হলুদ সাংবাদিকতা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে!

প্রকাশিত: ১:৪২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংবাদ মাধ্যমের একটা অংশে ভিত্তিহীন বিষয়কেও খবর বানানোর প্রবণতা আছে৷ আইনে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা থাকলেও খুব কম ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি প্রতিকার পান বলে মনে করেন অনেকে।

ভুয়া সংবাদ বিষয়টা কি?
আমরা তো আসলে ‘ভুয়া সংবাদ’ নামে সংবাদের কোনো ক্যাটাগরি আগে শুনিনি৷ একটা ছিল ‘হলুদ সাংবাদিকতা’৷ যেটা সংবাদ না আপনি সেটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করতেন৷ বা এমন সংবাদ যেটা বাস্তবে নেই, আরেকজনের জন্য মানহানিকর৷ এই বিষয়গুলোর সঙ্গে আমরা একসময় পরিচিত ছিলাম৷ এখন ‘ভুয়া সংবাদ’ বিষয়টা অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঝে মধ্যে শোনা যায়৷ ‘ভুয়া সংবাদ’ আমি যেভাবে বুঝি- যেটার আসলে কোনো ভিত্তি নেই৷
হলুদ সাংবাদিকতা ও ভুয়া সংবাদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যটা কি?
এই দু’টোর মধ্যে যতটুকু না পার্থক্য তার চেয়ে মিলটাই বেশি৷ হলুদ সাংবাদিকতায় সেই বিষয়টাই তো ছিল৷ যেটা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আপনি লিখলেন, আসলে সেটার কোনো ভিত্তি নেই৷ বা অতিরঞ্জনভাবে লিখছেন৷ আমি যদি বুঝে থাকি, ভুয়া সংবাদ হলো আসলে কোনো সংবাদ হয় না, কিন্তু আমি একটা সংবাদ বানালাম৷ সুতারাং দু’টোর মধ্যে যতটুকু না পার্থক্য, তার চেয়ে মিল কিন্তু বেশি৷
Working Out Never Looked So Good. Thanks to This!
LEARN MORE ♥ 12,757 Ads by Adblade
বাংলাদেশে এই ধরনের সাংবাদিকতা এখন কোন পর্যায়ে আছে?
এটা তো আসলে পরিমাপ করা কঠিন৷ আপনি যদি আমাকে বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কোন পর্যায়ে আছে, বা বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট কোন পর্যায়ে আছে, তাহলে আমি একটা বিশ্লেষণ আপনাকে বলতে পারব৷ কিন্তু হলুদ সাংবাদিকতা বা ভুয়া সংবাদ পর্যবেক্ষণ করা বা এটার মূল্যায়ন করা খুব কঠিন কাজ৷
আমাদের সমাজে এই ধরনের সংবাদের প্রভাব কেমন?
নিশ্চয়ই এর একটা প্রভাব দেখা দিয়েছে, না হলে তো আর আমরা এই আলোচনা করতাম না৷ সেটার প্রভাব তো নিশ্চয়ই ইতিবাচক নয়৷ সংবাদকর্মী হতে গেলে তার যে দায়-দায়িত্ব রয়েছে, সংবাদ প্রকাশ করতে গেলে যে দায়-দায়িত্ব নিয়ে করতে হয়, এখন আপনি যদি তার উল্টোটা করেন, তাহলে নিশ্চয়ই সমাজে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ হলুদ সাংবাদিকতাকে আমি সাংবাদিকতা বলতে চাই না৷
সেই ধরনের সংবাদে যদি একজন ব্যক্তির মানহানি ঘটে, যেটা ঘটনা নয়, আপনি সেটা লেখেন, তাহলে পাঠকদের মধ্যে একটা অংশ সেটা বিশ্বাস করলেও করতে পারে৷ তাতে তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিনতি খারাপের দিকে যেতে পারে৷ সংবাদের উদ্দেশ্যই ছিল জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা আনা৷ আপনি যদি সেটার উল্টোটা করেন, তাহলে আপনি জবাবদিহিতার জায়গায় যাচ্ছেন না৷ আপনি যে সংবাদটি প্রকাশ করলেন, সেটি ব্যক্তি হোক, প্রতিষ্ঠান হোক বা কোনো মহল নিয়ে হোক, এর একটা নেতিবাচক প্রভাব তো পড়বেই৷ এভাবে তো সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হবে৷
এই ধরনের সংবাদে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা কী প্রতিকার পান? আর আমাদের দেশে প্রতিকারের কী ব্যবস্থা আছে?
আমাদের দেশে আইন আছে৷ এমনকি মৌখিকভাবেও আপনি যদি কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন, তার জন্যও আইন আছে৷ কিন্তু বাস্তবে যেটা ঘটে, এই আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়াটা তো একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ একজন ব্যক্তি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তিনি যদি প্রভাবশালী হন, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন, মামলা করতে পারেন৷ অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা সেটা করেন৷ এটা যদি গ্রামে-গঞ্জে হয়, আমাদের অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি, তাতে তাঁরা আদালতে শরণাপন্ন হন না৷ অনেক সময় সম্ভব হয় না৷ এক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ পক্ষ ক্ষতিগ্রস্তই থেকে যাচ্ছে৷
আমাদের যে আইন আছে ,সেটা কতটা সময়োপযোগী বা সেখানে কী ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে?
আমাদের বিদ্যমান আইনে প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে৷ এটা সংবাদপত্র হলে আপনি প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারেন৷ সেখানে কোনো আপস বা সালিশের ব্যবস্থা হতে পারে৷ এখানে যার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেই ব্যক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে একটা সালিশ হতে পারে, যেটা করতে পারে প্রেস কাউন্সিল৷ তিনি আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন৷ আপনি জানেন যে, সম্প্রতি এই ধরনের ঘটনায় একটা উন্নতি হয়েছে৷ সেটা সংবাদিকদের জন্য ভালো হয়েছে৷ যে কেউ এই ধরনের মামলা করলেই তাকে গ্রেফতার করা যাবে না৷ তাকে হাজির হতে বলা হবে৷ তবে এই আইনগুলো যখন করা হয়েছে তখন অনলাইন মিডিয়া ছিল না৷ তখন সামাজিক মাধ্যমগুলো ছিল না৷ সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এই বিধানগুলো করা হয়েছিল৷ উপনিবেশিক আমল থেকে এখন পর্যন্ত যে এই আইনগুলোর খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে, তা নয়৷ বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই আইনগুলো মোটামুটি একই ধরনের৷

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..