সিলেট ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:১৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল থেকে নানার বাড়ি যাওয়ার পথে অপহরণের পর স্থানীয় সাংবাদিকের তথ্যের ভিত্তিতে এক তরুণীকে (১৮) উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাত ১০ টার দিকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভাগ্নিকে একটি প্রাইভেট কারে তুলে দিলে কার চালকসহ আরো ৪ জন তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে গেলে রাত আনুমানিক ৪ টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলায় দেওড়াচরা চাবাগান থেকে তাঁকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে মৌলভীবাজার থানা পুলিশ।
এসময় অপহরণকারীরা পালিয়ে গেলেও তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কার যাহার নং- ঢাকা মেট্টো-গ-১৪-২৫৪৭ জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে গত ২ দিন যাবৎ গুরুতর অসুস্থ্য বাবার চিকিৎসা চলছে। উনার শয্যাপাশে অপহৃত তরুণী ও তার মামা। ক্লান্ত ভাগ্নিকে তার নানা বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ এলাকায় যেতে বলেন এবং নিজে বোন জামাইয়ের পাশে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তরুণীর মামা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাত দশটার দিকে ভাগ্নিকে একটি গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য মামা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ফটকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় একটা প্রাইভেট কার আসে। প্রাইভেট কার ভৈরব বাজারের দিকে যাবে। কারটি থামিয়ে ড্রাইভার জানায় সে লোকাল যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় গাড়ির পেছনে যাত্রী বেশে একজন লোক বসা ছিলেন। তখন ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে ভাগ্নিকে প্রাইভেট কারে তুলে দেন মামা জহিরুল ইসলাম।
ভাগ্নিকে গাড়িতে তুলে দিয়ে জহিরুল হাসপাতালে বোন জামাইয়ের কাছে ফিরে যান। তার কিছু সময় পর মেয়েটি তার নিজের নাম্বার থেকে মামাকে কল করে বলেন ‘আমাকে বাঁচাও আমাকে ড্রাইভার নামিয়ে দিচ্ছেনা, আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে’।
এ সময় মামাকে লাইনে রেখেই মেয়েটা বলতে থাকে ‘আল্লাহ’র দোহাই আমাকে নামিয়ে দেন, আমার আব্বা হাসপাতালে মারা যাবে যদি আমার কিছু হয়’ এর পরপর লাইন কেটে যায় এবং মেয়েটির নাম্বার বন্ধ হয়ে যায়।
এ ঘটনার পর রাত ১টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিক রিপন দে’র মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটি কল আসে। অপরপ্রান্ত থেকে জহিরুল ইসলাম নামে একজন কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করেন তার ভাগ্নিকে (১৮) প্রাইভেট কার ড্রাইভার অপহরণ করেছে। ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, তার বোন জামাইয়ের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিনাপুর এলাকায় এবং তার বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ এলাকায়।
ঘটনার বিবরণ জেনে ওই সাংবাদিক মধ্যরাতে বিষয়টি মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামকে জানান। তিনি বিষয়টি জেনে সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। মধ্যরাতেই অভিযান শুরু করেন। প্রায় ৩ ঘণ্টার অভিযানে রাত ৪ টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলায় দেওড়াচরা চাবাগান থেকে মেয়েটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ সময় প্রাইভেট কারটি আটক গেলেও অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম জানান, একজন সাংবাদিক (রিপন দে) এর মাধ্যমে তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করি। মেয়েটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি। প্রথমে গাড়িতে ড্রাইভারসহ ২ জন অবস্থান করলেও পরে আরও ২ জন যুক্ত হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো ধর্ষণের। হয়তো আরও বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। ঘটনাস্থলে মদের আলামত মিলেছে। পুলিশের গাড়ির উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। তবে তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার যার রেজি নং-ঢাকা মেট্টো-গ-১৪-২৫৪৭, আটক করা হয়েছে।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৪ জনের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা নং-১৪, তাং-১৭/১১/১৯খ্রিঃ ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) এর ৭/৯(৪)(খ)/৩০ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। আসামীদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd