ফেঞ্চুগঞ্জ সারকাখানায় কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি চুরি !

প্রকাশিত: ১১:৫৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২৩

ফেঞ্চুগঞ্জ সারকাখানায় কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি চুরি !

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : দেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রথম সারকারখানা স্থাপিত হয়েছিল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে। ১৯৬১ সালে স্থাপিত এই কারখানা একসময় দেশের সারের চাহিদার বড় অংশের যোগান দিত।

দীর্ঘদিন থেকে যন্ত্রপাতি সংস্কার না হওয়া এবং পরিবর্তিত প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে না পারায় ২০১৬ সালের ৩০ জুন কারখানাটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর কারখানাটির যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য চারদফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় বিক্রি সম্ভব হয়নি। আর এই সুযোগে কারখানার অন্তত ৫শ’ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি লুট হচ্ছে। চুরি করে যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট।

Manual2 Ad Code

ফেঞ্চুগঞ্জ সারকাখানার যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য গত ১ আগস্ট চতুর্থ দফায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। গত সোমবার সকাল ১১টা ছিল দরপত্র জমার শেষ সময়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ দরপত্র জমা না দেওয়ায় পঞ্চম দফায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার উপ মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এটিএম বাকী।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কারখানাটি বিলুপ্ত ঘোষণার প্রায় চারবছর পর ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্ক্র্যাপ হিসেবে কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রির জন্য প্রথম দরপত্র আহ্বান করে বিসিআইসি। ওই বছরের ১৪ অক্টোবর ১০৩ কোটি টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন সিলেটের মেসার্স আতা উল্লাহ সাকের নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ মূল্য দাঁড়ায় ১১৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি নিরাপত্তা জামানতের ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা দিলেও পরবর্তীতে নানা জটিলতায় কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।

Manual1 Ad Code

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৪ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২১১ কোটি ৪ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় মেসার্স সাইদুর রহমান নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ভূয়া পে-অর্ডার দাখিল করায় ওই দরপত্রও বাতিল করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর তৃতীয় দফা দরপত্রে ২৭৫ কোটি টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় মেসার্স এম এম বিল্ডার্স। ওই প্রতিষ্ঠানও নিরাপত্তা জামানত হিসেবে ২৭ কোটি টাকার জাল পে-অর্ডার দেওয়ায় কার্যাদেশ বাতিল হয়। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট চতুর্থবারের মতো এলটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

সারকারখানার উপ মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এটিএম বাকী জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়ে টেন্ডার বক্স খোলার পর কোনো শিডিউল পাওয়া যায়নি। তাই পুণরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানাটিতে প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। বিক্রি না হওয়ায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি কারখানা কমপ্লেক্সের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এই সুযোগে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট মূল্যবান যন্ত্রপাতি খুলে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। কারখানা বন্ধ ঘোষনার পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি চুরি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। গত এপ্রিলে চোরাই যন্ত্রপাতির চালানসহ অয়েছ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া চুরির অভিযোগে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। আটক করা হয়েছে কমপক্ষে ১০ জনকে।

Manual8 Ad Code

প্রসঙ্গত, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (এনজিএফএফএল) ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা হিসেবে পরিচিত। কারখানাটি পুরাতন হয়ে গেলে এর পাশে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল) নামে নতুন কারখানা স্থাপন করে সরকার। যা বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর এনজিএফএফএল বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ৩০ জুন কারখানাটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সরকার। দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৬১ সালে নির্মিত কারখানাটিতে বর্তমানে কম হলেও ৪-৫ শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Manual2 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..