সদর হাসপাতালে নার্সিংয়ের দুই ছাত্রী লাঞ্ছিতের ঘটনায় তোলপাড়

প্রকাশিত: ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০১৯

সদর হাসপাতালে নার্সিংয়ের দুই ছাত্রী লাঞ্ছিতের ঘটনায় তোলপাড়

Manual2 Ad Code

নিজেদের অসুখের ওষুধ সংগ্রহ করতে গিয়ে জামালপুর নার্সিং ইন্সিটিটিউটের দু’জন ছাত্রী হাসপাতালের ফার্মেসি বিভাগের কর্মচারীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে শতাধিক ছাত্রী রবিবার সকাল থেকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে কর্মবিরতি ও ইন্সটিটিউটের ক্লাস বর্জন করে ফার্মেসি বিভাগ ঘেরাও ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত একজন ফার্মাসিস্ট ও দু’জন পিয়নের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়িত ওই তিন কর্মচারীকে তিনদিনের জন্য সাময়িক অব্যাহতি এবং তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করেছেন। এরপর ছাত্রীদের কিছু ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবায় এবং বাকিরা ক্লাসে ফিরে গেছেন। ছাত্রীদের আন্দোলনের কারণে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রায় তিন ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হয়।

ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী ও হাসপাতালের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর নার্সিং ইন্সিটিটিউটের ক্লাস করার পাশাপাশি তিন ব্যাচের ১৪২ জন ছাত্রী জামালপুর সদর হাসপতালের সবগুলো ওয়ার্ডে পালাক্রমে সকাল ও সন্ধ্যায় ছয় ঘণ্টা করে এবং রাতের পালায় ১২ ঘণ্টা করে স্টাফ নার্সদের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

তাদের মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের অসুস্থ ছাত্রী তানজিনা আক্তার ও আমেনা আক্তার কেয়া গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসকের কাছ থেকে স্লিপ নিয়ে ফার্মেসি বিভাগে ওষুধ নিতে যান। স্লিপের লেখায় কাটাছেঁড়া দেখে ফার্মাসিস্ট মো. মোবারক হোসেন ওষুধ দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ফার্মাসিস্ট মোবারক হোসেন ছাত্রী দু’জনের সাথে অসদাচরণ করেন। এ সময় ওই ফার্মাসিস্ট এবং ন্যাশনাল সার্ভিসের দু’জন অস্থায়ী পিয়ন মাজহারুল ইসলাম মনির ও শ্যামল ওই দুই ছাত্রীকে মারতে যায়, তুইতুকারি করে এবং ধমক দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় সহপাঠীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি তারা ঘটনার পরপরই নার্সিং ইন্সটিটিউটের ইনচার্জ আফরোজা বেগমকে জানান। আফরোজা বেগম ওই দুই ছাত্রীকে সাথে করে নিয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. প্রফুল্ল কুমার সাহাকে বিষয়টি অবহিত করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।

Manual6 Ad Code

কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত না জানানোয় নার্সিংয়ের ছাত্রীরা রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে কর্মবিরতি এবং ইন্সটিটিউটের ক্লাস বর্জন করে ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে হাসপাতালের ফার্মেসি বিভাগ ঘেরাও করেন। তারা সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

Manual2 Ad Code

এ সময় হাসপাতালের দু’জন আরএমও ডা. কে এম শফিকুজ্জামান ও ডা. ফেরদৌস হাসান বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের আন্দোলন থামাতে গেলে তাদের সাথেও ছাত্রীদের বেশ হট্টগোল হয়।

একপর্যায়ে জামালপুর সদর থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে বেলা দেড়টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনার উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ফার্মেসি বিভাগ ত্যাগ করে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. প্রফুল্ল কুমার সাহা এ ঘটনার সাথে জড়িত ফার্মাসিস্ট মো. মোবারক হোসেন, পিয়ন মাজহারুল ইসলাম মনির ও শ্যামলকে তিনদিনের জন্য সাময়িক অব্যাহতি ও একটি তদন্ত টিম গঠন করে ঘটনার সঠিক বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ওয়ার্ডের চিকিৎসাসেবা ও তাদের ক্লাসে ফিরে যান।

ভুক্তভোগী ছাত্রী তানজিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ওয়ার্ডের ডাক্তার দেখিয়ে স্লিপসহ ফার্মেসি বিভাগে যাই ওষুধ নিতে। চার রকমের মধ্যে আমাকে দুই রকমের ওষুধ দেয়। জানতে চাইলে ফার্মাসিস্ট আমাকে বলেন যে ওষুধ সাপ্লাই নাই। আমি বলি যে, ওষুধ সাপ্লাই আছে দিবেন না কেন। আমরাও এই হাসপাতালে রাতদিন সেবা দেই। আমাদের ওষুধ দিবেন না কেন?

Manual8 Ad Code

এক পর্যায়ে কাউন্টারের ভেতর থেকে বাইরে এসে তুই যা বলে ফার্মাসিস্ট মোবারক হোসেন আমাকে মারতে আসেন। সেখানে মনির ও শ্যামল নামের দু’জন পিয়নও আমাদের ধমকায়। আমি এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

Manual7 Ad Code

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফার্মাসিস্ট মো. মোবারক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ওষুধের স্লিপে কাটাছেঁড়া থাকায় আবার ডাক্তারের কাছ থেকে লিখে আনতে বলি। তখনই ওই দুই ছাত্রী বেশ উত্তেজিত হয়ে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। আমি মারতে যাইনি বা কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি।

২৫০ শয্যার জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. প্রফুল্ল কুমার সাহা এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগের ফার্মেসির কর্মচারীদের সাথে নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রীদের মধ্যে গন্ডগোলের বিষয়টি দু’পক্ষের কাছ থেকেই শুনেছি। প্রাথমিকভাবে ফার্মাসিস্ট মোবারক হোসেন এবং হাসপাতালের দু’জন পিয়নকে তিনদিনের জন্য তাদের দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2019
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..