সিলেট ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ২:১৩ পূর্বাহ্ণ, মে ২৩, ২০১৮
ঢাকা, ২২ মে- দেশজুড়ে চলছে মাদক বিরোধী অভিযান। সরকার মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ এ অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসা ও পাচারের সঙ্গে জড়িত এ পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে সহস্রাধিক। বিশেষ এ অভিযানে ইতিমধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে। অনেকে ‘গা ঢাকা’ দিয়েছে। তবে বিশেষ এই অভিযানে যারা নিহত হয়েছে তাদের বেশির ভাগই সাধারণ ব্যবসায়ী। প্রভাবশালী ও রাঘব বোয়ালরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই অভিযান চলবে। আমরা এটাকে একটা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই। মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলবে। এ যুদ্ধে আমরা জিততে চাই। মাদকের সঙ্গে যারাই জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যত বড় প্রভাবশালীই হোক কেউ ছাড় পাবে না। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে।,
সারাদেশে যে সব প্রভাবশালী মাদক ব্যবসা করছে ইতিমধ্যে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। রাজনীতিক, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের ছত্র ছায়ায় শুধু ঢাকার মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে ৩৭ জন গড়ফাদার। তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে প্রায় এক হাজার মাদক ব্যবসায়ী ঢাকার বিভিন্ন স্পটে মাদক কেনা বেচা করছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা এক তালিকায় এদের নাম ওঠে এসেছে।
এছাড়া ডিএনসি, র্যাব, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ড ও দুটি গোয়েন্দা সংস্থা মাদক কারবারিদের আলাদা তালিকা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এলাকাভিত্তিক কারবারিদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব তালিকায় সহস্রাধিক মাদক কারবারির নাম আছে।
এদিকে ডিএনসি গত ডিসেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি তালিকা দেয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ১৪১ জনের তথ্য দেওয়া হয়। সব সংস্থার তথ্য নিয়ে সারা দেশের মাদক কারবারিদের সমন্বিত তালিকা তৈরিরও কাজ চলছে। বিদ্যমান সব তালিকায় দুই শতাধিক শীর্ষ কারবারির তথ্য পাওয়া গেছে, অভিযানে যাদের নাগাল পাচ্ছে না পুলিশ, র্যাব ও ডিএনসি। মাদকের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাদক ব্যবসায় জড়িত গড়ফাদারদের নাম বিভিন্ন সংস্থার তৈরি করা তালিকায় ওঠলেও আড়ালেই থেকে গেছেন তারা। ধরা পড়ছে শুধু মাদকসেবী ও খুচরা বিক্রেতারা। এখন সারাদেশে যে বিশেষ অভিযান চলছে সেখানে সহস্রাধিক গ্রেপ্তার ও ২৭ জন নিহত হলেও এই তালিকায় নেই শীর্ষ কোনো ইয়াবা বা ফেনসিডিল কারবারির নাম। ফলে সাধারণ মাদক ব্যবসায়ী যারা তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। আর বড় ব্যবসায়ীরা পাড়ি জমাচ্ছেন দেশের বাহিরে।
এ বিষয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্টো উপ অঞ্চলের উপ পরিচালক মুকুল জ্যেতি চাকমা বলেন, ‘‘আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু যারা বড় ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালী তারা আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারা সরাসরি মাদকের সঙ্গে জড়িত নয়। তারা বিভিন্ন ওয়ে অবলম্বন করে মাদক ব্যবসা করছে। তাদেরকে ধরার প্রমান তারা রাখে না। ফলে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অনেকে। আবার ধরলেও আইনের মাধ্যমে তারা ছাড়া পেয়ে যায়। এ জন্য দুদক ও ইনকাম ট্যাক্স মিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে তাদেরকে ধরা হয়ত সম্ভব হবে।’’
এদিকে গত রোববার রাজধানীতে র্যাবের মাদক বিরোধী ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক দেশব্যাপি ক্যাম্পেইন এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এখন থেকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ঘোষণা ও সারাদেশে পুলিশ, র্যাব ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কঠোর এ অবস্থানের কারণে অনেকটা হিম শীতল অবস্থা বিরাজ করছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকের আগ্রাসন থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে গড়ফাদারদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শুধু কিছু সংখ্যাক খুচরা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না। সামগ্রীকভাবে যে সব গড়ফাদাররা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সূত্র: একুশে টিভি
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd