দাফনের জন্য টাকা নিয়ে তরুণীর লাশ ভাসিয়ে দিলো নদীতে, উদ্ধার করলো পুলিশ

প্রকাশিত: ৮:৪২ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০২০

দাফনের জন্য টাকা নিয়ে তরুণীর লাশ ভাসিয়ে দিলো নদীতে, উদ্ধার করলো পুলিশ

Manual4 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: করোনা সন্দেহে মৌসুমী আক্তার (৩১) নামের এক পোষাক শ্রমিক তরুণীর লাশ দাফনে দুই দফা বাধা ছিল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতের। শেষ পর্যন্ত লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার হস্তক্ষেপে লাশ দাফন করা হয়েছে।

নিহত মৌসুমী আক্তার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফার মেয়ে।

বরিবার (২৪ মে) রাতে আদিতমারী থানা পুলিশ উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চরগোবরধন এলাকার তিস্তা নদী থেকে অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার করেন। এরপর সোমবার সকালে (২৫ মে) মেয়ের বাবা তার লাশ শনাক্তকরেন। থানা ক্যাম্পাসে জানাজা শেষে পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার নির্দেশে ইউপি চেয়ারম্যানের হুমকি উপেক্ষা করে গ্রামের বাড়ীতে লাশ দাফন করা হয়েছে।

এর আগে (২৩ মে) গ্রামের বাড়িতে মেয়ের লাশ দাফন হবে না এজন্য এক এ্যাম্বুলেন্স চালকের সাথে ৫ হাজার টাকার বিনিময় চুক্তি করেছিলেন মেয়ের মৃতদেহ দাফনের। সে জন্য চুক্তির টাকাও পরিশোধ করেছিলেন হতভাগ্য সেই পিতা। কিন্তু সেই মৃতদেহ ওই এ্যাম্বুলেন্সের চালক দাফন না করেই ফেলে দেয় তিস্তা নদীতে।

২ দিন পর সেই মৃতদেহ তিস্তার নদীতে ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় এলাকাবাসী। আদিতমারী থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করেন। পরিচয় শনাক্ত হবার পর সেই হতভাগ্য পিতার কাছে পুনরায় লাশ দাফনের দায়িত্ব এসে কাঁধে চাপে। এ ঘটনা জানতে পেরে এবার লালমনিরহাট পুলিশ সুপার দায়িত্ব তুলে নেয় লাশ দাফনের।

এমনিই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের হতভাগ্য বাবা ভুমিহীন গোলাম মোস্তফার কপালে!

পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানান, বাউড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমানের সাথে ৬ মাস আগে বিয়ে হয় পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে একাই গাজিপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন মৌসুমী। ২২ মে অসুস্থতা অনুভব করলে একটি ট্রাক যোগে পাটগ্রামে বাড়ির উদ্দশ্যে রওনা দেন তিনি।

পথিমধ্যে রংপুরের তাজহাট এলাকায় পৌঁছলে ট্রাক চালক তাকে মৃত দেখে মরদেহ ফেলে পালিয়ে যান। অজ্ঞাত মরদেহ হিসেবে তাজহাট থানা পুলিশ ২৩ মে মৌসুমীর মরদহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান।

নিহতে বাবা গোলাম মোস্তফা তাজহাট থানায় গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্তকরেন। মেয়ের মরদেহ বুঝে নিয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদর চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতকে মোবাইলে বিষয়টি অবগত করে নিজ এলাকায় মরদহ দাফনের অনুমতি চান। কিন্তু চেয়ারম্যান ওই মরদেহ করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে তার পরিবার ও মরদেহবাহি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকী দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

Manual4 Ad Code

নিরুপায় হয়ে হতভাগ্য বাবা মেয়ের আঞ্জুমান মফিজুলে লাশ দাফন করতে রংপুর মেডিকল কলেজ হাসপাতাল এলাকার একজন লাশবাহি গাড়ি চালকের সাথে ৫ হাজার টাকা চুক্তি করেন। চালক মরদেহ দাফনের আশ্বাস দিয়ে কিছুদুর গিয়ে গোলাম মোস্তফাকে গাড়ী থেকে নামিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর মরদহটি তিস্তা নদীত ফেল দেন।

Manual3 Ad Code

অবশেষে লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় আদিতমারী থানা পুলিশ পাটগ্রাম থানা পুলিশের সহায়তায় পাটগ্রামের নিজ গ্রামে পুলিশি পাহাড়ায় দাফন করেন।

Manual2 Ad Code

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতের মোবাইল ফোন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।

আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারী ব্যাগে মোড়ানা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একটি ইউডি মামলা করা হয়েছ। মৃতের পরিচয় নিশ্চিত হবার পর তার বাবার আকুতি জেনে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দুই থানা পুলিশের যৌথ উদ্যাোগে মরদেহ তার গ্রামে দাফন করা হয়েছ। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবতির্তে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..