সিলেট ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৫৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : এই শুনছ; তোমার মেয়ে নিয়ে এখন কি করব। তোমার মেয়ে একা একা খায় না তুমি ছাড়া। অথচ এই ডাক্তাররা কোনো ট্রিটমেন্ট দিল না। পুলিশ এত সেবা দিচ্ছে অথচ পুলিশ পরিবার আজ সেবা পাচ্ছে না- আজ বৃহস্পতিবার যশোর জেনারেল হাসপাতালে মারা যাওয়া স্বামীর লাশের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে এ অভিযোগ করলেন নড়াইলের নড়াগাতি থানার ওসি রোকসানা খাতুন। যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলায় তার স্বামী রেলকর্মী আহসানুল ইসলামের (৪৮) মৃত্যুর অভিযোগ করেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমি এত লোকের সেবা করে বেড়াচ্ছি। অথচ শুধু ডাক্তারের অবহেলায় আমার স্বামী মারা গেল। আমার সন্তানরা এতিম হলো।
জরুরি রোগীর অক্সিজেন না দেওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা কিছুই করেনি। তারা ওয়ার্ডে রেখে চলে গেছে। না কোনো ডাক্তার না কোনো আয়া। আমার দুনিয়াডা অন্ধকার করে দিল ডাক্তারদের অবহেলা।
তিনি আরো বলেন, আমার ছোট ছোট দুটো বাচ্চা। সে হাসাপাতালে আসতে ভয় পায়। বলছিল, সবাই আমাকে করোনা রোগী ভাববে। আমি বলেছি করোনা রোগী ভাবে ভাবুক তুমি যাও। কয়, ডাক্তাররা আমারে কোথায় ফেলায় রাখবেনে। আমি কই, না ডাক্তাররা ফেলায় রাখবে না। কয়. তুমি ফোন করো ফোন করো। আমি বলে দিছি, তারপরও কোনো ডাক্তার আসেনি। একটি ইমার্জেন্সি রোগীকে আইসিইউতে না নিয়ে কিভাবে ওয়ার্ডে ফেলায় রাখে। ডাক্তার আইছে পরে। এসে দেখাচ্ছে যে, আমরা অক্সিজেন দিছি এ দিছি সে দিছি। কিচ্ছু না। কিভাবে একটা মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মারে। ও আমাকে ফোন করে বলেছে আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমারে বেডে রেখে দেছে। আমি বললাম, আইসিইউতে দিতে বলো। বলতেছে ডাক্তার নাই ডাক্তার নাই।
নড়াইলের নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকসানা খাতুন জানান, তার স্বামী আহসানুল ইসলাম বাংলাদেশে রেলওয়েতে বেনাপোলে পি ম্যান হিসেবে কর্মরত। তিনি যশোর কোতোয়ালি থানার স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন। আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হঠাৎ করে তার বুকে ব্যথা ও দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এ সময় তিনি যশোর কোতোয়ালি থানার ওসিকে ফোন দিয়ে তার স্বামীকে হাসপাতালে পাঠান। যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ তাকে ভর্তি নিয়ে করোনারি কেয়ার ইউনিটে পাঠায়। সে সময় দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক তার ওষুধ লিখে পায়ের কাছে স্লিপ রেখে চলে যান। শ্বাসকষ্ট হলেও তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়নি।
তিনি আরো জানান, পরে ফোন দিলে তার স্বামী ফোন রিসিভ করেনি। পাশের বেডের রোগীর স্বজনরা ফোন ধরে চিকিৎসার অবহেলার কথা জানান এবং বলেন রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। ওষুধ আনতে হবে। এ সময় পাশের বেডের রোগীর স্বজনদের তিনি ওষুধ কিনে আনতেও অনুরোধ করেন। পরে তিনি স্বামীর মৃত্যুর খবর পান।
তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কার্ডিয়াক অ্যাটাকে মারা যাওয়া ওই রোগীর চিকিৎসায় কোনো অবহেলা করা হয়নি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দীলিপ কুমার রায় বলেন, করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তির পর চিকিৎসক তাকে দেখে চিকিৎসাপত্র দেন। হাসপাতাল থেকে যা সরবরাহ করার তা রোগীকে দেওয়া হয়। কিন্তু বাইরে থেকে ওষুধ আনতে হবে রোগীর পাশে তার কোনো লোক না থাকায় সেটা আনা হয়নি। তা ছাড়া রোগী মাত্র ১০ মিনিট সময় দিয়েছে। ফলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
অক্সিজেন কেন দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নে হাসপাতালের তিনি বলেন, অক্সিজেন দেওয়ার দায়িত্ব নার্সের। কেন তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়নি তা এখনও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে জানাননি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd