সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন চিকিৎসা জগতের সূর্যসন্তান ডা: মঈন উদ্দিন

প্রকাশিত: ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২০

সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন চিকিৎসা জগতের সূর্যসন্তান ডা: মঈন উদ্দিন

Manual3 Ad Code

ব্যারিস্টার নাজির আহমদ : সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চিকিৎসা জগতের সূর্যসন্তান সিলেট তথা গোটা বাংলাদেশের গর্ব ও অহংকার ডা: মঈন উদ্দিন তার মহান প্রভূর দরবারে চলে গেলেন। ইন্নালি…………… রাজিউন। মহান আল্লাহপাক যেন তাঁর হাবিবের (সা:) সহিহ হাদিসের আলোকে তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান করে নেন। আমিন।

ডা: মঈন উদ্দিনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। নব্বই দশকের গোড়া থেকে দেশের বাহিরে অবস্থান করছি। ছাত্রজীবনে তার সাথে কখনও সাক্ষাত হয়েছে বলে স্মরন করতে পারছি না। তার জীবনী পড়ে এখন দেখি তিনি আমাদের সমসাময়িক। তিনি সিলেট ডিগ্রী কলেজে (পরবর্তীতে যা সিলেট এমসি কলেজ হয়) সাইন্স বিভাগে পড়েছেন আর আমি সিলেট এমসি কলেজে (পরবর্তীতে যা সিলেট সরকারী কলেজ হয়) মানবিক বিভাগে পড়েছি। তার শ্বশুড় সাহেব ও আমার শ্বশুর সাহেব সিলেটের জালালাবাদ আবাসিক এলাকায় পারস্পরিক প্রতিবেশী ছিলেন, ছিলেন একই মসজিদের নিয়মিত নামাজি। সে হিসেবে তার স্ত্রী ও আমার স্ত্রী ছোটবেলা থেকে পরিচিত ও অনেকটা সমবয়সী।

Manual6 Ad Code

ডা: মঈন উদ্দিন অসাধারন মেধাবী ছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসি’তে মেধা তালিকায় স্থান ছিল। দেশের সেরা মেডিক্যাল কলেজ তথা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে (ডিএমসি’তে) চান্স পেয়ে ডাক্তারী পড়া, বিসিএস’এ চান্স পেয়ে প্রর্যায়ক্রমে দেশের অন্যতম সেরা আরেকটি মেডিকেল কলেজ তথা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক হওয়া ও পরবর্তীতে এফসিপিএস (যারা এফসিপিএস করেছেন তারা জানেন বাংলাদেশের কনটেক্সটে কত কঠিন ও প্রতিযোগিতামূলক এই কোর্স) ও এমডি কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করা চাট্টিখানি কথা নয়। তার স্ত্রীও প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন বলে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে শুনেছি। তারা উভয়ই ডাক্তার।

ডা: মঈন উদ্দিন বাংলাদেশের তাবৎ চিকিৎসকদের ও অনাগত ডাক্তারদের রোল মডেল। তিনি ডাক্তারদের মর্যাদা ও পার্সেপশনকে (ভাবমূর্তিকে) এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সোসাল মিডিয়ায় ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তার সম্পর্কে লেখা ও কলাম পড়ে চোখের পানি রাখতে পারিনি। কত জনদরদী, গরীবের বন্ধু, খাঁটি দেশপ্রেমিক ও পরোপকারী মানুষ ও ডাক্তার ছিলেন তিনি। এমন জীবন ও মৃত্যু কয়জন পায়! গোটা সিলেট তার জন্য কাঁদছে।

ঢাকা মেডিক্যালের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্র এবং বর্তমানে ইউকে’তে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ডা: আলী জাহান ইংল্যান্ডে আধুনিক সুবিধা ও চমৎকার ক্যারিয়ারের প্রসপেক্ট আছে বিধায় ডা: মঈন উদ্দিনকে ইংল্যান্ডে চলে আসার জন্য বললে এক সময় ডা: মঈন উদ্দিন তাকে বলেই ফেললেন “যে দেশ এবং মাটি আমাকে এ পর্যন্ত আসতে দুহাত উজাড় করে সাহায্য করেছে, এই দেশ এবং মাটিকে ছেড়ে আসছে খুব কষ্ট হয় আলী জাহান ভাই”। চিন্তা করতে পারেন তার দেশ প্রেমের গভীরতা!

Manual6 Ad Code

এমন অসাধারন মেধাবী ও খাঁটি দেশপ্রেমিক ডাক্তারের গুরুত্ব অনুধাবন করার মত কি কেউ ছিল না সিলেটে বা বাংলাদেশে? যদি থাকতো তবে নিজে ডাক্তার হয়েও তার নিজের কর্মস্থল তথা হাসপাতালে জীবন বাচানোর জন্য কেন হাসপাতালের ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ ব্যবহার করতে পারলেন না? শুধু তাই নয়, একটি স্বনামধন্য সরকারী হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হয়েও মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকা যাবার জন্য আইসিইউ সম্পন্ন এয়ার এম্বুলেন্সেটি পর্যন্ত পাননি। এমন কি মারা যাবার পর তার লাশটিওতো এম্বুলেন্সে সিলেটে আনা হয়নি। অথচ কদিন আগে ডা: মঈন উদ্দিনের চেয়ে অনেক নীচের গ্রেডের একজন আহত সরকারী কর্মকর্তা এসি (ল্যান্ড)’কে চিকিৎসার জন্য জরুরীভিত্তিতে হেলিকপ্টারে করে অন্য এক জেলা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার জন্য। অথচ ডা: মঈন উদ্দিনের বেলায় এতটুকু জুটলোনা। আফসুস্!

Manual7 Ad Code

জ্ঞান তাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলতেন “যে দেশে জ্ঞানীর কদর নেই সেই দেশে জ্ঞানীর জন্ম হয় না”। তাঁর সাথে সুর মিলিয়ে বলবো “যে দেশে ডা: মঈন উদ্দিনের মত ডাক্তারের কদর নেই সেই দেশে দেশপ্রেমিক ও মানবদরদী ডাক্তার বেশী জন্মায় না। বরং বেশী জন্মায় কসাইয়ের মতো ডাক্তার যারা শুধুই চিনে টাকা আর টাকা”!

Manual5 Ad Code

লেখক: বিশিষ্ট আইনজীবী, ডেপুটি স্পিকার লন্ডন বারা অব নিউহ্যাম

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..