সিলেট ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০১৯
চলতি বছরের শুরুর দিকে ঢাকডুল পিঠিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারটি স্থান্তরিত হয়। যেখানে রয়েছে আধুনিক সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা। তবে সেই আধুনিকতার ভরপুর কারাগার এখন হয়ে উঠেছে মরণ নেশা মাদকের অভরায়ন্য। কারাভ্যন্তরেই অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে মৃত্যু ঘটেছে কয়েদীর এমন তথ্যও গোপন রেখেছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
এক কথায় জেল সুপার-জেলার,কারারক্ষী (মিয়াসাব)দে যোগ সাজসে এমনটি হচ্ছে বলেও সদ্য কারা ফেরত একাধিক হাজতী-কয়েদী জানান। তবে তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে এমন শর্তে কারাভ্যন্তরের সব গোমর ফাঁস করে দেন। নাম প্রকাশ না করার কারণ হচ্ছে কারা ফেরত কয়েদী-কিংবা হাজতিদের নাম পরিচয় প্রকাশ পেলে কারাগারে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা বাইরে থাকা তাদের লোকজন দিয়ে তাদের ক্ষতি করতে পারে। বা কোন ভাবে ২য় বার জেলে গেলে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের উপর চালাবে নির্যাতনের স্ট্রিমরোলার।
কারাগারটি নগরীর ধোপাদিঘির পারে থাকা কালে একাধিকবার মাদকের বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সেই সময়কার জেলা প্রশাসকগণ কারাগারে সুপারভিশনে থাকায় অনেকটা বেকায়দায় পড়েন। ফলে মাদক নিয়ন্ত্রনে একটু নড়েচেড় বসেছিলেন। কিন্তু কারাগারটি চলতি বছরে জালালাবাদ থানাধীন বাধাঘাটে স্থানান্তর হবার পর থেকে সেখানে মাদকের ছড়াছড়ি মারাত্বক আকার ধারন করেছে।
বাধাঘাটের মাদক সম্রাগ্রী ফরিদা তার সূর্যমুখি ৬ এ থাকা ছেলে পান্না। কারাক্যান্টিনের পরিচালক হবিগঞ্জের কাজল দেব সমান তালে নিয়ন্ত্রণ করছেন কারাগারের মাদক সম্রাজ্য।
গত জুলাই মাসের ১৮ তারিখে অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনের ফলে (পানির চালী)তে কর্মরত সুবাষ নামের এক কয়েদীর মৃত্যু হয়। সে ছিলো কারাভ্যন্তরের একজন ইয়াবা ডিলার। এর দুদিন পর ২০ জুলাই জেল সুপারের সামনেই কয়েদী কাজল দেবকে তল্লাশী চালিয়ে তার কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন, মাদক সহ নগদ ৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে জেল কর্তৃপক্ষ। ভাতের চৌকিতে কর্মরত ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কয়েদী পারভেজ যাকে সবাই সাপুড়ে পারভেজ বলে চিনেন তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
এ ভাবে ছোট বড় কয়েকটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে কারাগারের মাদক সম্রাজ্য। সূত্রমতে কারাগারে ১শ ইয়াবা প্রবেশের জন্য (মিয়াসাব) কারারক্ষী পান ১ হাজার টাকা। তবে তাকে কাজটি করতে হয় কারাগারের তল্লাশী চৌকি, সিআইডির নজরদারী এড়িয়েই। কারাগারে ভেতর ইয়াবার কোড নাম সিঙ্গেল-ডাবল। ইয়াবার দামও নেয়া নেয়া কোড নামের সাথে সঙ্গতি রেখে আকার ভেদে। কারাগারের ভেতর প্রতিত পিস ইয়াবা সিঙ্গেল (ছোট) ২৫০ টাকা, ডাবল (বড়) ৫’শ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি পুরিয়া গাঁজা ২’শ থেকে ৩’শ টাকায় বিক্রি হয়। কারাগারে কয়েক বছর আগে থেকেই মদ, গাঁজা সেবন ও বিক্রয় চললেও গত এক বছর ধরে নতুন করে নেশার তালিকায় যুক্ত হয়েছে মরণ নেশা ইয়াবা। মাদক সেবনের পাশাপাশি কারাগারের ভেতর দিন রাত বসে টাকার বিনিময়ে জমজমাট জুয়ার আসর। প্রতি আসর থেকেই ৩শত টাকা করে নিয়ে থাকেন মিয়াসাবরা।
গত বছরের একটি অনুষ্টানে সিলেট বিভাগীয় তথ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জুলিয়া জেসমিন মিলি নিজেই জানিয়ে ছিলেন কারাগারেই মাদকের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে । কিছু দুর্নীতিবাজ এবং অসৎ পুলিশ অফিসারের কারণে কারাগারে বসেই মাদকদ্রব্য গ্রহণ এবং মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী অপরাধীরা। শর্ষের ভেতরে ভূত রেখে যেমন ভূত তাড়ানো যায় না, মাদক যারা রোধ করবে তারাই মাদকের সঙ্গে যুক্ত হলে মাদক ব্যবসা রোধ কতটা সম্ভব?
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd