পাপিয়াকে নিয়ে মুখ খুললেন এমপি-মেয়র, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ৬:২৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০

পাপিয়াকে নিয়ে মুখ খুললেন এমপি-মেয়র, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

Manual7 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে গ্রেপ্তার শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। স্থানীয় নেতাদের তোপের মুখে তাকে ঢাকা থেকে জেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয় বলে দাবি করেছেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, নরসিংদী সদরের এমপি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক)।

তিনি দাবি করেন, শামীমা নূর পাপিয়া লবিং করে ঢাকা থেকে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। ২০১৪ সালে সম্মেলন মঞ্চে স্থানীয় নেতাদের তোপের মুখে তৎকালীন সময় পাপিয়াকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করতে পারেনি কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ। পরে ঢাকায় গিয়ে পাপিয়াকে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সোমবার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু বলেন, ‘যুব মহিলা লীগের কাউন্সিলের সময় আমি মঞ্চে বসে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তারকে অনুরোধ করেছিলাম পাপিয়াকে কোনোভাবেই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে না আনতে। তখন নাজমা আক্তার, বর্তমান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভুইয়া আমার সঙ্গে একমত হয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল একমত না হওয়াতে আমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে আমি নরসিংদীর কাউন্সিলে কমিটি ঘোষণা করতে দেইনি। পরে ঢাকা এসে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে পাপিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেটা কী কারণে আজও আমার অজানা রয়ে গেল।’

Manual3 Ad Code

পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেখানে শামীমা নূর পাপিয়ার অপকর্মের দায় যুব মহিলা লীগ নিচ্ছে না সেখানে আওয়ামী লীগ দায় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। পাপিয়ার স্বামী মতি সুমন কার লোক, তাদের জন্ম কোথায় থেকে নরসিংদীবাসী জানে। আমি রাজনীতিতে আসার আগেই মতি সুমন ছিলেন প্রয়াত মেয়র লোকমানে হোসেনের দেহরক্ষী। মতি সুমনকে যারা তৈরি করেছে এ দায় তাদের আওয়ামী লীগের নয়। আর নরসিংদীর রাজনীতিতে সুমন ও পাপিয়া আমার অনুসারী না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার নির্বাচনী প্রচার করতে চায় পাপিয়া ও সুমন। আমি বলেছি আমার নির্বাচনী প্রচারণা তোমাদের করতে হবে না। কারণ তারা ভোট চাইলে আমার ভোট আরও কমবে।’

Manual3 Ad Code

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে পাপিয়ার স্বামী নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান। অনেক আগে থেকেই চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত তিনি। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলেন পাপিয়ার স্বামী। এলাকায় পাপিয়া ও তার স্বামী নরসিংদী সদর আসনের এমপি লে. কর্নেল (অব.) মো. নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতীক) বলয়ের লোক হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রুনা সভাপতি ও পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। হঠাৎ পাপিয়া এত বড় পদ পাওয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন।

Manual6 Ad Code

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তৌহিদা সরকার রুনা বলেন, পাপিয়া যদিও তার সাথে কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া পাপিয়া সাধারণ সম্পাদক হলেও দলীয় কর্মকান্ডের দুই একটা সভা ছাড়া তেমন কোন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেননি।

Manual1 Ad Code

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, পাপিয়াকে রাজনীতির মাঠে আমদানি করেছেন এমপি নজরুল ইসলাম হিরু। এর দায় দলের অন্য কেউ নেবে না।

তিনি বলেন, এটা সুমন ও পাপিয়ার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই জায়গায় রাজনৈতিক কোন বিষয় জড়িত নয়। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ে নাম ভাঙ্গিয়ে ঢাকায় কি করছে সেটা দেখার কোন সুযোগ আমাদের নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করেছে তারাই সব বের করবে। আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

নরসিংদীর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, পাপিয়াকে যুবলীগ নেত্রী বানানোর সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিরোধিতা করেছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা তা আমলে নেননি। কাউন্সিল শেষে ঢাকা থেকে পাপিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। অনেক বছর পাপিয়া ও তার স্বামীর নরসিংদীতে তেমন যাতায়াত ছিল না। বছরখানেক ধরে এলাকায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করছে। কে কারা তাদের প্রশ্রয় দিত তা এলাকায় ‘ওপেন সিক্রেট’। তবে চলাফেরা অস্বাভাবিক থাকায় সাধারণ নেতাকর্মীরা পাপিয়াকে পছন্দ করতেন না।

নরসিংদীর একাধিক রাজনৈতিক নেতা জানান, পাপিয়া যে ঢাকা অভিজাত হোটেল ভাড়া নিয়ে অসামাজিক ব্যবসা চালাতেন এটা অনেকেরই জানা ছিল। তবে প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার ওঠবস থাকায় এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছুই বলতেন না।

প্রসঙ্গত, পালিয়ে দেশত্যাগ করার সময় গত শনিবার রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শামিমা নূর পাপিয়া (২৮) এবং তার স্বামী ও অপরাধের সহযোগী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯), ও শেখ তায়্যিবাকে (২২) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

রোববার ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল রুমে পাপিয়ার আস্তানায় র‌্যাব অভিযান চালায়। অভিযান চালানো হয় ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের বিলাসবহুল ভবন ‘রওশন’স ডমিনো রিলিভো’তে এই দম্পতির দুটি ফ্ল্যাটে। এতে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল দামি বিদেশি মদ ও ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসা ও এটিএম কার্ড ১০টি উদ্ধার করা হয়েছে।

আটকের পর বহিষ্কৃত যুব মহিলালীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার অপরাধ জগতের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য বের হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দেহব্যবসা, অস্ত্র-মাদক ব্যবসা করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। ক্ষমতার শীর্ষে না থেকেও দাপট দেখিয়েছেন। মনোরঞ্জণ করে মন যুগিয়েছেন ওপরওয়ালাদের। আবার তাদেরই ব্লাকমেইলিং করে ফাঁদে ফেলেছেন। চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। প্রশ্ন ওঠেছে, একজন শামীমা নূর পাপিয়া তো একদিনে তৈরী হয়নি। একদিনে হেরেম খুলে বসেননি তিনি। লোকচক্ষুর আড়ালে বসেও করেননি এগুলো। প্রকাশ্যেই ছিলেন, দাপটেই ছিলেন তিনি। ওঠাবসাও করেছেন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের সঙ্গে।

প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে তিনি গড়ে তোলেন এই আধুনিক হেরেমখানা। তার এই হেরেমে যাতায়াত করতেন কারা? তার পেছনেই বা কে ছিলো? যাদের কারণে এতোদিন নির্বিঘ্নে এসব অপরাধ করে গেছেন তিনি। অনেকে বলছেন, শক্ত রাজনৈতিক কানেকশন তাকে বেপরোয়া করেছে। পাশাপাশি ছিলো প্রশাসনিক ব্যাকআপও।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2020
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

সর্বশেষ খবর

………………………..