মাদ্রাসাছাত্রীকে গণধর্ষণের পর ফেলে দেয়া হয় নদীতে, ৫ লাখ টাকায় ওসির সমঝোতা!

প্রকাশিত: ৯:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৮

মাদ্রাসাছাত্রীকে গণধর্ষণের পর ফেলে দেয়া হয় নদীতে, ৫ লাখ টাকায় ওসির সমঝোতা!

Manual7 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মাদ্রাসাছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা পাঁচ লাখ টাকায় সমঝোতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পিতৃহারা প্রবাসী মায়ের এতিম ওই শিশুটি এখন পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ভয়ে তটস্থ তার পুরো পরিবার। পুলিশের সহায়তায় ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে গোটা চরাঞ্চলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

রোববার মেঘনা নদীর দড়ি নবীপুর এলাকায় শিশুটিকে গণধর্ষণের পর নদীতে ফেলে দেয় ধর্ষকরা। পরে সাঁতরে গভীর রাতে বিবস্ত্র অবস্থায় বাড়ি ফেরে সে। নির্যাতিত শিশুটির বাড়ি সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর গ্রামে। সে স্থানীয় আলিয়া মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে মেয়েটির পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়েটির বাবা অকালে মারা যান। এরপর মেয়েটির মা চাকরি করতে পাড়ি জমান বিদেশে। আর মেয়েটি মামার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করত। গত রোববার সন্ধ্যায় সে পাশের কালাই গোবিন্দপুর বাজারে কসমেটিক্স কিনতে যায়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে কালাই গোবিন্দপুর নওয়াব আলী স্কুলের পাশ থেকে একই গ্রামের সাদ্দাম মিয়া (২৫), সজিব (২২) ও ফরহাদ (২৩) তাকে অপহরণ করে নৌকায় তুলে মেঘনা নদীর মাঝখানে নিয়ে যায়। নৌকায় পালাক্রমে শিশুটিকে ধর্ষণ করে তারা। ধর্ষণের পর শিশুটিকে বিবস্ত্র অবস্থায় নদীতে ফেলে দেয়। পরে কালাই গোবিন্দ্রপুরের ইমানের বাড়িতে শিশুটি আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা ও স্বজনরা শিশুটিকে উদ্ধার করে।

এদিকে ধর্ষকরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লাগেন ইউপি সদস্য মোস্তফা। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য কামাল, আলী নূর ও ফজলুকে নিয়ে নির্যাতিত মেয়েটির পরিবার ও ধর্ষকদের মধ্যে সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজিত গ্রাম্য সালিশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেককে দেড় লাখ টাকা করে মোট সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে এই ঘটনায় কোনো মামলা না করার জন্য নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

Manual2 Ad Code

কিন্তু কথামতো জরিমানার টাকা না দেওয়ায় বুধবার সকালে নরসিংদী সদর থানা পুলিশের কাছে যায় মাদ্রাসাছাত্রীর পরিবার। কিন্তু পুলিশও তাদের অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে উল্টো পাঁচ লাখ টাকায় ঘটনাটি সমঝোতা করে দেয়।

Manual3 Ad Code

গণধর্ষণের মতো ঘটনা পুলিশের হস্তক্ষেপে ধামাচাপা দেওয়ার খবরে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনা সমঝোতা হওয়ায় পুলিশ ও প্রভাবশালীদের ভয়ে এই ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি নির্যাতিত ছাত্রী ও তার স্বজনরা। মাদ্রাসাছাত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাকে বাধা দেন তারা মামা।

মাদ্রাসাছাত্রীর মামা সাংবাদিকদের বলেন, ‘যা হয়েছিল তা গ্রাম্য মাতব্বর ও পুলিশ সমাধান করে দিয়েছে। আমরা এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।’ টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিচ্ছেন- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি পালিয়ে যান।

Manual7 Ad Code

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে গ্রাম্য সালিশের বিচারক ইউপি সদস্য মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেয়েটি আমাদের জানিয়েছে, একে একে তিনজন তাকে ধর্ষণ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযুক্ত তিনজনকে দেড় লাখ টাকা করে জরিমানা করেছিলাম। কিন্তু তারা জরিমানার টাকা না দেওয়ায় মেয়েটির পরিবার থানায় যায়। সেখানে ওসি সাহেব বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন। তাই থানায় কোনো মামলা হয়নি।’

Manual2 Ad Code

পুলিশের অপর একটি সূত্রে জানা যায়, সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান পাঁচ লাখ টাকায় গণধর্ষণের ঘটনাটি সমঝোতা করেন। এর মধ্যে নির্যাতিত ছাত্রীর পরিবারকে দেওয়া হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। আর বাকি টাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শাহারিয়ার আলম ও থানা পুলিশের মধ্যে ভাগভাটোয়ারা হয়। এদিকে সাংবাদিকরা সরব হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে পুলিশ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তড়িগড়ি করে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় মাদ্রাসাছাত্রীর নানির দায়ের করা অভিযোগটি মামলাটি হিসেবে নথিভুক্ত করতে বাধ্য হয় পুলিশ।

জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে সত্য। কিন্তু পুলিশ সমঝোতা করেছে- এটা সত্য নয়। আমরা নির্যাতিতার পরিবারকে বুঝিয়েছি। এ কারণে অভিযোগ নিতে বিলম্ব হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছি। তা ছাড়া বিষয়টি ওসি (তদন্ত) সালাউদ্দিন ডিল করেছেন। তিনি এই ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।’

টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, ‘টাকা নিলে মামলা নিলাম কীভাবে?’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা কেউ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে, সেটা যদি পুলিশও হয় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..