তথ্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের?

প্রকাশিত: ৭:১৬ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২০

তথ্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের?

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এখন একমাত্র কাজ হয়েছে যেন নিয়মিত বুলেটিন দেওয়া। দুপুর আড়াইটায় স্বাস্থ্য বুলেটিন পরিণত হয়েছে ক্রিকেটের স্কোরকার্ডের মতো। প্রতিদিন বলা হচ্ছে যে, নতুন কতজন শনাক্ত হয়েছে, নতুন কতজন মারা গেছে ইত্যাদি পরিসংখ্যান।

আর এই একই ভাঙা রেকর্ড বাজানো হচ্ছে, আপনি মাস্ক ব্যবহার করুন, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে ইত্যাদি ইত্যাদি কিছু গৎবাঁধা কথাবার্তা। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেন কোন কাজ নেই।

ঈদের আগে থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পর্দার আড়ালে চলে গেছেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেই কোন দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড। প্রশ্ন উঠেছে যে, এই স্বাস্থ্য বুলেটিন দেওয়াই কি তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একমাত্র কাজ ?

প্রতিদিন করোনা পরিস্থিতি যেভাবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এবং এর মধ্যে যেভাবে সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে তাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মপন্থা এবং জনগণের করণীয় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করা দরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরকার সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা।

অথচ সেই কর্মপরিকল্পনার কথা মানুষ জানছে না এবং প্রতিদিন এক অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে জনমানুষের মধ্যে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনস্বাস্থ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়। অথচ জনগণ কি করবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কি প্রস্তুতি রয়েছে বা বিশেষজ্ঞরা কি ভাবছেন এসব নিয়ে কোন বক্তব্যই নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।

বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চায় যে, করোনা পরিস্থিতি কতদিন থাকবে, বাংলাদেশ করোনার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে কিনা এবং পৌঁছালে এখন থেকে কবে কমতে শুরু করবে।

কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত তাঁদের পরামর্শ কমিটি বা তাঁদের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দিয়ে এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট প্রক্ষেপণ জারি করেনি। অথচ এই ব্যাপারে প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট প্রক্ষেপণ দিচ্ছে যে কতদিন, কবে, কি পরিস্থিতি থাকবে।

দ্বিতীয়ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত বলছে না যে, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলো যদি রোগীতে ভরে যায় তাহলে কি হবে? করোনা রোগীরা চিকিৎসা পাবে কিনা, অন্যান্য যারা জটিল রোগে ভুগছে তাঁদের চিকিৎসা হবে কিনা- সে ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা জনগণের সামনে উপস্থাপিত করেনি।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা সংক্রমিত হয়েছে ৪২ হাজার ৮৪৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী ৮ হাজার ৯৩৪ জন সুস্থ হয়েছে, মারা গেছে ৫৮২ জন। অর্থাৎ আজকে পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৩৯৮ জন করোনা রোগী রয়েছে।

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে যত হাসপাতাল রয়েছে তা প্রায় অর্ধেকের স্থান এখন করোনা রোগীরা দখক করে নিয়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে খুব শীঘ্রই হাসপাতালে আর কোন জায়গা থাকবে না।

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা জারি করেছে, সেখানে বলা হয়েছে যে, সকল হাসপাতালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে হবে। প্রশ্ন হলো যে, করোনা রোগীর সংখ্যা যদি এভাবে বাড়তেই থাকে তাহলে হাসপাতালগুলোতে অন্যান্য রোগী, যেমন প্রসূতি মায়ের চিকিৎসা, ক্যান্সার রোগী, কিডনী বা হৃদরোগীদের চিকিৎসা কিভাবে হবে? বা আদৌ হবে কিনা।

তৃতীয়ত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত বলছে না যে, যারা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করছেন, সেই মৃত্যুগুলো আসলে কি কারণে মৃত্যু? এটা কি করোনার জন্য মৃত্যু? নাকি করোনা ছাড়াই মৃত্যু হচ্ছে?

চতুর্থত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত বলছে না যে, সবকিছু খুলে দেওয়ার ফলে আমাদের নতুন কি কি সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে এবং এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় কি? টেকনিক্যাল কমিটির যে পরামর্শগুলো তা জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু সেই সমস্ত পরামর্শগুলো জানানো হচ্ছেনা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন যে পুরনো কথাগুলো বলছে, হাত ধুতে হবে, মাস্ক পড়তে হবে, এর বাইরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গবেষণা কি বলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কমিটি কি বলে?

পঞ্চমত, ইতিমধ্যে বেসরকারি অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হচ্ছে। এই খুলে দেওয়া এবং গণপরিবহন চালু করার ফলে জনগণের সামনে সবথেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে এই অফিস-আদালতগুলোকে কি ধরণের স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে, কি ধরনের নিয়ম মানতে হবে। অথচ এই নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোন বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি।

করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছিল, তাঁরা প্রথমে এই করোনা পরীক্ষায় শুধু আইইডিসিআর-কে নিয়োজিত করেছিল, আস্তে আস্তে তাঁরা সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে যুক্ত করেছে।

তাঁরা প্রথমে শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোকে নির্দিষ্ট করেছিল। তবে সেই সিদ্ধান্তটিও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন তাই সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালকে যুক্ত করেছে। করোনা চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের যে পিপিই দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাহীন দায়িত্বহীনতা পালন করেছে।

এখন যখন করোনা সংক্রমণ চূড়ায় উঠেছে, তখন তাঁরা যে জনগণকে একটি পথনির্দেশনা দিবে বা জনগণকে প্রকৃত পরামর্শ দিয়ে সঙ্কট উত্তরণের পথ বাতলে দিবে- এরকম কিছুই দেখা যাচ্ছেনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। বরং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেন এক দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

ক্যাবিনেট ডিভিশন ছুটি খোলা বন্ধের নির্দেশনা দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুধু স্বাস্থ্য বুলেটিন দিয়ে আক্রান্ত-মৃতের পরিসংখ্যান দিচ্ছে। এটাই যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একমাত্র কাজ হয়, তাহলে এই মন্ত্রণালয় রাখার দরকার কি?

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..