সর্বোচ্চ সামরিক পুরস্কার ‘সেনাবাহিনী পদক’ পেলেন সিলেটের বিগ্রেডিয়ার ফাতেমা

প্রকাশিত: ৭:২৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০১৯

সর্বোচ্চ সামরিক পুরস্কার ‘সেনাবাহিনী পদক’ পেলেন সিলেটের বিগ্রেডিয়ার ফাতেমা

Manual6 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার : এ বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সামরিক পুরস্কার ‘সেনাবাহিনী পদক’ পেয়েছেন সিলেটের কৃতী সন্তান বাংলাদেশ শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুন্নাহার ফাতেমা বেগম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে শান্তিকালীন বীরত্বপূর্ণ/সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পদক প্রদান করা হয়। গত ৬ নভেম্বর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গণভবন কমপ্লেক্স থেকে প্রেরিত এক পত্রে এতথ্য জানানো হয়।

Manual7 Ad Code

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৫ মার্চ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ পান সিলেটের কৃতী সন্তান বাংলাদেশ শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নুরুন্নাহার ফাতেমা বেগম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসহায় দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে দেশে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।

বিগ্রেডিয়ার ফাতেমা ১৯৬২ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম এমএ ওয়াদুদ ছিলেন শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা এবং মা মরহুমা ময়যুন্নেছা খাতুন ছিলেন একজন গৃহীনি। সিলেট নগরীর কিশোরী মোহন বালিকা বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করেন বিগ্রেডিয়ার ফাতেমা। ১৯৭৭ সালে এসএসসি, ১৯৭৯ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ১৯৮৫ সালে মেধা তালিকায় ২য় স্থান অর্জন করে এমবিবিএস পাশ করে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পরে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ অ্যান্ড সার্জনস থেকে শিশুরোগের উপর এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৭ ও ৯৮ সনে সৌদি আরবের কিং সুলতান হাসপাতালে বিভিন্ন বিদেশি চিকিৎসকগণের সংষ্পর্শে তিনি শিশু হৃদরোগ চিকিৎসায় বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৯৮ সালে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচএ) প্রতিষ্ঠা করেন শিশু হৃদরোগ বিভাগ। যা বাংলাদেশের প্রথম শিশু হুদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র।

Manual4 Ad Code

শিশু হৃদরোগ চিকিৎসার দিগন্ত উম্মোচনের জন্য তাঁকে বাংলাদেশে ‘মাদার অব পেডিয়ার্ট্রিক কার্ডিওলোজি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে শিশু চিকিৎসার আরেক দিকপাল মরহুম অধ্যাপক এম.আর খানের সাথে প্রতিষ্ঠা করেন চাইল্ড হার্ট ট্রাস্ট বাংলাদেশ। জটিল হৃদরোগ আক্রান্ত গরিব ও প্রান্তিক শিশুদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে অসংখ্য শিশুর জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে অসংখ্য শিশুর রোগ নিরাময় করে তাদের জীবনকে অর্থবহ করে তুলতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে এই ট্রাস্ট।

পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ওয়াদুদ ময়মুন্নেছা ফাউন্ডেশন’। মরহুম মা বাবার নামে প্রতিষ্টিত এই ফাউন্ডেশন নিজ উপজেলার বড়লেখার বর্ণী ইউনিয়নের পাকশাইল গ্রামে ফ্রি ফাইডে ক্লিনিক, ফ্রি খৎনা প্রদান ও ফ্রি হৃদরোগ শনাক্তকরণের মত সেবা প্রদান করে আসছে। প্রতি মাসে এই ফাউন্ডেশন থেকে ৩’শ থেকে ৪’শ জন দুস্থ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ ও সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার রোগীর চিকিৎসায় নিয়মিত ীনুদান প্রদান করে আসছে এই সংগঠন।

ব্যক্তি জীবনে নিজেকে রতœগর্ভা মা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই খ্যাতিমান চিকিৎসক। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে মার্জিয়া তাবাসমুম অঘত ব্যাংকে ঐবধফ ঙভ জরংশ গধহধমবসবহঃ ঊঁৎড়ঢ়বধহ ঙঢ়বৎধঃরড়হং -এ কর্মরত রয়েছেন। আর ছোট মেয়ে মাশিয়াত মাইশা আহমদ ফার্মাকোলজিতে স্নাতক সম্পন্ন করে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যায়নরত। তাঁর স্বামী সেনাচিকিৎসা মহাপরিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্ণেল আজহার উদ্দিনও পেশায় একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক।

Manual8 Ad Code

৭ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। তাঁর বড়বোন কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপিকা ফরিদা বেগম, দ্বিতীয় ভাই সিলেটের সুনামধন্য ব্যবসায়ী এ.কে.এম ফারুক, তৃতীয় ভাই অধ্যাপক ডা. একেএম রাজ্জাক আবাসিক সার্জারির প্রথিযশা সার্জন। আরেক ভাই সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবি ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট এ.কে.এম বদরুদ্দোজা। তাঁর বড় আরেক বোন ফৌজিয়া মাহমুদ সিলেট খাজাঞ্চীবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। ছোট বোন শামসুন্নাহার ফাহমিদা ঢাকার নবাবপুর স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা।
তাঁর বাসা সিলেটের মিরাবাজারে মৌসুমী-৬। গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্ণী ইউনিয়নের পাকশাইল গ্রামে। তাঁর শ্বশুরের বাসা সিলেট নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকায় এবং গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার চন্দরপুর গ্রামে।

বিগ্রেডিয়ার ফাতেমা মধ্যপ্রাচ্যে ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের দাতা সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে তিনি প্রতি বছর প্রায় দুই শতাধিক গরীব হৃদরোগ আক্রান্ত শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন। ২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো পালমোনারি বাল্ব প্রতিস্থাপন করেন। যা এদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শিশু হৃদরোগের চিকিৎসার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্ভন করে Persistent Pulmunary Hypertension and Persistent Fetal Circulatiur এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাঁর প্রবর্তিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে দেশ এবং দেশের বাহিরের বিভিন্ন হাসপাতালে।

পরিশ্রমী , মেধাবী ও অধ্যাবসায়ী বিগ্রেডিয়ার ফাতেমা একে একে অর্জন করেছেন ঋজঈচ (বফরহ), FRCP (edin), FACC (usa) I FSCAI (usa) ডিগ্রি। নিরন্তর সাধনার মাধ্যমে তিনি দেশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বয়ে এনেছেন গৌরবময় সব অর্জন।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2019
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

সর্বশেষ খবর

………………………..