সেই যুবলীগ নেতা সম্রাট এখন কোথায়?

প্রকাশিত: ১১:১৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯

সেই যুবলীগ নেতা সম্রাট এখন কোথায়?

Manual4 Ad Code

রাজধানীর ফকিরেরপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনোর মালিক যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সোমবার গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল।

Manual1 Ad Code

জানা গেছে, নগরীতে ক্যাসিনো ব্যবসায় খালেদের সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েকজন যুবলীগ নেতা। তাদেরই একজন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। তিনি ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে জুয়াড়িদের কাছে পরিচিত।

Manual3 Ad Code

খালেদকে গ্রেফতারে পর সম্রাটও গ্রেফতার হচ্ছেন- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে সোমবার সারা রাত সম্রাটকে এক ধরনের পাহারা দিয়ে রাখেন তার কয়েকশ’ সমর্থক। এভাবেই বুধবার পর্যন্ত কাকরাইলে নিজের অফিসে অবস্থান করেন তিনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

Manual4 Ad Code

স্বাভাবিকভাবেই লোকমুখে প্রশ্ন উঠেছে, সম্রাট তাহলে কোথায়? যদিও কেউ কেউ বলছেন, সম্রাট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আছেন। যে কোনো সময়ে তাকে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে। তবে বিষয়টি পুলিশের কোনো সংস্থা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি।

ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার সাহেব বাজার এলাকায়। তিনি প্রয়াত ফয়েজ উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। সম্রাট যুবলীগে খুবই প্রভাবশালী এক নেতা। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী কাউন্সিলে অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। যুবলীগের দিবসভিত্তিক কর্মসূচি এবং রাজধানীতে আওয়ামী লীগের জনসভাগুলোতে সব সময়ই বড় শোডাউন থাকত সম্রাটের লোকজনের। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বাধীন যুবলীগের এ ইউনিটকে ‘শ্রেষ্ঠ সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছেন।

আলোচিত এ সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল- তিনি জুয়া খেলতে যান সিঙ্গাপুরে। মাসে অন্তত ১০ দিন সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলেন। এটি তার নেশা। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় জুয়ার আস্তানা মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকেও আসেন জুয়াড়িরা। কিন্তু সেখানেও সম্রাট ভিআইপি জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত। প্রথম সারির জুয়াড়ি হওয়ায় সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করার বিশেষ ব্যবস্থাও আছে।

Manual6 Ad Code

এয়ারপোর্ট থেকে মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনো পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিলাসবহুল গাড়ি ‘লিমুজিন’-এ করে। সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গেলে সম্রাটের নিয়মিত সঙ্গী হন যুবলীগ দক্ষিণের নেতা আরমানুল হক আরমান, মোমিনুল হক সাঈদ ওরফে সাঈদ কমিশনার, সম্রাটের ভাই বাদল ও জুয়াড়ি খোরশেদ আলম। এদের মধ্যে সাঈদ কমিশনারের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি ১০ বছর আগে ঢাকায় গাড়ির তেল চুরির ব্যবসা করতেন। এখন তিনি এলাকায় যান হেলিকপ্টারে। এমপি হতে চান আগামী দিনে। এনিয়ে তোড়জোড়ও শুরু করে দিয়েছেন। দোয়া চেয়ে এলাকায় লাগাচ্ছেন পোস্টার।

জানা যায়, যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের অফিস কাকরাইলে রাজমণি সিনেমা হলের উল্টোপাশে (পশ্চিম)। সেখানেও গভীর রাত পর্যন্ত ভিআইপি জুয়া খেলা চলে। প্রতিদিনই ঢাকার একাধিক বড় জুয়াড়িকে সেখানে জুয়া খেলার আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু সম্রাটের অফিসে খেলার নিয়ম ভিন্ন। সেখান থেকে জিতে আসা যাবে না। কোনো জুয়াড়ি জিতলেও তার টাকা জোরপূর্বক রেখে দেয়া হয়। নিপীড়নমূলক এ জুয়া খেলার পদ্ধতিকে জুয়াড়িরা বলেন ‘চুঙ্গি ফিট’। অনেকে এটাকে ‘অল ইন’ও বলেন। জুয়া জগতে ‘অল ইন’ শব্দটি খুবই পরিচিত। অল ইন মানে একেবারেই সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া। সংসারের ঘটিবাটি বিক্রি করে একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার মতোই জুয়াড়িদের ‘অল ইন’।

খালেদ গ্রেফতার হওয়ার পরই কাকরাইলে যুবলীগের কার্যালয়ে অবস্থান নেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ওই কার্যালয়ের সামনে হাজারখানেক নেতাকর্মীও অবস্থান নেন। রাত ৩টার পরও কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণ জানতে চাইলে সম্রাট গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার কাছে নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই আসেন। রাত ১টা-২টা পর্যন্ত থাকেন। এটি নতুন কিছু নয়। অন্যদিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি নেতাকর্মীর উপস্থিতি গ্রেফতার আতঙ্কের কারণে কিনা জানতে চাইলে সম্রাট বলেন, ‘আমি আতঙ্কিত নই। অপরাধের সংশ্লিষ্টতা পেলে, অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে পারে।’

এরপর তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বর রাত থেকে তার অবস্থান জানা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, তিনি একটি প্রভাবশালী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে আছেন। তাকে যে কোনো সময়ে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2019
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..