সিলেট ৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ২:২১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত শামীমা নূর পাপিয়াকে আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের মধ্যে ক্যাসিনো কারবারি সেলিম প্রধানসহ অন্তত ১১ জনের নাম পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রিমান্ডে পাপিয়া এসব তথ্য দিয়েছেন জানিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশের একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে বলেছে, পাপিয়ার সঙ্গে ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তারকৃত সেলিম প্রধান, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ আরো অনেকের যোগাযোগ ছিল, যাঁদের বেশির ভাগ যুবলীগের সাবেক শীর্ষ নেতাকর্মী।
পুলিশ সূত্র বলছে, নরসিংদীতেও পাপিয়া সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তাঁর অপকর্মের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। নরসিংদীর সাধারণ মানুষ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে তাঁর উচ্ছৃঙ্খল জীবনের অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে পাপিয়া চাকরি দেওয়ার নামে অনেক বেকার যুবকের কাছ থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া সিএনজি পাম্প স্টেশনের অনুমতি পাইয়ে দেওয়া, কারখানায় গ্যাসলাইনের সংযোগ দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা।
মামলার তদারক কর্মকর্তা, বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কায়কোবাদ কাজী বলেন, ‘রিমান্ডে তার উচ্ছৃঙ্খল জীবন, আচরণ, অবৈধ অর্থ, যোগাযোগ, নরসিংদীতে তার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য জানায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে পাপিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় র্যাব তদন্ত করতে চায় জানিয়ে র্যাব-১-এর পরিচালক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাপিয়ার অপকর্মের শেষ নাই। প্রাথমিক তদন্তে র্যাব তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। এখন মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেতে চায় র্যাব। পাপিয়াসহ গ্রেপ্তারকৃত চারজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে পুলিশ মামলাগুলোর তদন্ত করছে। র্যাব ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে থানা পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি পাপিয়ার অপরাধ জগতের খোঁজ নিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, পাপিয়ার অপরাধ জগতের কাহিনি অনেক লম্বা। সে ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের একটি পার্ট ছিল। যেকোনো কারণে এত দিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গেও পাপিয়ার যোগাযোগ ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য মিলছে। এ ছাড়া পাপিয়াসহ গ্রেপ্তারকৃতদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নেমে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এরই মধ্যে কিছু তথ্য পেয়েছে।
এখন পর্যন্ত তাঁর কী পরিমাণ অর্থের তথ্য পাওয়া গেছে জানতে চাইলে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই এ বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বলা যাবে না। যেকোনো দুর্নীতির তথ্যের সঠিকতা প্রমাণ করতে কিছুটা সময় লাগে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এরই মধ্যে জেনেছেন, পাপিয়ার সঙ্গে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় সাবেক অনেক নেতার যোগাযোগ ছিল, যাঁদের অনেকেই এখন কারাগারে। আবার যাঁরা গ্রেপ্তার হননি এমন অনেক নেতাও পাপিয়াকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। পাপিয়ার কাছ থেকে পাওয়া এসব তথ্যের সত্যতা জানতে ওই সব নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পাপিয়া আর সেলিম প্রধান একই পথের পথিক। তাঁরা দুজনই তরুণীদের জিম্মি করে দেশ-বিদেশে নানা অনৈতিক কাজে জড়াতেন। পাপিয়া একসময় সেলিম প্রধানের সহযোগিতায় বিদেশে যাতায়াত করতেন। সেলিম প্রধানের গুলশানের বাসায় তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। সেই সঙ্গে তাঁরা ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন।
এদিকে পাপিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরাও জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। র্যাব সূত্র জানিয়েছে, পাপিয়ার পিএ (ব্যক্তিগত সহকারী) শেখ তায়্যিবা এবং পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের পিএ সাব্বির আহমেদ র্যাবকে জানিয়েছেন, ২০১৮-১৯ সালে ফার্মগেট এলাকায় ক্যাসিনোর টাকায় দুটি ফ্ল্যাট কেনেন পাপিয়া। একেকটি ফ্ল্যাটের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। তাঁরা হুন্ডির মাধ্যমেও অনেক টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসংক্রান্ত আইনে তেজগাঁও থানায় এবং জাল মুদ্রা রাখার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় পাপিয়া ও সুমনের ১৫ দিনের রিমান্ড এবং বাকি দুজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদারক কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার ওসি (তদন্ত) মো. কায়কোবাদ কাজী কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর উচ্ছৃঙ্খল জীবন, আচরণ, অবৈধ অর্থ, যোগাযোগ, নরসিংদীতে কার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে রিমান্ডে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর বাড়ি নরসিংদী থেকে তাঁদের বন্ধু ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, তাঁদের বিয়ে হয় ২০০৯ সালে। নরসিংদীতে এ দম্পতি ২০১২ সালে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। সেই হামলায় পাপিয়া গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁরা ঢাকায় চলে এলে নরসিংদী থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তবে ২০১৪ সালে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে আবার জেলায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন পাপিয়া। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দুই ধারায় বিভক্ত নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁরা নজরুল ইসলাম বলয়ে যোগ দেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য নজরুল ইসলামের পক্ষে চলতে থাকে তাঁদের ব্যাপক সমর্থনের প্রদর্শনী। কিছুদিনের মধ্যে তাঁরা নরসিংদীতে গড়ে তোলেন ক্যাডার বাহিনী কিউঅ্যান্ডসি।
রাশিয়া থেকে এনেছেন মডেল, থাইল্যান্ডে দুই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রভাবশালীদের কথিত মনোরঞ্জনের জন্য রাশিয়া থেকে কয়েকজন মডেল তরুণী নিয়ে আসেন পাপিয়া। এদের তিনি ‘বিদেশি কালেকশন’ বলে অভিহিত করতেন। থাইল্যান্ডেও ছিল তাঁর এমন ‘বিদেশি কালেকশন’। থাইল্যান্ডে আর্থিক লেনদেনের জন্য তাঁর দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সূত্র মতে, অভিজাত হোটেলে রংমহল ছাড়াও পাপিয়ার আলাদা মাদক ও জাল টাকার সিন্ডিকেট ছিল। এসব কারবারে তিনি গত কয়েক বছরে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd