ্য সীমান্তে নিয়ে আসা হয়। পরে এপার থেকে পণ্য যায় ওপারে, ওপার থেকে পণ্য আসে এপারে। এমনকি দিনেদুপুরেও চোরাচালান হয় বলে সীমান্ত এলাকার মানুষ অভিযোগ করেন। যদিও প্রশাসন ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, সিলেটের সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। এজন্য জনগনকে সচেতন করতে পুলিশ নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী ভারতীয় খাসিয়া বাসিন্দারা করোনা সংক্রমনের ভয়ে নিজেদের এলাকায় এখন কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ফলে কেউ লুকিয়ে প্রবেশ করলেই গুলি ছুঁঁড়ছে তারা। এতে অনেকেই হতাহত হচ্ছেন।
এসপি ফরিদ আরো বলেন, সীমান্তে চোরাচালন রোধে পুলিশের পাশাপাশি বর্ডারগার্ড, র্যাবসহ গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে মোবাইল, ঔষধ, কসমেটিক্স, সিগারেটের চালান আটক করা হয়েছে। সৌজন্যে: দৈনিক জালালাবাদ
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd