সিলেট ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বাবা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করেন। বাবার আদর পাই না। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যায়। আমার কি অপরাধ? এই বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন গাজীপুরের কালীগঞ্জের বক্তারপুর ইউপির ব্রাহ্মনগাঁও গ্রামের শেখ আজিজুর রহমান সুমনের কিশোরী কন্যা শিমলা আক্তার।
শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মনগাঁও শহীদ ময়েজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার এ কান্নায় উপস্থিত প্রায় শতাধিক মানুষের চোখ ভিজে যায়। সবাই নিরবেই চোখ মুছলেন। কিন্তু শিমলাকে শান্তনা দিতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
কারণ গত ১৫ বছর এলাকাবাসী অনেক চেষ্টা করেছে শিমলাকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু সবাই ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ এগিয়ে এলে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেন শিমলার বাবা।
এসব অভিজ্ঞতার কারণে এখন আর কেউ শিমলাকে শান্তনা দিতে এগিয়ে আসে না।
জানা যায়, ২০০৪ সালের দিকে উপজেলার ব্রাহ্মনগাঁও গ্রামের শেখ মোহাম্মদ আলীর ছেলে শেখ আজিজুর রহমান সুমন একই গ্রামের ছবির মোল্লার মেয়ে সাথীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়।
সাথী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে সুযোগ বুঝে কেটে পড়ার চেষ্টা করে সুমন। কিন্তু এলাকাবাসীর তোপের মুখে তা সম্ভব হয়নি। তৎকালীন কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আতাউর রহমান ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রামীন সালিশের মাধ্যমে তাদের বিয়ে দেয়।
বিয়ের ৩ মাসের মধ্যেই ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় একটি হাসপাতালে জন্ম হয় শিমলার। ওই সময় সুমন হাসপাতালে তার স্ত্রী ও নবজাতককে রেখে পালিয়ে যায়। কিন্তু সাথীর দরিদ্র পরিবারের পক্ষে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা সম্ভব না হওয়া থানার ওসি তা পরিশোধ করেন এবং নগদ কিছু অর্থ ও শিশু খাদ্য দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এরপর থেকে একটি দিনের জন্যও সুমন তার স্ত্রী-কন্যার খোঁজখবর নেয়নি।
শিমলার নানা ছবির মোল্লা ও নানী সালেহা বেগম জানান, ওই সময় অসুস্থ্য মেয়ে ও নবজাতককে নিয়ে তাদের বাড়িতে ফেরার পরও সুমন তার বাড়ি না নেয়ার কারণে স্থানীয়রা নানা কুৎসা রটায়। প্রাণনাশের হুমকিও দেয় সুমনের সন্ত্রাসী বাহিনী।
অবশেষে লজ্জা ও ভয়ে তারা নিজের বাড়ি ছেড়ে দীর্ঘ ১৪ বছর গাজীপুরের টঙ্গীতে ছিলেন। পরিবারের খরচ ও বাড়ি ভাড়া দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে ১ বছর আগে নাতনিকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন তারা। বাড়ি আসার পর পুনরায় শুরু হয়েছে সুমনের হুমকি-ধামকি।
শিমলা স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। এবার জেডিসি পরীক্ষা দিবে। এরইমধ্যে শিমলার মা সাথীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। এখন শিমলাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা নানা-নানী। তারা চায় সুমন তার মেয়েকে পিতৃপরিচয় দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাক।
এ ব্যাপারে কথা হয় শিমলার বাবা শেখ আজিজুর রহমান সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাকে পিতৃপরিচয় দেইনি কে বলেছে? জন্ম নিবন্ধনে তো পিতা হিসেবে আমার নামই লিখছে। শুধু জন্ম নিবন্ধনে বাবার নাম লিখলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
তৎকালীন ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান আকন্দ ফারুক জানান, ওই সময় স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে গ্রাম্য সালিশে তৎকালীন ওসি ও স্থানীয় প্রায় হাজার খানেক এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে সুমন বিয়ে করে সাথীকে। কিন্তু এখন সে অস্বীকার করছে যা খুব দুঃখজনক।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd