সিলেটের সেই সেলফি ব্রিজ এখন অন্ধকারে, প্রকাশ্যে চলছে অসামাজিক কর্মকাণ্ড

প্রকাশিত: ৪:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯

সিলেটের সেই সেলফি ব্রিজ এখন অন্ধকারে, প্রকাশ্যে চলছে অসামাজিক কর্মকাণ্ড

Manual2 Ad Code

সিলেটের দৃষ্টিনন্দন কাজিরবাজার সেতুতে যেমন বেড়েছে বিনোদন প্রেমীদের আনাগুনা তেমনি বিচরণ করছে অপরাধী চক্র। ব্রিজের ওপর ১২৬টি সড়কবাতির মধ্যে ৯৬টি নষ্ট থাকায় অন্ধকারে ডুবে রয়েছে সেতুটি। আর এ অন্ধকারকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে অপরাধজনিত নানা ব্যবসা। অপরদিকে, সংস্কার কাজ চলায় ক্বিনব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে কাজিরবাজার সেতুসহ অন্যান্য সেতুর ওপর। নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে ও অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে সিটি কর্পোরেশন নোটিশ লাগিয়ে রাখলেও তা মানছেনা কেউ।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, যান্ত্রিক জীবনের বাহিরে এসে নগরবাসী খোলামেলা পরিবেশে প্রকৃতির স্বাদ নিতে বিকেল থেকে জমায়েত হন ব্রিজে। কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে, কেউ বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেতে উঠেন আড্ডায়। তবে দিনের আলো নেমে যাওয়ার সাথে সাথে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বিপদগামী ছেলেমেয়েরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্ধকারে অবস্থান নিয়ে রঙ্গ লিলায় মেতে উঠছে। কেউ বা আবার রঙিন দুনিয়ার গহবরে ডুবে মাদকসেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে বেচে নেয় কাজিরবাজার ব্রিজ। পাশাপাশি কলগার্ল দেখানো ও অন্যত্র নিয়ে যাওয়া, চোরাই মোবাইল, মাদক কেনাবেচা এমনকি হুন্ডিরও লেনদেন হয় বলে জানা গেছে। আর ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তকে অপরাধের আস্তানা হিসেবে আখ্যায়িত করেন অনেকে।

Manual7 Ad Code

এদিকে, ক্বিনব্রিজ বন্ধ থাকায় কাজিরবাজার ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল বাড়লও ব্রিজের ওপর ও ফুটপাতের দখল ছাড়তে নারাজ চটপটি-ফুচকা ব্যবসায়ীরা। ডজন ডজন চেয়ার বসিয়ে ফুটপাত বন্ধ করার ফলে ব্রিজের ওপর সরু হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারীরা চলাচল করছেন মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে। রাত গভীর হলে ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচলকারী পথচারী, রিকসা, অটোরিক্সা সিএনজি, মোটরসাইকেল থামিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইর ঘটনা ঘটতে শুনা যায়। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলযোগে ছিনতাই করে মুহুর্তের মধ্যে উধাও হয়ে যায়। ব্রিজের অপরাধ চক্রের সাথে গুটি কয়েক অসাধু পুলিশ সদস্যের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Manual5 Ad Code

সিলেট নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ১৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখঘাট এলাকায় সুরমা নদীর ওপর তৈরি করা হয় প্রায় ৪’শ মিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন কাজিরবাজার সেতু। সেতু এলাকাকে আলোকিত রাখতে স্থাপন করা হয় ১২৬টি সড়কবাতি। বর্তমানে ৩০টি সড়কবাতি আলো দিলেও ৯৬টি রয়েছে নষ্ট অবস্থায়। তার কারন হিসেবে সিটি কর্পোরেশন জানায়, তিনটি স্প্যান ৩’শ ফুট বৈদ্যুতিক তার চুর কেটে নিয়ে গেছে। চুরি যাওয়া কপার তারের প্রতি ফুটের বাজার মূল্য ২’শ টাকা। সে হিসেবে ৩’শ ফুট বৈদ্যুতিক তারের মূল ৬০ হাজার টাকা। ধারনা করা হচ্ছে অপরাধ ব্যবসার সাথে জড়িত কোনো চক্র এ কাজ করে থাকতে পারে। ব্রিজের ওপর আলোকিত রাখতে অস্থায়ীভাবে জরুরী ভিত্তিতে ৭০টির মত সড়কবাতি জ্বালানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে সিসিকের বিদ্যুৎ শাখা।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো: রুহুল আলম জানান, বিষয়টি অনুধাবন করে আমরা নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশ বরাবরে লিখিত পত্র তৈরি করেছি। মেয়রের মাধ্যমে তা দু-একদিনের মধ্যে প্রেরণ করা হবে। সড়কবাতির বৈদ্যুতিক তার চুরি যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, তিন স্প্যান কপার তার চুর কেটে নেয়ায় ব্রিজ এলাকার অনেক স্থান অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে। আমরা আজই (গতকাল সোমবার) জরুরী ভিত্তিতে ৭০টা সড়কবাতির জ্বলার ব্যবস্থা করছি। নিরাপত্তার অভাব থাকায় চুরি যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের স্থানে পুনরায় তার সংযোজন করতে চাচ্ছেনা সিসিক। বিকল্প ব্যবস্থায় তার যুক্ত করতে প্রকৌশলীদের সাথে কথা চলছে বলে জানান রুহুল আলম।

এ ব্যাপারে কথা হয় কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিম মিঞা বলেন, টহল পুলিশ যখনই দেখছে ফুটপাত দখলকারীদের তখনি তাড়িয়ে দিয়ে আসছে। ক্বিনব্রিজ বন্ধ থাকার পর থেকে জনসাধারণরের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের টহল ওই এলাকায় বাড়ানো হয়েছে। এক প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, থানার কোনো পুলিশ সদস্য যদি কোনো অপরাধের সাথে  সম্পৃক্ত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Manual7 Ad Code

কাজিরবাজার সেতুর দক্ষিণ সুরমা প্রান্তে অপরাধীদের আস্তানা ভেঙ্গে দিতে কি ব্যবস্থা নিবেন? এমন প্রশ্নে দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ খায়রুল ফজল বলেন, আমার জানামতে কোনো অপরাধ ঘটছেনা, ঘটলেও এসব বিষয় আমার নলেজে কেউ দেয়নি। কোনো অনৈতিক কাজ চলতে দেয়া হবেনা। অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Manual2 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2019
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..