সিলেট ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:১১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহে উন্নয়নের নামে চলছে অবাধে বৃক্ষনিধন। অভিযোগ রয়েছে, শাহী ঈদগাহ’র পরিচালনা কমিটিই গাছ কাটার সাথে সম্পৃক্ত।
রোববার ঈদগাহ থেকে কাটা বেশ কয়েকটি গাছ বিক্রির সময় আটকে দেয় এলাকাবাসী। এসবের মধ্যে রয়েছে সেগুন, মেহগনি, কড়ই, আমসহ আরো কয়েক প্রজাতির গাছ।
রোববার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিলেট শাহী ঈদগাহের পশ্চিমাংশের ড্রেন পুনঃ নির্মাণের কাজ চলছে। ড্রেনের পাশেই গাছ কেটে সারিবদ্ধভাবে ফেলে রাখা হয়েছে।
গত সপ্তাহেই সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় অর্ধশত গাছ কেটে ফেলে সিলেট সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ সংবাদ প্রকাশের পর পরিবেশকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তাদের প্রতিবাদের মুখে সিটি মেয়রও গাছ কাটার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এই ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার শাহী ঈদগাহ এলাকায় চলছে গাছ কাটা।
শাহী ঈদগায় গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, শুক্রবার থেকে ঈদগাহ কমিটির নির্দেশে তারা গাছগুলো কেটে রেখেছেন। সেগুন, মেহগনিসহ বেশ কয়েকটি গাছ কেটে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। সবকটি গাছ বেশ পুরনো হলেও ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান তারা। আর গাছ কিনেছেন রেজাউল করিম রাজু নামের এক ঠিকাদার।
রোববার দুপুরে ঈদগাহের উত্তর পশ্চিমাংশে একটি পিকআপে করে কাটা গাছ নেবার সময় পিকাআপটিকে আটক দেন এলাকাবাসী। তাদের সাথে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে গাছগুলো পিকআপ থেকে নামিয়ে রেখে চলে যান চালক।
তবে সেসময় ঈদগাহ কমিটির কাউকে সেখানে পাওয়া যায় নি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পূর্ব শাহী ঈদগাহের বাসিন্দা রাজন আহমদ জানান, যে ২৬ টি গাছ কাটা হয়েছে তার সবগুলোই ১২/১৪ বছরের পুরনো গাছ। এগুলোর আর্থিক মূল্য অনেক। এলাকাবাসীকে কোন প্রকার অবগত করা ছাড়াই এ গাছগুলো কেটে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাচীনতম এই ঈদগাহের শোভা এখানে থাকা গাছগুলো। এগুলো কেটে কেনো উন্নয়ন করতে হবে। আমরাও চাই শাহী ঈদগাহর উন্নয়ন হোক, কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে নয়। এর আগেও একাধিকবার এখানের গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নগর সবুজায়ন কমিটির সদস্য আশরাফুল কবির জানান, নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে গাছ কাটার প্রয়োজন পড়লে সেটা নগর সবুজায়ন কমিটিকে অবগত করার কথা কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো আইনই মানা হয় নি। কেউ জানে না কেনো গাছ কাটা হলো। ড্রেন নির্মাণের জন্য হয়তো দু’একটা গাছ কাটা পড়ে কিন্তু এখানে নির্বিচারে গাছ কাটা হয়েছে।
গাছগুলো কিনেছেন রেজাউল করিম রাজু নামে এক ঠিকাদার। মুঠোফোনে তিনি জানান, এলাকার কয়েকজন তার কাছে গাছগুলো বিক্রি করেছেন। তবে ২৬ টি গাছ কাটার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি মোট ৮ টি গাছ কিনেছি। তবে গাছগুলো কাদের কাছ থেকে কিনেছেন সে ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
গাছ কাটার পূর্বে কার অনুমতি নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা তা আমি জানি না, যারা আমার কাছে গাছ বিক্রি করেছেন তারা জানেন। তবে আমি কোনো অনুমতি নেই নি।
তবে গাছ কাটার ব্যাপারে কিছুই জানেন না সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি ২৬ টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো আমাদের অবগত করা হয় নি। আমি খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবো। গাছগুলো কারা কেটেছেন সে বিষয়ে কিছু না বলতে পারলেও উন্নয়ন কাজের জন্য গাছ কাটা যায় বলে মত দেন তিনি।
তবে সিটি করপোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ বলেন, ড্রেন নির্মাণ ও রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য শাহী ঈদগাহর পশ্চিম পাশের কয়েকটি গাছ কাটা প্রয়োজন হয়। এ বিষয়ে ঈহগাহ কমিটিকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
তবে শাহী ঈদগাহর মোতাওয়াল্লী জহির বখত দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যপারে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd