মানবতার আরেক নাম ইন্সপেক্টর মাহমুদ হাসান রুবেল

প্রকাশিত: ১:০০ পূর্বাহ্ণ, মে ৩০, ২০১৮

মানবতার আরেক নাম ইন্সপেক্টর মাহমুদ হাসান রুবেল

Manual4 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কুমিল্লাতে পাগলী হয়েছে মা, বাবা হয়নি কেউ। শনিবার বিকেল ৩টা, কুমিল্লা সদরের আমতলী। রাস্তার পাশে প্রায় এক ঘন্টার ও বেশী সময় পরেছিলো। ময়লা দেহে নোংরা কাপড়ে পাগলীটার দেহের সাথে নাড়ীভুঁড়ি জড়িয়ে ছিলো সদ্যভূমিষ্ঠ এক নবজাতক নিষ্পাপ ফুটফুটে মানব সন্তানের। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সভ্য ডিজিটাল পৃথিবীর সুস্থ মানুষগুলো জটলা করে দেখছিলো একটু দুরে দাঁড়িয়ে নাকে কাপড় চাপা দিয়ে। মাহসড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে ঘটনার প্রায় ১ঘন্টা পর কেউ একজন বড় মেহেরবানী করে ফোন দেয় কোতোয়ালি ধানাধীন নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশের আইসি ইন্সপেক্টর রুবেলের ফোনে। ফোন পেয়ে ফাঁড়ীর ট্রহল পুলিশের একটি দলকে পাঠায় ঘটনাস্থলে। পাওয়া যায় সত্যতা, সেটে পুনরায় ঘটনা জানায় এএসআই রাজু ও এএসআই নূর আলম। একজন মানুষিক ভারসাম্যহীন অসহায় নারীর দেহের সাথে সদ্যজাত শিশুটির নাড়ীভুঁড়ি জড়িয়ে পরে আছে রাস্তায় অথচ নাকে কাপড় চেপে দাঁড়িয়ে তামশা দেখা মানুষগুলো কেউ সহায়তা করছে না। ঘটনা শুনে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নিজেই ছুটে যান ইন্সপেক্টর রুবেল। যেন চলচ্চিত্রের সেই চিরায়ত নায়কী ভুমিকার একজন মানুষ। বাংলা সিনেমার নায়ক রুবেলের ভুমিকায় অবতারণা ঘটে এই পুলিশ রুবেলের। আমাকে রাস্তায় পেয়ে তুলে নিলেন মোটরসাইকেলে, ঘটনার বিস্তারিত জানেলের মোটরবাইকে বসেই। জটলা করে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের কয়েকজনের কাছে অনুনয় আর আবদারের সুরে বললেন “বোন একটু আসেন দয়াকরে আমারা পুরুষ মানুষ তো পারছি না। পাগল হলেও তো আপনাদের মতই একজন নারী সে ” কথা শুনে এগিয়ে আসেন দুজন মাঝ বয়সী মহিলা এগিয়ে আসেন। আশেপাশের পুরুষগুলোকে সরিয়ে দিয়ে গোল করে ঘিরে দাঁড় করিয়ে দেন। একজন মহীয়সী নিজের হাতে নাড়ীভুঁড়ি গুলো ছাড়িয়ে দেন পাগলীর দেহ থেকে। বেশ কয়েক বার ফোন দেয়ার পরও যখন হাসপাতালের গাফেলতিতে এম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন না। বেজায় বিরক্তি নিয়ে মুখ কালো করে জানালেন আমাকে “দেখেছেন তো হাসপাতালগুলোর অবস্থা ভেবেছে রাস্তার পাগলী গরিব টাকা পাবেনা মনে করে হেলামী কতটা করছে, আরে ভাই বললাম আমি খরচ দেবো তবু তারা এখনো আসাছে না ।” বালুতে মাখামাখি নবজাতক শিশুটিকে পুলিশ ভ্যানে তুলতে বলেন তৎক্ষনিক। রক্তাক্ত ব্যথায় কাতর পাগলী জননী কে গাড়ীতে তোলা যাচ্ছিলো না ষ্ট্রেচার ছাড়া। একজন নারীর কোলে তুলে পুলিশ পিকাপে শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে এম্বুলেন্স সাথে করে এম্বুলেন্স নিয়ে আসার জন্য পাঠান এস আই দয়াল হরি কে।

কয়েকজন মহিলার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছিলাম পুরো ঘটনা। কান দিলাম তাদের কথায় মনে হয় তারা পুলিশের একজন অফিসারের এমন আচরনে খুবই আশ্চর্য হয়েছেন। পুলিশ সম্পর্কে তাদের ধারনা হয়তো ভিন্নই ছিলো। রাস্তার এক নাম পরিচয়হীন ভবঘুরে পাগলের জন্য এতোটা মানবিক কি করে হয় বাংলাদের পুলিশ বাহিনীর!!
পাশের জনকে বলছিলো
“দেখছেন ভাবী পুলিশটা কত ভালো মানুষ গো, এমন তো দেখছিনা কোন পুলিশ।
ভালা ঘরের পোলাপান হলে ভালো কাজই করে” জবাবে জানায় পাশের জন। কথাগুলো খুব মনোযোগী হয়ে শুনছিলাম আমি ভিডিও দিকে খেয়ালই ছিলো না।
আসলে আমরা বাঙ্গালীরা এমনই একটু বেশী আবেগ প্রবণ পুলিশে বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ আর অনিয়মের নানা তথ্য যেমন বিব্রত করে ঠিক তেমনি কনস্টবল পারভেজ আর ইন্সপেক্টর মাহমুদ হাসান রুবেলদের মত পুলিশের একটু ভালো কাজ, একটু মানবিকাতা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার জন্মদেয় তারচেয়ে হাজারোগুন বেশী। এমন কিছু ভালো কাজই পুলিশের প্রতি আস্থা আর বিশ্বাসের জন্ম দেয়। সত্যই তো এদেশের পুলিশ জনগনের বন্ধু।
আমরা এদেশের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশ পুলিশের এই রুপটাই তো দেখতে চাই। চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশের যে ভূমিকা মানুষ দেখেছে তাতে এই বাহিনী এখন জনগনের প্রশংসায় ভাসছে। মাদকের বিরুদ্ধে এমন কঠোর ভূমিকায় যদি পুলিশের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয় তবে এদেশ থেকে মাদক নামের অভিশপ্ত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে ইনশাআল্লাহ। গত দুদিন আগে মাদক বিরোধী অভিযান কে স্বাগত জানিয়েছে কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকার তরুণ প্রজন্ম। জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে ধন্যবাদ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ এবং আননদ মিছিল করেছে এলাকার তরুণ ছাত্র এবং যুব সমাজ।

এরপর এম্বুলেন্স এনে পাগলীকে স্ট্রেচারে করে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসা হয় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের বাজারের ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালে। মা এবং শিশুর যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ইন্সপেক্টর মাহমুদ হাসান রুবেল যাবতীয় খোজ খবর নিতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন ডাক্তার এবং হাসপাতালের পরিচালক বারি সাহেবের সাথে। পাগল বা গরিব বলে যেন চিকিৎসার কোন ত্রুটি না হয় টাকার জন্য যেন চিন্তা না করেন সেই তাগাদাও দেন বারবার, জানালেন হাসপাতাল পরিচালক রারি সাহেব নিজেই।

Manual5 Ad Code

পরদিন মানে আজ রবিবার সকালে আবারো গিয়ে দেখে আসেন। নার্সের কাছে শুনলাম কিছু ফলমূলও কিনে দিয়ে এসেছেন পাগলীটাকে। কথায় কথায় জানালো নার্স ( নামটা মনে আসছে না এ মূহুর্তে) বললো “সাংবাদিক ভাই পুলিশের এমন অফিসার জিবনে প্রথম দেখলাম “

Manual6 Ad Code

বর্তমানে মা এবং নবজাতক শিশুটি (মেয়ে) দুজনেই ভালো আছে বলেও জানালেন হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার। অনেকেই ফুটফুটে বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে যোগাযোগ করছেন বলেও জানালো ইন্সপেক্টর মাহমুদ হাসান রুবেল।

Manual2 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

May 2018
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..