‘কোনো মিডিয়া আমার কিছু করতে পারবে না’, ভুয়া চিকিৎসক রেজাউল

প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০

‘কোনো মিডিয়া আমার কিছু করতে পারবে না’, ভুয়া চিকিৎসক রেজাউল

Manual1 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ‘যেখানে ইচ্ছা কমপ্লেইন করেন, কোনো মিডিয়া বা সংস্থা আমার কিছু করতে পারবে না।’- এভাবেই হুমকি দিলেন বরিশালের ভুয়া চিকিৎসক রেজাউল করিম।
এইচএসসি ও এমবিবিএস পাসের জাল সনদ দেখিয়ে বছরের পর বছর অসহায়, হতদরিদ্র রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন এ ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার।

Manual4 Ad Code

ভূক্তভোগীরা জানান, কখনো এমবিবিএস ডাক্তার, কখনো সাংবাদিক কিংবা পত্রিকা-চ্যানেলের মালিক পরিচয় দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করছেন রেজাউল করিম।

অভিযুক্ত রেজাউল করিম বরিশালের উজিরপুরের পশ্চিম সাতলা গ্রামের আদম আলী সরদারের পুত্র।

অনুসন্ধানে দেখে গেছে, বরিশালের উজিরপুর ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার সীমান্তবর্তী পশ্চিম সাতলা গ্রামে ‘মায়ের দোয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ গড়ে তুলেছেন রেজাউল করিম। সেখানে দালালের মাধ্যমে পিরোজপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে রোগী এনে অপচিকিৎসা চালান তিনি। বিনিময়ে একেকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

আরো জানা গেছে, রেজাউল করিমের অপচিকিৎসায় মারা গেছেন নয়াকান্দি গ্রামের মতলেব হাওলাদার, ফরাজী বাড়ির শাহজাহান সরদার, রাজাপুরের নুরু হাওলাদারসহ অনেক রোগী। তাদের স্বজনরা অভিযোগ করলেও টাকা ও ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে গেছেন রেজাউল করিম।

প্রতারণার শিকার রোগীরা জানান, নিজের ক্লিনিকে রোগী ভর্তি, চিকিৎসা দেয়া ও অপারেশনের কোনো তথ্য-প্রমাণ রাখেন না রেজাউল করিম। রোগীদেরও মেডিকেল রিপোর্ট বা টাকার রশিদ দেন না। এ কারণে প্রতারণার অভিযোগ করে কেউ লাভবান হয়নি। প্রভাবশালী রেজাউল টাকা দিয়ে মামলা-অভিযোগ থেকে মুক্তি পান।

Manual4 Ad Code

সাতলা গ্রামের বেনজির বালী বলেন, রেজাউল ডাক্তারের অপচিকিৎসায় আমার বাবা লতিফ ঢালী প্রায় মরতে বসেছিলেন। পরবর্তীতে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে বাবাকে পুরোপুরি সুস্থ করা হয়েছে।

বরিশালের বানারীপাড়ার ইলুহার গ্রামের ফোরকান মিয়া জানান, তার অসুস্থ ছেলে হাসানকে রেজাউল করিমের মায়ের দোয়া ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে ১৮ হাজার টাকায় হাসানের পায়ুপথে অপারেশন করেন রেজাউল। এতে চিরতরে তার পায়ুপথের কার্যকারিতা হারিয়ে যায়। এরপর ছেলেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেন ফোরকান। সেখানে হাসানের পেট কেটে বিকল্প উপায়ে পায়ুপথ তৈরি করা হয়েছে।

ওই ঘটনার পর ভুয়া ডাক্তার রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা করেন ফোরকান মিয়া। মামলার তদন্তে রেজাউল করিমের অপচিকিৎসা ও ভুয়া সনদের প্রমাণ পান উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শওকত আলী।

Manual2 Ad Code

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেজাউল করিম ২০০৩ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা দাখিল মাদরাসা থেকে জিপিএ-৩ পেয়ে দাখিল পাস করেন। এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে জাল এইচএসসি পাসের সনদ, চার্টার অফ অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অফ ইন্দো অ্যালোপ্যাথি অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনের জাল এমবিবিএস সনদ বানিয়ে অপচিকিৎসা ব্যবসা ফেঁদে বসেন রেজাউল করিম। এছাড়া বিভিন্ন সময় সাংবাদিক ও টিভি চ্যানেল-পত্রিকার মালিক সেজেও প্রতারণা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

Manual3 Ad Code

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. একেএম শামসুদ্দিন বলেন, রেজাউল করিম এমবিবিএস ডাক্তার তো দূরের কথা, হাতুড়ে ডাক্তার হওয়ারও যোগ্য নন।

বরিশালের সিভিল সার্জন মো. মনোয়ার হোসাইন বলেন, রেজাউলের বিরুদ্ধে অসহায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই তার বড় ভাই মাওলানা রুহুল আমিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাদের উল্টো হয়রারি করেন। তবে দ্রুত তদন্ত করে ওই ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তারকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রেজাউল করিম হুমকি দিয়ে বলেন, দেশে এমন কোন সংস্থা নেই যে, রেজাউল ডাক্তারের কিছু করবে। রেজাউল ডাক্তার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়েই এখানে ক্লিনিক তৈরি করে ডাক্তারি করছে। ফলে তার বিরুদ্ধে এক মাস সংবাদ প্রকাশ করেও কোনো লাভ হবে না।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2020
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

সর্বশেষ খবর

………………………..