সিলেট ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:০৮ অপরাহ্ণ, মে ২, ২০২০
বিশেষ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে ছাতক রেলওয়ের গুরুত্বপুর্ন দায়িত্বে রয়েছেন ৫ম শ্রেণী পাশ শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন মোঃ আব্দুল নুর নামের কর্মকর্তা। নিয়ম বহিভুত কার্যকলাপ ও নিম্ন শ্রেনীর কর্মচারীদের সাথে অশালিন আচরন, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, অবৈধভাবে সরকারী বাসা বাড়ি দোকান কোটা বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে ও ভোলাগঞ্জে কোয়ারীর পাথর বিক্রি করে কোটিপতি হয়েছেন। নিয়মিত অফিস না করে বেতন ভাতা নেওয়া সহ তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে ।
জানা যায়, ছাতক রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী কার্য্যালয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে ও সিএসপির ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে রয়েছেন এক সময়ের ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী খালাসী ৫ম শ্রেনী পাশ আব্দুল নূর নামের এক ব্যাক্তি। প্রায় ৩০ বছর আগে খালাসী পদে ছাতক রেলওয়েতে চাকুরী গ্রহন করেন। চাকুরী গ্রহনের পর রেলওয়ের স্লীপার ,লোহা, পাথর চুরি করে বিক্রির অপরাধে একাদিক বার রেলওয়ের আইনে শান্থি দেওয়া হলেও নিজেকে বদলাতে পারেননি আব্দুল নুর। পরে বাধ্য হয়ে প্রায় ৮ বছর পূর্বে ঢাকায় বদলী করা হয়। সেখান থেকে এক বছরের মধ্যে আবার বদলী হয়ে ছাতকে আসেন। জড়িয়ে পড়েন অনিয়ম-দূর্র্ণীতিতে রেলওয়ের পাথর চুরিসহ নানান অভিযোগে আব্দুল নুরকে জামালপুরে বদলী করেন তৎ কালীন সময়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রমজান আলী। পরবর্তীতে জমালপুর থেকে পদোন্নতি নিয়ে সিলেটে ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ক সুপারভাইজার হিসেবে যোগদান করেন। যোগ দেন আওয়ামীগের রাজনীতির সাথে, সিলেট রেলওয়ে শ্রমীকলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ২০১৮সালে বড় কর্তাদের ম্যানেজ করে ভারপ্রাপ্ত এসএই/কার্য্য/বিআর ভোলাগঞ্জ হিসাবে ছাতকে আবারো বদলী হয়ে আসেন।
উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী কার্য্যালয় আব্দুল নুর ও ছেলে মাহবুবুল আলম খালাসী ও সুবর্না আক্তার খালাসী একই দপ্তরে পরিবাবের ৩ সদস্য হওয়ায় তাদের ক্ষমতার কাছে জিম্মি ছাতকের রেল বিভাগ। আব্দুল নুরের ছেলে মাহবুবুর রহমান, খালাসী কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে সরকারী চাকুরীর নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে ব্যস্ত থাকেন মাহবুব এন্টারপ্রাইজ ও সিদ্দেক ট্রেডাস নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আর মেয়ে সুবর্না আক্তার খালাসী, লেখা পড়া করেন সিলেটের একটি কলেজে। সরকারী চাকুরী করে এক সাথে ব্যবসা ও কলেজ ভার্সিটিতে লেখা পড়া করা যায় কি না এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া মিলছেনা। প্রায় ৩০বছর আগে ৪র্থ শ্রেণী পদে যোগদান করা খালাসী আব্দুল নুরকে ২০১৯ইং সালে দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী পদের গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব। কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার পর ব্যাপোরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। নিজের ছেলে-মেয়েকে সরকারী ডিউটি না করিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাসে পর মাস উপস্থিত দেখিয়ে উত্তোলন করেন বেতন ভাতা।
আরো জানা যায়, তার অধীনস্থ আবু বক্কর চকিদার গত ১৬/০৩/২০২০ইং সালের ৫দিনের নৈমিত্তিক ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে আজ পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থি থাকলেও তাকে পুরো মাসের বেতন ভাতা দিয়ে দেন। যেখানে বিশ^ব্যপী মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষনা করেছেন। সেখানে সরকারী বর্হিভূত কাজ করতে অনিহা প্রকাশ করায় ব্যক্তিগত আক্রোশে ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে মোঃ তাজুল ইসলাম খালাসী কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার পরও গত ১০/০৪/২০২০ইং হতে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে না দিয়ে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আব্দুল নুরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তাজুল ইসলাম।
এক সুত্র জানায়, এখানে আব্দুল নুরের ছেলে মাহবুুবর আলম-খালসী, মেয়ে স্ববর্না আক্তার-খালাসী, সুরঞ্জন পুরকায়স্থ, প্রধান সহাকারী ও আবুবক্কর সিদ্দিক, নিরাপত্তা প্রহরী, বাবুল মিয়া-টিএলআর, ইউচুফ আলী ক্রাশার মেশিন ড্রাইভার, দেলোয়ার হোসেন লাইনম্যানকে নিয়ে তাদের রয়েছে বিশাল একটি সিন্ডিকেট। ছাতক রেলওয়ের বাসা বাড়ি, দোকান, বিভিন্ন স্থাপনা, নদীর পারের ড্রাম্পিং সাইট বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে ও ভোলাগঞ্জের পাথর বিক্রি করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করতেছেন বলে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আব্দুল নুর ছাতকে যোগদান করা পর থেকে সে নিজেকে ৩ থানার ওসি বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন অভিযোগ রয়েছে। অথাৎ সিএসপি, বিআর, ভোলাগঞ্জের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। আবার কখনো নিজেকে সিলেট শ্রমিকলীগের সহ সভাপতি, ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি সাহেবের নাম ভাঙ্গিয়ে দূর্নীতি করে রাতারাতি হয়েছেন কোটিপতি।
অসংখ্য অনিয়ম-দূর্ণীতির নানা অভিযোগ থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে অইনগত কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোব বিরাজ করছে। ইতিপূর্বে প্রধান সহকারী ও পিতা-পুত্র-কন্যার অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগে প্রধান প্রকৌশলী সিআরবি চট্টগ্রাম দপ্তরে ৩সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আব্দুল নুর বলেন, ১৯৮৬ সালে আমার চাকুরী হয়। এসময় রেলের চাকুরীতে খালাসী পদে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হতোনা। এমনিতেই চাকুরী হয়ে যেতো। আমি খালাসী থেকে কার্পেন্টার, কার্পেন্টার থেকে ওয়ার্ক সুপারভাইজার পদে প্রমোশন পেয়ে দক্ষতার ভিত্তিতে উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছি। তিনি ছাতক বাঘবাডী় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাত্র ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। এবং কখনও কোন হাইস্কুলে লেখাপড়া করেননি বলে স্বীকার করেন।
বেশ কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, রেলওয়ে বিভাগ কেন সরকারী চাকুরীতে কোন বিভাগেই একজন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ২য় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনা। রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদটি ২য় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদবী। এ পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কোন ৫ম শ্রেণি পাশের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীকে পদায়ন করা সম্পূর্ণ বেআইনী ও বিধি বহির্ভূত বটে। এছাড়া এই মুহর্তে এখানে কোন নির্বাহী প্রকৌশলীও দায়িতে নেই। এ সুযোগে ছাতক শিল্পনগরীতে অবস্থিত রেলওয়েরর ৩টি অফিসে বিধি বহির্ভত আরো অনেক অনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে় সিআরবি চট্রগ্র্রামের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সুবক্তগীন বলেন, একজন ৫ম শ্রেণি পাশের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে দায়িত্ব পালন করতে পারে কিনা তা আমি কাগজপত্র দেখে পরে জানাবো।
ছাতক রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে একটি গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব থেকে আব্দুল নূরকে অবিলম্বে অব্যাহতি দিয়ে এ পদে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান কর্মকর্তা নিয়োগের দাবী সকল নিরীহ কর্মচারীদের। প্রয়োজনীয় জনবল ও রক্ষণাবেক্ষনের ব্যবস্থা এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত লুটেরা-অপরাধীদের চিহ্নিত করে সরকারী সম্পদ রক্ষা ও উদ্ধার এবং কংক্রিট স্লিপার কারখানা দ্রুত চালুর দাবী জানান স্থানীয়রা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd