সিলেট ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালকে হুমকি দাতাকে এই নাসিমা। এ নিয়ে গোয়াইনঘাটে নানা আলোচনা সমালোচনার ঝড় বাইছে।
সোমবার সকাল ১১টায় সিলেট সদর উপজেলার খাদিম নগর ইউনিয়নের ছামাউরা কান্দি গ্রামে এ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন কালে জানা যায়, ছামাউরা কান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের পুত্র সৌদি প্রবাসী নজরুল ইসলামের সাথে এই নাসিমার ২য় বিয়ে হয় ৩ বছর পূর্বে। নজরুল ইসলামের ১ম স্ত্রীর ২টি কন্যা সন্তান ও ১টি ছেলে রয়েছে। নজরুল ইসলাম দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ সৌদি আরবে প্রবাসে রয়েছেন। নজরুলের ১ম স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় নাসিমা সিলেট শহরের মদিনা মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে ছামাউরা গ্রামের অলিউর রহমান, আতিক মিয়া, রিয়াদ, জসিম, বাবুল, আনা মিয়া, হাছেন, ছাইফুল, আব্দুল্লাহ, ইছমাইল আলীসহ অর্ধশতাধিক লোক অভিযোগ করে বলেন, নজরুলের সাথে নাসিমার বিয়ে হওয়ার পর পরই তিনি বালু, পাথরসহ বিভিন্ন ব্যবসায় নাসিমা জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে চেঙ্গেরখাল বালু মহাল থেকে ড্রেজার নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন করে বাধাঘাট সংলগ্ন ফুটিকাটা নামক স্থানে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ ঘনফুট বালু স্টোক করে তা চড়া দামে বিক্রি করেন। তিনি এ বালু মহাল থেকে বালু সংগ্রহের সময় সরকারকে কোন ধরনের রয়েলিটি দেননি। ছামাউরা কান্দিসহ বাধাঘাট এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষজন চেঙ্গেরখাল বালু মহাল থেকে বালু সংগ্রহ করতে গেলে এই নাসিমা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বাধা প্রদান করেন। অনেক সময় জেল ও জরিমানা করান তিনি।
এই এলাকায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ভাতিজি পরিচয় দিয়ে এই এলাকার জনগণকে তিনি আতংকে রেখেছেন। এই এলাকার অর্ধশতাধিক নৌকা উক্ত বালু মহাল থেকে বালু সংগ্রহ করতে না পেরে নৌকার মালিকসহ কয়েক শতাধিক পরিবার অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। যেমনি ভাবে বালু সংগ্রহ করতে বাধা দেন তেমনি বালুর সাইট এলাকার কেউ ভাড়া নিতে চাইলে তিনি বাধা প্রদান করেন। অনেক সময় তিনি পুলিশ সদস্য নিয়ে এলাকায় চলাফেরা করেন। ফলে এলাকার সাধারন মানুষ উনার আচরণ নির্বিঘ্নে সহ্য করতে হয়।
বছর খানেক পূর্বে নাসিমার মালিকানাধীন একটি ড্রেজার নৌকায় কেড়ে নেয় হাটখোলা ইউনিয়নের জৈইনকার কান্দি গ্রামের ময়না মিয়ার পুত্র সেবুল হক (১৮) তাজা প্রাণ। ওই সময় তিনি প্রভাব খাটিয়ে ওই মৃতকে আড়াল করতে সক্ষম হন। তখন থেকে এই এলাকার সাধারন মানুষ তাকে আরো বেশি ভয় পায়। এই নাসিমা প্রশাসনের সর্বোচ্ছ কর্তা ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা রয়েছে বলে তিনি সব সময় মানুষদের বলে থাকেন। ফলে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা তার সাথে কথা বলতে ভয় পান। সর্বশেষ রবিবার বিকাল ৪টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন এই নাসিমা। নাসিমা নিজেকে রাষ্ট্রপতির ভাতিজী হিসেবে পরিচয় দেন। অবৈধভাবে উপজেলার চেঙ্গেরখাল বালু মহালে বালু উত্তোলনের দায়ে একটি নৌকাকে জরিমানা করা হলে তিনি এ হুমকি দেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার চেঙ্গেরখাল বালু মহাল গত ১ বছর ধরে ইজারা বিহীন অবস্থায় রয়েছে। সেখান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে খবর পেয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সেখানে অভিযানে যায় ভ্রাম্যমান আদালত। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ময়নুল হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চন্দ্র দাস, সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রাজী উল্লাহ এবং নন্দিরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল। ভ্রাম্যমান আদালত ঘটনাস্থলে পৌছে একটি ড্রেজার নৌকা আটক করে। আটককৃত ড্রেজার নৌকার মালিক সিপন আহমদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় নাসিমা ঘটনাস্থলে পৌছে জরিমানার কারণ জানতে চান। তার বেপরোয়া আচরণে বিব্রতবোধ করেন ভ্রাম্যমান আদালতের কর্মকর্তারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, নাসিমা নিজেকে রাষ্ট্রপতির ভাতিজির পরিচয় দিয়ে ইউএনও বিশ্বজিত কুমার পালসহ উপস্থিত কর্মকর্তাদের সাথে বেপরোয়া আচরণ করেন। তিনি ইউএনও কে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। মহিলার আচরণে অনেক অপমানিত হয়ে তাহারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd