নগরীতে মশার উপদ্রবে অসহায় মানুষ : যা বলছে সিসিক!

প্রকাশিত: ৮:২০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০২৩

নগরীতে মশার উপদ্রবে অসহায় মানুষ : যা বলছে সিসিক!

Manual3 Ad Code

ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেট নগরীতে দিন নেই, রাত নেই, প্রতিমুহূর্তেই চলছে মশার অত্যাচার। মশার কামড়ে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। বেড়েছে মশাবাহিত নানা রোগ।

Manual8 Ad Code

সাধারণত বর্ষাকালে মশা বা ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এবার বর্ষাকাল শুরুর আগেই সিলেট নগরীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার উপদ্রুবে নাস্তানাবুদ নগরবাসী। তারা বলছেন, মশার জন্য রমজান মাসেও মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ইফতার ও সেহরির সময় মশার উৎপাত অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে।

Manual3 Ad Code

অপরদিকে মশার এই উপদ্রুবের দায় স্বীকার করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) জানিয়েছে, জনবল সংকটের কারণে মশক নিধন কার্যক্রম জোরালো করা যাচ্ছে না। যে কারণে সহসা এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না।

মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ লামাবাজার আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সুব্রত রাগের সুরে জানান, ‘আগে সন্ধ্যা নামার আগে থেকে মশার উপদ্রব বুঝা যেতো । এখন রাতের কথা বাদ দিলাম, দিনের বেলায়ও মশার উৎপাতে কোথাও শান্তিতে বসার উপায় নেই। পুরো নগরীতে যেন মশার রাজত্ব।’

বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, রায়নগর, শামীমাবাদ, উপশহর, হাওয়াপাড়া, দাঁড়িয়াপাড়া, লামাবাজার, মধুশহীদ, হাউজিং এস্টেট, বাদামবাগিচা, চৌকিদেখী, মেডিকেল রোডের এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।

ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে একই রকম অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছে, কিছুদিন ধরেই মশার মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণায় তারা অতিষ্ঠ। এখন রমজান মাস সারাদিন রোজা রেখে ইফতার ও সেহরির সময় মশার উপদ্রব জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বর্তমানে যে মশার উপদ্রব বেড়েছে তার নাম ‘কিউলেক্স’। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই মশার প্রজনন মৌসুম। মশার প্রজননস্থল ডোবা-নালা বা জলাশয় সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে ওষুধ ও স্প্রে প্রয়োগ না করলে ফল পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে মশার স্প্রে ছিটালেই এটি নিধন সম্ভব নয়।

ব্যবসায়ী সুরঞ্জিত বলেন, ‘মশার যন্ত্রণা এখন চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে। এখন রোজার মাস তাই সারাদিন দোকান খুলতে পারি না, সন্ধ্যায় দোকান খুলে বসি কিন্তু মশার যন্ত্রনায় টিকা যায় না।

অপর এক এক দোকানদার অভিযোগ করে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে মাঝেমধ্যে বড় একটা মেশিন (ফগার মেশিন) দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে দেখি। তাদের স্প্রেতে মশা নিধনের ওষুধ থাকে না কি লোক-দেখানো কার্যক্রম, এটি তারাই ভালো বলতে পারবে।’

Manual3 Ad Code

জনবল সংকটের বিষয়টি উল্লেখ করে সিসিকের স্বাস্থ্য শাখা সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে (বর্ধিত নতুন ১২টি ওয়ার্ড ছাড়া) একযোগে ঔষধ ছিটাতে হলে অন্তত ১৫০ জন কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু এই কাজের জন্য সিটি করপোরেশনের কোন জনবল নেই। মাত্র দুইজন স্প্রে ম্যান রয়েছেন। তাই কখনোই একযোগে পুরো নগরীতে ঔষধ ছিটানো সম্ভব হয় না। একেক ওয়ার্ড করে ঔষধ ছিটাতে গেলেও বাইরের দিনমজুরের উপরের ভরসা রাখতে হয়। অনভিজ্ঞ কর্মীরা ঠিকমতো ঔষধ ছিটাতেও পারে না। এছাড়া একেক ওয়ার্ড করে ঔষধ ছিটানোর পর মশা পার্শ্ববর্তী এলাকায় চলে যায়। যে কারণে মশক নিধন সম্ভব হয় না। ফলে মশার বংশবৃদ্ধি কমছে না। তাই ঔষধ ছিটিয়েও ফল মিলছে না।

Manual8 Ad Code

সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়া ও খালের উপর এবং রাস্তার পাশে বক্স ড্রেন নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। এই বক্স ড্রেনগুলোই মশার প্রজনন স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপর অংশ বন্ধ থাকার কারণে ড্রেনের ভেতর ঔষধও ছিটানো সম্ভব হয় না। ফলে এসব ড্রেনের ভেতর মশা ডিম পেড়ে বংশ বৃদ্ধি করছে।

নগরীর মেন্দিবাগের বাসিন্দা জুনেদ আহমদ চৌধুরী জানান, মশার যন্ত্রণায় তার এলাকার মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে আছে। গেল কয়েক মাস থেকে সিটি করপোরেশনের কেউ ওই এলাকায় মশার ঔষধ ছিটায়নি। মাঝে মধ্যে ছিটালেও খুব বেশি দিন স্বস্তিতে থাকা যায় না। ঔষধ ছিটানোর পর এক সপ্তাহ মশার উপদ্রব কিছুটা কমলেও পরে আবার বেড়ে যায়।

নগরীতে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নগরভবনে সভা হয়েছে। এ সভায় জনবল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে এতোদিন একযোগে পুরো নগরীতে অভিযান করা যায় নি। ফলে ঔষধ ছিটিয়েও কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না। বর্তমানে নগরীর ১, ২, ৩ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মশক নিধন অভিযান চলছে উল্লেখ করে ডা. জাহিদ বলেন, এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে ঔষধ ছিটিয়ে মশার যন্ত্রনা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন একযোগে পুরো নগরীতে ঔষধ ছিটানো ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো। এছাড়া অন্তত ১০ দিন অন্তর অন্তর মশার প্রজননের স্থানগুলোতে ঔষধ ছিটাতে হবে। তাহলে মশার উপদ্রব কমানো সম্ভব হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2023
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..