৫০ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা-তিস্তার পানি

প্রকাশিত: ৯:১২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০১৯

৫০ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা-তিস্তার পানি

Manual6 Ad Code

যমুনা নদীর পানি জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি এবং তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিগত ৫০ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

একই সঙ্গে মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি, উত্তরাঞ্চলে স্থিতিশীল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এমনকি আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার পার্শ্ববর্তী শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুধবারের (১৭ জুলাই) তথ্য অনুযায়ী, যমুনা নদীর পানির সমতল বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ২১ দশমিক ১২ মিটার ও ফুলছড়ি পয়েন্টে ২১ দশমিক ২৯ মিটার এবং তিস্তা নদীর পানির সমতল ডালিয়া পয়েন্টে ৫৩ দশমিক ১২ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে।

Manual2 Ad Code

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি নিয়ে স্বাধীনতার আগের তথ্য আমাদের কাছে নেই। স্বাধীনতা পর থেকে এ পর্যন্ত আগে কখনো যমুনা ও তিস্তার পানি এত বাড়েনি। এর আগে সর্বোচ্চ পানি বেড়েছিল ২০১৭ সালে।’

Manual5 Ad Code

এর আগে ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট যমুনা নদীর পানির সমতল সর্বোচ্চ বাহাদুরাবাদে ২০ দশমিক ৮৪ মিটার, ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই ফুলছড়ি পয়েন্টে ২১ দশমিক ১৩ মিটার এবং ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট তিস্তা নদীর পানি ৫৩ দশমিক ০৫ মিটার রেকর্ড করা হয়েছিল বলেও জানান আরিফুজ্জামান।

বৃহস্পতিবার জুলাই মাসের বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদনে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও উজানের বেসিনে (আসাম) ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথমার্ধে দেশের উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সবকয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে জামালপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যা উত্তর-মধ্যাঞ্চলের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ মানিকগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যমুনা নদী বাহাদুরাবাদ ও ফুলছড়ি পয়েন্টে এবং তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পূর্বে রেকর্ডকৃত সবোর্চ্চ সীমা অতিক্রম করেছে।

এতে আরও বলা হয়, চলতি মাসের ১৭ জুলাই থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের আসাম অংশে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের নদীর পানি কমতে শুরু করেছে এবং এর প্রভাব আগামী ২/১ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের উজানে পড়বে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) নাগাদ যমুনার পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে সবোর্চ্চ সীমায় পৌঁছাতে পারে এবং শুক্রবার থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করতে পারে। এতে আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে উত্তরাঞ্চলের জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং ক্রমান্বয়ে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

বিশেষ প্রতিবেদনে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধির ফলে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং বুধবার (১৭ জুলাই) ফরিদপুরের গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে পদ্মা নদীর পানি সমতল মুন্সিগঞ্জের ভাগ্যকুল ও গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অপরদিকে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

Manual7 Ad Code

আগামী শনিবার থেকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা নদীর পানি কমতে শুরু করার সম্ভাবনা থাকায় জুলাই মাসের চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যভাগ বা শেষভাগে মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

Manual6 Ad Code

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা অঞ্চলে সুরমা, কুশিয়ারা, কংশ ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলাতেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গত মঙ্গলবার থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ও কাছাকাছি মেঘালয় অংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসায় এ অঞ্চলের নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে।

এ অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস না থাকায় এখানকার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে। চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে বলেও জানিয়েছেন বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা।

পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পারি তিনটি, কুশিয়ারা নদীর পানি তিনটি, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি দুটি, যমুনা নদীর পানি ছয়টি, পদ্মা নদীর পানি দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। এ ছাড়া পুরনো সুরমা, সোমেশ্বরী, কংস, তিতাস, মেঘনা, ধরলা ঘাঘট, আত্রাই ও ধলেশ্বরী নদীর পানিও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..