হিজড়া চাঁদাবাজের অসহনীয় দৌরাত্ম্য : ‘ওই ট্যাকা দে’ না দিলে যাব না’

প্রকাশিত: ৪:১২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ‘ওই ট্যাকা দে’, টাকা না দিলে যাব না’ এমন জোর আবাদারের সঙ্গে রাজধানীবাসীর সবাই কমবেশি পরিচিত। রাস্তাঘাটে, শপিংমলে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে, ফুটপাতে কোথায় নেই তাদের দৌরাত্ম্য? এমনকি বাসাবাড়িতে, বিয়ে অনুষ্ঠানে কিংবা যে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানেও তাদের উৎপাত দিন দিন বাড়ছেই।

বলছিলাম হিজড়াদের ‘সাহায্য ব্যবসা’র কথা। সমাজে অসহায় হিসেবে আগে সাহায্যের জন্য মানুষের কাছে হাত পাততো তারা। মানুষজনও স্বেচ্ছায় সাহায্য করত তাদের। কিন্তু এখন আর সে দৃশ্য নেই। এখন যেন পেশাদার চাঁদাবাজের ভূমিকায় রাজধানী চষে বেড়াচ্ছে হিজড়া বাহিনী!

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে চাঁদাবাজি নিয়ে নিজেদের দ্বন্দ্বে প্রাণ হারিয়েছেন একজন হিজড়া।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে গিয়ে হিজড়াদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এক দল শিক্ষার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, আমরা পাঁচ-ছয় জন বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে গেলে দুজন হিজড়া এসে টাকা দাবি করে। আমরা পরে আসতে বললে সে বলে, ‘এখন টাকা দিবি। আমি (হিজড়া) টাকা না নিয়ে যাব না।’

তখন আমরা বলি, আপনি কি চাঁদাবাজি করবেন? এটা তো চাঁদাবাজির মতো জোর করে টাকা দাবি করা। তখন সে আমাদের হুঁমকি দিয়ে বলে, ‘টাকা না দিলে পোশাক খুলে ফেলব’। তখন আমরা লজ্জাজনক পরিস্থিতি এড়াতে তাকে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি।

শিক্ষার্থীরা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, উদ্যানে চাঁদাবাজি করা ওই হিজড়া নিজের নাম ‘অহনা’ বলে পরিচয় দিয়েছে এবং তার গুরু মুক্তা হিজড়া বলে জানিয়েছে। অহনা হিজড়া দূরে অবস্থান করা স্বাধীনতা জাদুঘরের নিরাপত্তাকর্মীদের দেখিয়ে বলতে ছিল, ‘তারা আমাকে চেনে তোমরা অভিযোগ করলেও কিছু বলবে না।’

এ বিষয়ে জানতে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, বই মেলা উপলক্ষে উদ্যানের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ৩০০ পুলিশ সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। তাই উদ্যানে হিজড়া ঢোকার কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব।

রাজধানীতে চলমান বাসেও জোরজবরদস্তি করে চলে হিজড়াদের চাঁদা সংগ্রহ। আরমান শাহরিয়ার নামে এক যাত্রী যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি তিনি পাবলিক বাসে করে আগারগাঁও যাচ্ছিলেন। পথে হুট করে বাসে উঠে পড়ে একদল হিজড়া।

তারা বাসের প্রতি আসনে যেয়ে যেয়ে টাকা তুলছিল। যে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাকেই তারা বাসভর্তি যাত্রীর সামনে অপদস্ত করেছে। একযাত্রী তাদের এমন আচরণের প্রতিবাদ করে টাকা দিবে না বলে জানালে তাকে প্রকাশ্যে চুম্বন করে বসে। পড়ে নিরুপায় হয়ে টাকা দিতে বাধ্য হন ওই যাত্রী।

হিজড়াদের হেনস্তা থেকে বাদ যাননি এই প্রতিবেদক নিজেও। সাইন্সল্যাবে কয়েকজন হিজড়া টাকা চাইলে ভাংতি নাই জানালে তারা ভাংতি দেয়ার কথা বলে ১০০ টাকার নোট নিয়ে চলে যায়।

হিজড়ারা নারীর বেশে কেন?

সারা দেশের অধিকাংশ হিজড়াকেই দেখা যায় নারীর পোশাকে থাকতে। পুরুষের পোশাকে হিজড়াদের খুব কমই চোখে পড়ে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন্স অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া হক যুগান্তরকে বলেন, এখনও সমাজে নারীর অবস্থান দুর্বল। এ জন্য নারীর বেশে পুরুষ এবং নারী উভয়ের কাজ থেকে সহানুভূতি পেতেই হয়ত তারা এ বেশ বেছে নেন।

এ জেন্ডার বিশেষজ্ঞ বলেন, হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিলেও এখনও তাদের সামাজিক অবস্থানের কোনো পরিবর্তন আসেনি। কারণ যারা আইন তৈরি করেন কেবল তারাই জানেন, যাদের জন্য আইন তাদের ওপর এর কোনো দৃশ্যমান প্রয়োগ এখনও হয়নি। হিজড়াদের অবস্থান পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে তাদের পরিবার থেকে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এটা মানতে হবে যে তারাও মানুষ। পরিবারে হিজড়াদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়লে হিজড়া সমস্যা কমে যাবে।

অস্ত্র ঠেকিয়ে আর হাততালি দিয়ে চাঁদাবাজি এক নয়

মিরপুরের প্রভাবশালী হিজড়াদের মধ্যে অন্যতম রাখি হিজড়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে না। কারণ অস্ত্র ঠেকিয়ে চাঁদাবাজি আর জীবনের জন্য হাততালি দিয়ে চাঁদাবাজি এক নয়। আমাদের পরিবার নাই, চাকরি নাই, শিক্ষা নাই। আমরা বাঁচব কি খেয়ে? আমাদের সন্তান নাই। ভবিষ্যতে অসুস্থ্য হলে দেখার মানুষ নাই।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2018
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728  

সর্বশেষ খবর

………………………..