মাজারের আয় আত্মসাৎ, অনিয়মের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি

প্রকাশিত: ৪:৫৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮

মাজারের আয় আত্মসাৎ, অনিয়মের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের ‘হজরত শাহ আব্দুর রহিম (রহ.) এর মাজারের আয় আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনিয়ম অভিযোগ এনে সিলেটের জেলা প্রশাসক ববাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন এলাকাবাসী। গত ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার এলকাবাসীর পক্ষে স্মারকলিপি প্রদান করেন বেতসুন্দি ফকিরেরগাঁও গ্রামের মৃত উম্মর আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী। ডকেট নং- ৪৭।

স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের সাত মাইল বেতসুন্দি (ফকিরেরগাঁও)-এ ‘হজরত শাহ আব্দুর রহিম (রহ.) নামক এক আধ্যাত্মিক সাধকের মাজার রয়েছে। প্রায় ৩৩ বছর পূর্বে এই মাজার এই মাজার এলাকায় একটি বটগাছ ও গোরস্থান ছিল। গোরস্থানটি গ্রামবাসী দেখাশুনা করে আসাবস্থায় সুরুজ আলী পাগল নাতক এক ব্যক্তি সেখানে রাতে মোমবাতি জ¦ালাতেন। সে সময় এলাকাবাসীর অনুরোধে বাগরখলা নিবাসী পীর শাহ ফারুক আহমদ ইস্তেখারা করে বলেন, এখানে হজরত শাহ জালাল রহ. এর অন্যতম সঙ্গী শাহ আব্দুর রহিম রহ. এর মাজার রয়েছে। সে সময় থেকে মাজার পরিচালনা কমিটি গঠন করে খেদমত ও রক্ষণা বেক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমানে মাজার কমিটি মাজারের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা সহ বিভিন্ন রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করায় এলাকায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

Manual1 Ad Code

স্মারকলিপিতে বলা হয়, দীর্ঘ ২৩ বছর অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠু ভাবে মাজার পরিচালিত হওয়ার পর দুর্নীতি শুরু হয় ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর আলকাছ আলীকে সভাপতি, আরজুমন্দ আলীকে সাধারণ সম্পাদক ও মশাহিদ আহমদ রনিকে অর্থ সম্পাদক করে গঠিত কমিটির মাধ্যমে। ২০১৩ সালে বার্ষিক সভায় ৬৫ হাজার টাকার গরমিল ধরা পড়লে অর্থ সম্পাদক তা ফেরত দেবেন বলে কথা দিলেও টাকা ফেরত দেননি। অন্যদিকে জমি ক্রয়ের জন্য মাজার ফান্ড থেকে সাধারণ সম্পাদক ২ লক্ষ টাকা দেয়া হলে তিনি জমি না দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরবর্তীতে উক্ত জমি ৭ লক্ষ টাকা দিয়ে মাজার কমিটি ক্রয় করে নেয়ার পর সাধারণ সম্পাদক আরজুমন্দ আলীকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বাদ দেয়া হয় এবং মাজারের যাবতীয় হিসাব-নিকাশের খাতাপত্র তিনি হস্তান্তর করেন।

২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৩ বছর মেয়াদী আলকাছ আলীকে সভাপতি, ফয়জুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক ও মশাহিদ আহমদ রনিকে অর্থ সম্পাদক করে ৩ বছর মেয়াদী নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তারা দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি। এই কমিটি ২০১৬ সালের বার্ষিক আয়-ব্যয় সাধারণ সভায় উপস্থাপন করলে তাতে গরমিল পরিলক্ষিত হয়। এর প্রেক্ষিতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের অক্টোর পর্যন্ত ৫১ লক্ষ ১৪ হাজার ১৬৭ টাকা আয় এবং ৩০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫ শত টাকা ব্যয় দেখতে পান। অথচ মাজার কমিটির অর্থ সম্পাদক মশাহিদ আহম রনি জানান, ১৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯৯০ টাকা হজরত শাহ আব্দুর রহিম রহ. এর নামে একাউন্টে পূবালী ব্যাংক লালাবাজার শাখায় জমা আছে বলে জানান। এতে ৫ লক্ষ ৫১ হাজার ৬ শত টাকার গরমিল ধরা পড়ে। এ অবস্থায় অর্থ সম্পাদকে হিসাবের গরমিলের কথা জানালে সে উক্ত টাকা ব্যাংকে জমা দেয়র আশ^াস দেন। এভাবে তিনি মাজারের টাকা ব্যক্তগত কাজে ব্যবহার করছেন।

Manual1 Ad Code

ঠিক একই ভাবে ২০১৭-১৮ সালে আয়-ব্যয়ের হিসাবে বড় ধরনের গরমিল দেখা যায়। ব্যাংক একাউন্টে ৬৪ লক্ষ টাকা জমা থাকার কথা থাকলেও ব্যাংকে জমা আছে ৩৩ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে সভায় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করলে সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদক একে অপরকে দোষারূপ করে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং কতিপয় সদস্যকে তাদের পক্ষে নিয়ে সভা বর্জন করে চলে যান।

এছাড়াও ৪ বছর আগে হজরত শাহ আব্দুর রহিম র. এর নামে একটি হাফিজি মাদরাসা স্থাপনের জন্য মাজার কমিটির অর্থ সম্পাদক মশাহিদ আহমদ রনি মাজারের ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে তার নিজ নামে জমি ক্রয় করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি মাজার কমিটিকে জানান, উক্ত জমি তার অর্থ দিয়ে ক্রয় করা। পরবর্তীতে উক্ত জমি মাজার কর্তৃপক্ষের কাছে সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে। এভাবে তিনি মাজারের অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন। হাফিজি মাদরাসার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। তবে মাজার গেইটে মাজার স্থাপন করা হবে বলে সাইনবোর্ড লাগানো আছে। মাজারের আগত লোকজন এই সাইনবোর্ড দেখে টাকা-পয়সা দান করেন। আর উক্ত টাকা মাজার কটির অর্থ সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। এমনকি মাজারে ভক্তদের দেয়া গরু-ছাগলও তারা নিয়ে যান। এছাড়াও রেজুলেশন অনুযায়ী টাকা ব্যাংকে জমা দেয়া হচ্ছে না।

Manual8 Ad Code

স্মারকলিপিতে বলা হয়ে বর্তমান জরিপে হজরত শাহ আব্দুর রহিম র. মাজার ১ নম্বর খতিয়ানভ‚ক্ত রয়েছে। তাই মাজারটি ব্যক্তি বিশেষ বা কমিটির খেয়ালখুীম মত না চালিয়ে সরকারী প্রশাসন অথবা ওয়াকফ প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালনা করার ব্যবস্থা গ্রহণ, মাজারের অর্থ আত্মসাৎ ও লুটপাট সম্পর্কে প্রশাসনিক যথাযথ তদন্তক্রমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, মাজারের নামে পূবালী ব্যাংক লালাবাজার শাখায় থাকা একাউনটি জব্দ করা, মাজারে ভক্তদের টাকা-পয়সা ও গরু-ছাগল সরকারী ব্যবস্থাপনায় গ্রহণ করার জোর দাবী জানান। বিজ্ঞপ্তি

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..