সিলেটে আবুল খানকে ‘মাসোহারা’ দিয়েই চলছে হাজার হাজার অবৈধ সিএনজি

প্রকাশিত: ২:১৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০২০

সিলেটে আবুল খানকে ‘মাসোহারা’ দিয়েই চলছে হাজার হাজার অবৈধ সিএনজি

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার :: কোন নিবন্ধন নেই। শুধু পেছনে লেখা রয়েছে আবেদিত বা অনটেস্ট। এইটুকু লিখেই সিলেটে বছরের পর বছর ধরে চলছে সহস্রাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা। নতুন সড়ক পরিবহন আইন হচ্ছে ঠিকই, তবে এই আইন শুধু মোটরসাইকেল চালকদের জন্য ব্যবহার করছে প্রশাসন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এয়ারপোর্ট রোর্ডে কোন অবৈধ সিএনজি আটক করতে দেখা যায়নি। পুলিশকে ম্যানেজ করে টোকেন বিক্রির বিনিময় মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন আম্বরখানা ও সালুটিকর শাখার সভাপতি মো. আবুল হোসেন খান।

এতে লাভবান হচ্ছেন কিছু শ্রমিক নেতা আর পুলিশের কিছু লোক। মাস শেষে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রাজপথে এগুলো চলার বৈধতা দিয়েছেন তারা। এছাড়া এসব অটোরিকশার চালকদেরও নেই কোন লাইসেন্স। সমিতির সদস্য হলেই গাড়ি চালানো যায়, এতে তাদের কোন ভোগান্তি পোহাতে হয়না। সিলেট নগরী থেকে শুরু করে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট, সালুটিকর, বিছনাকান্দি সহ বেশ কিছু এলাকায় এভাবেই চলছে এসব অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা।

Manual5 Ad Code

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সিলেট অফিস সূত্রে জানা যায়, সিলেটে বৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে ২১ হাজার ২৩২ টি। এরমধ্যে প্রায় ৫ বছর আগে দেড়হাজারের উপরে সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদনের কোন সুরাহাও হয়নি। এছাড়া এর বাইরে, কোনও আবেদন না করেই আরও দুই সহস্রাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত একটি সংগঠনের শাখা রয়েছে আম্বরখানা ও সালুটিকরে। এই শাখার অধীনে অবৈধ অটোরিকশা রয়েছে হাজারখানেক। প্রতিটি গাড়ির নম্বর প্লেটে লেখা রয়েছে- ‘সিলেট-থ-১২-আবেদিত’। প্রতিটি অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে আদায় করেন শাখার সভাপতি মো. আবুল হোসেন খান এর নেতৃত্বে চলাচল করছে এসব অবৈধ অটোরিকশা। ওই টোকেনে চলা যায় এক মাস। প্রতি মাসে টোকেন না নিলে সমস্যায় পড়তে হয় চালকদের।

তাদের স্বাক্ষরিত টোকেন দিয়েই বছরের পর চলছে এখানকার অবৈধ ‘সিলেট-থ-১২-আবেদিত’ অটোরিকশাগুলো। নিবন্ধনহীন সহস্রাধিক সিএনজি অটোরিকশা বাবদ প্রতিমাসে উত্তোলন করা হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা।

চালকরা জানান, উত্তোলিত টাকার ভাগ পান সমিতির নেতা, এয়ারপোর্ট থানা, আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ি, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ।

চালকরা জানান, মাসোহারা টোকেন দিয়েই রাস্তায় চলছে এসব গাড়ি। আর এই টোকেন পুলিশ টোকেন হিসাবে পরিচিত। প্রশাসনের যথাযথ তদারকির অভাব আর কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার অসাধুতার কারণে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না অনটেস্ট সিএনজি অটোরিকশা বাণিজ্য।

Manual8 Ad Code

স্থানীয় কয়েকজন চালকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ওই রোডে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশার চালকদের নেই কোন লাইসেন্স। কারো কারো লাইসেন্স রয়েছে। সেটি জাল বলেও জানান অনেক চালক।

মজুমদারী এলাকার এক চালক জানান, তার গাড়ির কোন রেজিস্টেশন নেই। তার যে লাইসেন্স সেটিও জাল।
জাল লাইসেন্স কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই চালক জানান, ওই রোডে চলাচল করতে কোন লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়না। এছাড়া বিআরটিএ অফিসে গেলে তাদের ঘিরে ধরে দালালরা। লেখাপড়া কম জানার কারণে তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় বেশী টাকা। একটি লাইসেন্স করতে দালালরা ১০ হাজার টাকা নেয়।

সিলেট সালুটিকর রোডে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশার এক মালিক জানান, তার দুটি সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। যেগুলোর কোন রেজিস্ট্রেশন নেই। সিলেট বিআরটিএ অফিসে আবেদন করেছেন বছর চারেক আগে। এখনো তার আবেদনের কোন সুরাহা হয়নি। প্রতিমাসে ১৫০০ টাকার বিনিময়ে রেজিস্টেশন ছাড়াই তার গাড়ি চলছে। অনেক সময় পুলিশ গাড়ি আটক করলেও টোকেন দেখামাত্রই ছেড়ে দেয়।

Manual7 Ad Code

তিনি আরও জানান, ওই রোডে চলাচলকারী অনটেস্ট সিএনজি অটোরিকশার মালিকরা পুলিশ টোকেন দিয়ে রাস্তায় এসব গাড়ি চালাচ্ছে। আবার অনেক সিএনজি অটোরিকশার মালিক এ ধরণের ঝুঁকি না নিয়ে অপেক্ষার পর কম দামে গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। তার দুটি গাড়ির মধ্যে এধরনের একটি গাড়ি অনেক কমদামে কেনেন বলে জানান।

অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন আম্বরখানা সালুটিকর শাখার অফিস সূত্রে জানা যায়, এই শাখার অধীনে হাজার হাজার আবেদিত অটোরিকশা রয়েছে। এই শাখার আওতায় রয়েছে আম্বরখানা স্ট্যান্ড, এয়ারপোর্ট স্ট্যান্ড, কোম্পানীগঞ্জ স্ট্যান্ড, গোয়াইনঘাট স্ট্যান্ড, সালুটিকর স্ট্যান্ড, ভোলাগঞ্জ স্ট্যান্ড, পারুয়া স্ট্যান্ড, দয়ারবাজার রাধানগর স্ট্যান্ড। এ সকল এলাকার সকল পুলিশ ফাঁড়ি ও থানার সঙ্গে মৌখিক চুক্তি রয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের। প্রতিটি চেকপোস্টে তাদের স্বাক্ষরিত টোকেন দেখালেই অবৈধ অটোরিকশা ছেড়ে দেয় পুলিশ। কয়েক বছর ধরে এভাবেই ‘আবেদিত’ লেখা গাড়িগুলো চলছে।

সিলেট-থ-১২-আবেদিত নম্বর প্লেটধারী গাড়ির চালক কদম আলী বলেন, তার গাড়ির কোনও কাগজপত্র নেই। প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা দিয়ে পুলিশ টোকেনের মাধ্যমে গাড়ি চালাচ্ছি।

আসছে আগামী পর্বে হরিপুরের নুরুলে টোকেন বাণিজ্য নিয়ে—-

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..