সিলেট ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:১৬ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২০
সিলেটের করোনা আইসোলেশন সেন্টার- সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে করোনা আক্রান্ত হন নার্স রুহুল আমিন। করোনা রোগিদের সেবায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় ২২ মে নিজের কর্মস্থল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেই করোনা রোগি হিসেবে ভর্তি হন তিনি। ৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে করোনা যুদ্ধের অগ্রসৈনিক রুহুল আমিন শুক্রবার রাতে মারা যান। শনিবার (৩১ মে) সকাল পৌনে ১১টায় শামসুদ্দিন হাসপাতাল ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এবং ইসলামি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
রুহুল আমিনের মৃত্যু নিয়ে সহকর্মী ইসরাইল আলী সাদেকের ফেইসবুক স্ট্যাটাস তা ক্রাইম সিলেটের পাঠকদের জন্য হুবহু তোলে ধরা হলো। তিনি উল্লেখ করেন, ‘মানিকপীর (রহ.) এর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করে এসেছি প্রিয় সহকর্মী, সম্মুখযোদ্ধা, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন ভাইকে। সকালে দাফন শেষ করে আসার পর থেকে কোনভাবেই যেন মনকে শান্ত করতে পারছি না। বারবার চোখে ভাসছে রুহুল আমিন ভাইয়ের হাসিমাখা মুখটি। কানে বাজছে তার একমাত্র ছেলে আলীফের আকুতি ‘আংকেল আমার বাবার কবরটা চিনে রেখ। আমি আমার বাবার কবর জিয়ারত করতে যাব।’
ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া এই শিশুটিকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। রুহুল আমিন ভাইয়ের পরিবারের কান্নায় মনে হচ্ছিল আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে। কে কাকে সান্তনা দেব, আমরাওতো রুহুল ভাইয়ের পরিবারের বাইরের কেউ নয়। চোখের সামনে সহকর্মীর নিথর দেহ বের হয়ে কবরস্থানের দিকে যাচ্ছে আমরা সইতে পারছি না, ধরতে পারছি না। সবাই মিলে জানাজা পড়তে পারছি না। এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কি হতে পারে?
রুহুল আমিন ভাইয়ের ছেলের আহাজারি, জানাজায় অংশ নিতে না পারার কষ্ট। ভাবীর বুকফাটা আর্তনাদ আমাদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। শেষ সময়ে কি আমরা রুহুল ভাইয়ের জন্য কিছুই করতে পারলাম না।
আমরা যারা নার্সিং পেশায় আছি এই কঠিন সময়ে আমরা মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়েই দায়িত্ব পালন করছি। আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি। দায়িত্ব পালনকালে নিজেদের কথা খুব একটা ভাবি না। আইসোলেশনে থেকে রোগীরা যখন সুস্থ হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেন, তখন মনে হয় আমরাই জয়ী। রোগীর চেয়ে আমাদের ভেতরই বেশি প্রশান্তি মিলে। এভাবে রোগীদের সেবা দিতে দিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েই চলে গেলে প্রিয় রুহুল ভাই।
মানুষ পৃথিবীতে আসার পরই মূলত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। রুহুল আমিন ভাইও সেই চিরন্তন সত্যে পৌঁছে গেছেন। তাকে ফেরানর সাধ্য হয়তো আমাদের কারোই ছিল না। রুহুল আমিন ভাইর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সিলেটসহ দেশের অনেক বিশিষ্টজন ফোনে শোক প্রকাশ ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে প্রমাণ হয়েছে এই সংকটময় মূহুর্তে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করে দেশের নার্সরা মানুষের মন কতটুকু জয় করেছেন। তাঁর মৃত্যু প্রমাণ করেছে মানুষের সেবায়ই পরমতৃপ্তি। সেবার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করার মাঝেও গৌরব আছে, আছে সম্মান, শ্রদ্ধা। রুহুল আমিন ভাই পরপারে শান্তিতে থেক, পরম শান্তিতে। আল্লাহ রুহুল আমিন ভাইকে শহীদি দরজা দান করুন।
রুহুল আমিন ভাইয়ের মৃত্যুর পর ফোনে শোকপ্রকাশ করেছেন ও তার পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছেন মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন স্যার ও তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিনী সমাজসেবী সেলিনা মোমেন ম্যাডাম। করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে স্যার যেভাবে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন, সাহস যুগিয়েছেন তা কখনো ভুলার নয়। ফোনে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি নার্সিং অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার স্যার, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, জাতীয় মহিলা সংস্থা সিলেট জেলা শাখার সভাপতি হেলেন আহমদের প্রতি।
রুহুল আমিন ভাই অসুস্থ হওয়া থেকে দাফন পর্যন্ত মাথার উপর ছায়া হয়ে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান স্যার, উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় স্যার, এনেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান ডা. ময়নুল হোসেন ডালিম স্যার, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আরএমও সুশান্ত কুমার মহাপাত্র স্যার ও শামসুদ্দিন হাসপাতারের সেবা তত্ত্বাবধায়ক নিহারী রাণী দাসের প্রতি। আপনাদের ঋণ কোনদিন শোধ করার মতো নয়’।
ইসরাইল আলী সাদেক
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd