গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে প্রকাশ্যে আসছে নিষিদ্ধ ভারতীয় পণ্য

প্রকাশিত: ৮:৫৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৯

গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে প্রকাশ্যে আসছে নিষিদ্ধ ভারতীয় পণ্য

Manual3 Ad Code

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় প্রতিনিয়ত চোরাই পথে ভারত থেকে অবাধে বাংলাদেশে আসছে ভারতীয় পণ্য। অবৈধ পথে শুল্ক না দিয়ে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার মালামাল আসছে। তবে আগে এসব রাতের আঁধারে আসলে ও এখন তা দিনের বেলা প্রকাশ্যেই চলছে রমরমা চোরাই পণ্য আমদানী। পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। সিলেটের জাফলং সীমান্ত এলাকার স্থানীয় লোকজন বলছেন, কথিত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও থেমে নেই সীমান্তের চোরাচালান। তারা বলছেন, ভারত থেকে গরুর পাশাপাশি ভারতীয় শাড়ী, থ্রি-পিস, কসমেটিকস এবং মসলাসহ ভারতী পণ্য আসছে প্রচুর। ভারতীয় এসব চোরাই পণ্যের দখলে চলে গেছে বাংলাদেশের বাজার। বলা চলে অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়ছে সীমান্ত এলাকা।

অভিযোগ আছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বিছনাকান্দি, সোনারহাট সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাচালান সিন্ডিকেট অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য আনছে। আগের তুলনায় এই চোরাকারবারি সিন্ডিকেট এখন আরও সক্রিয়। দেদারসে দেশে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। জানা যায় চোরাকারবারি চক্র বিজিবির কিছু অসাধু সদস্যকে ম্যানেজ করে এসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পথে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসছে। বিশেষ করে জাফলং, বিছনাকান্দি, সোনারহাট সীমান্ত ব্যবহার করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য অবাধে দেশে প্রবেশ করছে। ফলে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকার শুল্কক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

Manual7 Ad Code

চোরাই পথে আসা ভারতীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট ও প্যান্টের থান কাপড়, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, বিয়ার, মোটর সাইকেল, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, গরু মোটা-তাজাকরণের স্টেরয়েড ট্যাবলেট, হলুদ, জিরা, এলাচি, দারুচিনি, গোলমরিচসহ যাবতীয় মসলা, ফেয়ার এন্ড লাভলিসহ বিভিন্ন কসমেটিকস্। এসব চোরাই মালামালের কিছু কিছু মাঝে মধ্যে বিজিবি আটক করলেও পরবর্তীতে কাস্টমসে জমা দেয়ার আগে বেশিরভাগই পেছনের দরজা দিয়ে চলে যায় চোরাই সিন্ডিকেটের হাতে। এমন অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে এ বছর কয়েক কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এর ৮০ ভাগই ভারত থেকে এসেছে। কিন্তু এসব পণ্য বৈধপথে আসেনি। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। আর এভাবে কয়েক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের অবৈধ আমদানির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্পোৎপাদন। অবৈধ পথে আমদানিকারকদের শুল্ক পরিশোধ করতে হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাস্টমসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত এবং বাংলাদেশের শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত। রাজনৈতিক প্রভাব আর প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত থাকায় ভারতীয় পণ্য এ দেশে বাজারজাতকরণে তাদের খুব একটা বেগ পেতে হয় না।

Manual6 Ad Code

ব্যবসায়ীরা জানান, চোরাই পণ্য বিক্রিতে লাভ বেশি। শুল্ক ছাড়া এসব পণ্যের বাজার মূল্য অনেক কম থাকে। এ কারণে দেশীয় উৎপাদনমুখী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের কাছে মূল্য ও মানে অনেক দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে। এ ছাড়া বৈধপথে আমদানিকারকরাও এতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি লাভজনক হওয়ায় বৈধ আমদানির চেয়ে অবৈধ আমদানির দিকেই ঝুঁকছেন ব্যাবসায়ীরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, সারা বছরজুড়েই চোরাই পথে দেশে ডুকে প্রায় শতাধিক ভারতীয় পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে পোশাক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক্স, বিভিন্ন মশলা জাতীয় পণ্য, শিশুখাদ্য, শুঁটকি, চিনি, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ইত্যাদি।

Manual5 Ad Code

এদিকে সীমান্ত এলাকায় মাঝে মাঝে কিছু চোরাচালান জব্দ করা হলেও, যে পরিমাণ পণ্য পাচার হয় তা তার এক সিকি ভাগও নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, কর্মকর্তা- কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাচালানি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে এসব পণ্য আনছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাফলং এলাকার এক চোরাকারবারী জানান, শুল্ক দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করলে দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পড়ায় ব্যবসায়ীরা চোরাকারবারীদের দিকেই ঝুঁকছে। আর এসব কাজে তাদেরকে মৌন সহযোগিতা করছে কতিপয় বিজিবি সদস্যরা, আর যদি বিজিবি সদস্যরা সহযোগিতা নাইবা করতো তাহলে প্রকাশ্যে এসব পন্য আসছে কেমনে? এমন প্রশ্ন থেকেই যায়? কতিপয় সীমান্তরক্ষী সদস্যরা নিজেদের আখের গোছালেও সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। অন্যদিকে ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে ডুকা এসব পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়ছে রুগ্ন আর বন্ধ।

জাফলং সংগ্রামপুঞ্জি বিজিবি ক্যাম্পের পরিচালক বাবুল সাহেব বলেন আমি এখানে নতুন এসেছি, চোরাকারবারিদের সাথে বিজিবি সদস্যদের যোগসাজশের কথা তিনি অস্বীকার করেন। তবে প্রশ্ন যেখান উঠেছে তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে বিজিবি’র কোন সদস্য এই চোরাকারবারীদের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2019
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..