হবধূ হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন

প্রকাশিত: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২০

হবধূ হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : নীলফামারীতে গৃহবধূ হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনসহ তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের হালিরবাজার মাস্টারপাড়ার গৃহবধূ মীনা রাণী ঋষিকে (২০) শ্বশুড়ের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন স্বামীসহ শ্বশুড় পরিবারের লোকজন। পারিপারিক কলহের জেরে মুখে ও যৌনাঙ্গে মাটি প্রবেশ করিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা তাকে। নিহত মীনা ওই গ্রামের তিমোথীয়ো ঋষির স্ত্রী।

Manual7 Ad Code

শনিবার দুপুরে নীলফামারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গত ২৮ মে সকালে খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের মাস্টারপাড়াস্থ শ্বশুড়বাড়ির পাশে হালিরবাজার সংলগ্ন এম ইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে শুকনো একটি ডোবা থেকে মীনা রানী ঋষির অর্ধনগ্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত ২৭ মে রাতে পারিবারিক কলহের জের ধরে তাকে হত্যা করে শ্বশুড়, স্বামী, সৎ শাশুড়ি এবং কাকি শাশুড়ি।

Manual8 Ad Code

গত ২৮ মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এবং ২৯ মে বিকেলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নীলফামারী জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকীম জাহিদ হাসানের কাছে জবানবন্দি দেন নিহতের স্বামী তিমোথিয়ো ঋষি (২১), সৎ শাশুড়ি শিউলী রাণী ঋষি (৪২) এবং কাকি শাশুড়ি মিনতী রাণী ঋষি (৩৬)।

নীলফামারী সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহমুদ-উন-নবী জানান, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিকালে এটি হত্যাকাণ্ড প্রতীয়মান হওয়ায় নিহতের শ্বশুড়বাড়ির লোকজনদের ঘটনাস্থলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে; মীনাকে মানসিক ভারসাম্যহীন উল্লেখ করে আধ্যাত্মিক ঘটনা উপস্থাপন করে। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে মীনার স্বামী, শাশুড়ি ও কাকি শাশুড়িকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।

Manual4 Ad Code

জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানায়, মীনা হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিল। দুই বছর আগে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীস্টান ধর্মের অনুসারী তিমোথীয়োকে বিয়ে করে মীনা। বিয়ের পর থেকে মীনাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিতেন তার শ্বশুড় গনেশ ঋষি। এ নিয়ে প্রায় অশান্তি বিরাজ করতো পরিবারে।

শ্বশুড়ের বিরুদ্ধে এমন অপবাদ দেওয়ায় মীনাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করতো স্বামী তিমোথীয়ো। ওই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ২৭ মে রাত ১১টার দিকে বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে বাধা দেয় স্বামীর পরিবারের লোকজন। এসময় কৌশলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় মীনা। তাকে ধরতে ধাওয়া করে স্বামীর পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে বাড়ির পাশে হালীর বাজার সংলগ্ন এম.ইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনের ডোবার পাশে মীনাকে বসে থাকতে দেখে স্বামীর পরিবারের লোকজন। এসময় শ্বশুড় গনেশ ঋষির নির্দেশে মিনার হাতপা চেপে ধরে সৎ শাশুড়ি শিউলী রাণী, কাকী শাশুড়ি মিনতী রাণী ও স্বামী তিমোথীয়ো। এর পর শ্বশুড় গনেশ মীনার গলা ও মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মীনার মৃত্যু নিশ্চিতের পর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার মুখে ও যৌনাঙ্গে মাটি প্রবেশ করিয়ে মরেদহ অর্ধনগ্ন অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় তারা। এরপর মীনা নিখোজ হয়েছে মর্মে প্রতিবেশিদের বাড়িতে খোঁজাখুজি করে বাড়িতে ফিরে যায়। পরের দিন সকালে প্রতিবেশিদের মাধ্যমে মীনার মরদেহ পড়ে থাকার খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তারা।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, মীনা রাণী ঋষি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৮ মে বিকেলে নিহতের ভাই সুকুমার ঋষি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় মীনার স্বামী, সৎ শাশুড়ি ও কাকী শাশুড়িকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত ২৯ মে নীলফামারী জ্যেষ্ঠ বিচারকি হাকীম জাহিদ হাসানের আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে মামলার অন্যতম আসামী মীনা রানীর শ্বশুড় গণেশ ঋষি ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..