সিলেট ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০১৯
কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে সংরক্ষিত এলাকা (ব্যংকার) থেকে পাথর লুটপাটে একটি পাথর খেকো চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কিছুদিন সংরক্ষিত এ এলাকায় পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে রেলওয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের (আরএনবি) ম্যানেজ করে পাথর লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধারে অতীতের ন্যায় আবারো বোমা মেশিন দিয়ে চলছে অবাধে পাথর লুট। এর ফলে পাথরখেকো চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে হচ্ছে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের একমাত্র রজ্জুপথ ভোলাগঞ্জ রেলওয়ে রোপওয়ে বাংকার। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে রোপওয়ে বাংকারে অবস্থিত রেস্ট হাউস, মসজিদ, ব্যারাক, মেশিনঘর সহ বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ রোপওয়ে বাংকারে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বোমা মেশিন দ্বারা পাথর উত্তোলনের কাজ বন্ধ ছিল। তবে- বর্তমানে আবারো একটি পাথরখেকো চক্র রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের সাথে রফাদফার মাধ্যমে পাথর লুটপাট করে রেলওয়ে রোপওয়ে বাংকার ধ্বংসে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ১০/১২ দিন যাবত সেখানে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। মূলত রোপওয়ের সংরক্ষিত এলাকা রক্ষার জন্য সেখানে আরএনবি মোতায়েন করা হয়। কিন্তু, তারাই এখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পেশিশক্তির বলে এই চক্রটি বেআইনিভাবে অবৈধ ‘বোমা মেশিন’- এর মাধ্যমে সেখানকার কোটি কোটি টাকার পাথর সম্পদ লুটে নিচ্ছে। অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের তরফ থেকে সংরক্ষিত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। রোপওয়ে বাংকারে প্রতিটি মেশিন থেকে ৪০ হাজার টাকার রফাদফার বিনিময়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চীফ কমান্ড্যান্ট, সিলেট চৌকির চিফ ইন্সপেক্টর (সিআই) নুর মোহাম্মদ এবং রোপওয়ে বাংকারের দায়িত্বে থাকা এএসআই নাফিজ ইমতিয়াজকে ম্যানেজ করে স্থানীয় পাথর খেকো চক্র আবারো পাথর লুটপাটে মেতে উঠেছে। রোপওয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের ‘ম্যানেজ’ করে পাথর লুটপাট কাজ চলছে-এ বিষয়ে চিফ ইন্সপেক্টর নুর মোহাম্মদ দৈনিক সিলেটের ডাককে জানান, সোমবার বাংকার এলাকায় কোন মেশিন চলেনি। তবে, মাঝে-মধ্যে কিছু লোক বাংকার এলাকায় মেশিন বসানোর চেষ্টা করে। বিষয়টি বাংকারের দায়িত্বে থাকা সাব-ইন্সপেক্টর দেখেন।
এদিকে, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, রোপওয়ে বাংকার এলাকায় পাথর লুটপাটের বিষয়টি তার জানা নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জী বলেন, বাংকারে মেশিন লাগানোর বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করবো।
ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা। এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৪১ একর নিজস্ব ভূমি রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি ভবন ও শতকোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিদ্যমান আছে। এই সম্পদ পাহারায় আনসার ও আরএনবি নিয়োজিত আছে। বর্তমানে বাংকারের সংরক্ষিত এলাকা থেকে বোমা মেশিনের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করে সরকারের শত কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হচ্ছে। অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালিত হলেও তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না। পাথর খেকো চক্র কিছুদিন তাদের অপকর্ম বন্ধ রাখলেও প্রশাসন একটু ঢিলেমি দিলেই বোমা মেশিনের মাধ্যমে পাথর উত্তোলনের অবৈধ কর্মটি নতুন উদ্যমে শুরু করে দিচ্ছে। এলাকাবাসী বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে রোপওয়ের সংরক্ষিত এলাকার অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে এবং সেটি হলে বর্ষায় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ওমঘাটে এসে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ভোলাগঞ্জের গ্র্রাম ও জনপদ ধ্বংস করে দেবে। এর ফলে পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd