ঘুমন্ত স্বামীকে গলা কেটে হত্যার পর লাশের সঙ্গেই তিন দিন কাটান সামিরা

প্রকাশিত: ২:৩২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০

ঘুমন্ত স্বামীকে গলা কেটে হত্যার পর লাশের সঙ্গেই তিন দিন কাটান সামিরা

Manual6 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ঘুমন্ত স্বামীকে গলা কেটে হত্যার পর লাশ এসিডে ঝলসে দেন তিনি। এরপর ঝলসানো লাশটি তোশক দিয়ে পেঁচিয়ে বস্তায় ভরে বিছানায় চাদর মুড়িয়ে রেখেছিলেন। গুম করতে না পেরে ফ্ল্যাটের ওই লাশের সঙ্গেই তিন দিন কাটান সামিরা। পরে স্বামীর লাশ রেখেই ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান তিনি। লাশে পচন ধরায় দুর্গন্ধে আট দিন পর টের পান অন্য ফ্ল্যাটের ভাড়টিয়ারা। খবর পেয়ে পুলিশ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে বিকৃত লাশটি উদ্ধার করে। মর্মন্তুদ এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার প্রশিকা মোড়ের তিনতলা একটি বাড়ির দোতলার একটি ফ্ল্যাটে।

Manual3 Ad Code

ফ্ল্যাটে থাকা ব্যক্তির স্বজনদের দাবি ছিল, লাশটি আবদুর রহমানের (৪৫)। আবদুর রহমান পাশের গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর (গোতারবাজার) গ্রামের নছিম উদ্দিনের ছেলে। আবদুর রহমান তাঁর চতুর্থ স্ত্রীকে নিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। সামিরা আক্তার (২৬) পাশের চকপাড়া গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে। গত সোমবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে সামিরাকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব সদস্যরা। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় সামিরার বাবা আলী হোসেনকেও (৫৫)।

পরে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে সামিরা দাবি করেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁর স্বামীর এক ব্যাবসায়িক অংশীদারকে দিয়ে জোর করে যৌনকাজে বাধ্য করেন আবদুর রহমান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।

র‌্যাব-১-এর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সামিরা। সামিরা জানিয়েছেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৩টার দিকে ঘুমন্ত স্বামীকে গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। পরে এসিডে ঝলসে দেওয়া হয় লাশ। বিকৃত লাশটি তোশক দিয়ে পেঁচিয়ে বস্তায় ভরেন তিনি। এরপর বস্তাটিও বিছানার চাদর দিয়ে মুড়িয়ে রাখেন। এরপর লাশ গুমের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহায়তায় তিনি পালিয়ে যান। প্রথমে পাশের কালিয়াকৈরের ফুলবাড়ী এলাকায় তাঁর বান্ধবীর বাসায় দুই দিন আত্মগোপনে থাকার পর সেখান থেকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁয় তাঁর মামার বাড়ি চলে যান সামিরা। নওগাঁ থেকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় তাঁর চাচার বাসায় আত্মগোপন করেন।

Manual8 Ad Code

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সামিরা আরো জানিয়েছেন, আবদুর রহমান ও তাঁর বাড়ি একই উপজেলায় হওয়ায় তাঁরা পূর্বপরিচিত ছিলেন। ২০১৬ সালে আবদুর রহমান দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে থাকতেন। পূর্বপরিচিত হওয়ায় সামিরা ওই বাসায় থেকে টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পরীক্ষাও দেন। ওই সময় অনেকবার বিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান আবদুর রহমান। একপর্যায়ে কৌশলে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় তাঁকে। পরে আবদুর রহমান তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন ও তা মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াসহ হত্যার ভয় দেখিয়ে আবদুর রহমান ধর্ষণ করতেন তাঁকে। এর পরও ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন আবদুর রহমান। এতে সামিরার প্রথম স্বামী তাঁকে তালাক দেন। পরে শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকায় ওষুধের দোকান দেন সামিরা। ২০১৮ সালে আবদুর রহমান বিয়ে করেন তাঁকে। বিয়ের পর শ্রীপুর পৌর এলাকার প্রশিকা মোড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করেন তাঁরা।

Manual1 Ad Code

সামিরা আক্তার র‌্যাবকে আরো জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী জমির দালাল ছিলেন। বিয়ের পর থেকে কখনো ব্যবসার স্বার্থে, কখনো টাকার বিনিময়ে তাঁর ব্যাবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে তাঁকে যৌনকাজে বাধ্য করতেন।

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আকতার হোসেন বলেন, ‘র‌্যাব সদস্যরা সামিরাকে আজ (গতকাল) বিকেলে থানায় হস্তান্তর করেছেন। আজ তাঁকে (সামিরা) আদালতে পাঠানো হবে।’

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2020
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

সর্বশেষ খবর

………………………..