সিলেট ছাত্রলীগ আট টুকরা

প্রকাশিত: ২:৫৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০১৮

Manual2 Ad Code

ইয়াহইয়া ফজল, সিলেট : শুভেচ্ছা, তালতলা, কাশ্মীর, দেউড়ি, সোনার বাংলা, তেলিহাওর, টিলাগড় ও সুরমা। না, এগুলো কোনো বিপণিবিতানের নাম নয়। সিলেট ছাত্রলীগের বিভিন্ন অংশের নাম। বর্তমানে সংগঠনটিতে আটটি ভাগে ১৭টি বলয় দৃশ্যমান।

আশির দশকে সিলেট ছাত্রলীগ মূলত দুই ধারায় বিভক্ত ছিল। শুভেচ্ছা ও তালতলা নামে দুই পক্ষে (গ্রুপ) ছাত্রলীগের আশীর্বাদ ছিলেন দুই প্রয়াত কেন্দ্রীয় নেতা। একজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, অন্যজন দেওয়ান ফরিদ গাজী। জাতীয় ছাত্রলীগ নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে একীভূত হলে কাশ্মীর গ্রুপের আবির্ভাব। ১৯৯৩ সালে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে শুভেচ্ছা ভেঙে হয় দর্শন দেউড়ি ও টিলাগড় গ্রুপ। এ সময় ছাত্রলীগের গ্রুপিং রাজনীতির অনেকটা নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের হাতে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার জন্য গ্রুপিং রাজনীতি তখন বেশ সরব থাকলেও সংঘাতপূর্ণ ছিল না।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সিলেট ছাত্রলীগের গ্রুপিং রাজনীতি নতুন মাত্রা পায়। সংঘাত ও সংঘর্ষ বাড়তে থাকে। তৈরি হয় নতুন নতুন গ্রুপ। দর্শন দেউড়ি গ্রুপ ভেঙে হয় সোনার বাংলা গ্রুপ এবং তালতলা গ্রুপ ভেঙে হয় তেলিহাওর গ্রুপ। এ সময় সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে জড়ানো হয় ছাত্রলীগের গ্রুপিংয়ে। মূলত এই ছয় গ্রুপে চলে রাজনীতি। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। জেলা ও মহানগর থেকে কলেজ পর্যায়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়মিত না হওয়া এবং তাতে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় পদপ্রত্যাশী নেতারা অস্তিত্ব জানান দিতে ও সাংগঠনিক তত্পরতার স্বার্থে গ্রুপ ও বলয়কেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চা করতে থাকেন। এই গ্রুপ আর বলয়কেন্দ্রিক রাজনীতি বর্তমানে সংঘাত, সংঘর্ষ আর অপকর্মের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ছাত্রলীগ কতটি গ্রুপে বিভক্ত তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে।

Manual2 Ad Code

আজাদুর রহমান আজাদের গ্রুপে সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরী কেন্দ্রিক একটি বলয় থাকলেও রনজিত গ্রুপে দুটি বলয় রয়েছে। এর মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরন মাহমুদ নিপুকে কেন্দ্র করে একটি বলয় এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে ঘিরে অন্য বলয়। দুটি বলয়ের মধ্যে নিপু বলয়ের কর্মীরা নগরের বালুচর এলাকায় এবং জাহাঙ্গীর কেন্দ্রিক বলয় খাদিমপাড়া ও মেজর টিলা এলাকার ওয়ান ব্যাংকের সামনে অবস্থান করে থাকে। একসময় ছাত্ররাজনীতি বড় ফ্যাক্টর ছিল কাশ্মীর গ্রুপ। মূলত নগরের দরগা গেট এলাকায় হোটেল কাশ্মীরকেন্দ্রিক আড্ডা থেকে গ্রুপটির এমন নাম। এই গ্রুপ চলে আওয়ামী লীগ নেতা বিধান কুমার সাহার নেতৃত্বে। কাশ্মীর গ্রুপের একটি বলয় ছিল মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি অরুণ দেবনাথ সাগরকে ঘিরে। ২০১৪ সালে কলেজে ভাঙচুরের ঘটনায় মদন মোহন কলেজ কমিটি স্থগিত করে দেয় কেন্দ্র। এরপর সাগর কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। বর্তমানে এই বলয়ে মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এম এইচ ইলিয়াস দিনারকে তত্পর দেখা যায়। ২০১০ সাল থেকে কাশ্মীর গ্রুপের অগ্রভাগে ছিল ইমরুল হাসানের বলয়। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদকের বলয় ২০১৫ সালের পর নিষ্ক্রিয় হতে থাকে। এ ছাড়া গ্রুপের একসময়ের প্রভাবশালী ছাত্রনেতা ছিলেন পীযূষ কান্তি সরকার। তাঁকে কেন্দ্র করে আরেকটি বলয় ছিল। তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন খান নেতৃত্ব দেন নগরের তেলিহাওর গ্রুপের। এই গ্রুপ আবার একাধিক বলয় ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে। সদ্য বিলুপ্ত জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদকে ঘিরে একটি বলয় তালতলা এলাকায় অবস্থান করে। এই গ্রুপের আরেকটি বলয় গড়ে উঠেছে নগরের কালীবাড়ি এলাকায়। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সুজেল তালুকদার এই বলয়ের নেতা।

Manual1 Ad Code

গ্রুপিং রাজনীতিতে সিলেট ছাত্রলীগের দর্শন দেউড়ি গ্রুপ পরিচালিত হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে ঘিরে। এই গ্রুপে আছে একাধিক বলয়। তার মধ্যে বর্তমান মহানগর সভাপতি আবদুল বাছিত রুম্মানকে ঘিরে একটি বলয়। নগরের সুবিদবাজার এলাকায় এই বলয়ের অবস্থান। তবে দর্শন দেউড়ি এলাকায় নিজ বলয়ের কর্মীদের নিয়ে বসেন সাবেক জেলা সভাপতি রাহাত তরফদার। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপসম্পাদক মইনুল ইসলামকে কেন্দ্র করে আরেকটি বলয় রয়েছে এই গ্রুপে। এই বলয়ের অবস্থান নগরের আম্বরখানা এলাকায়। পুরনো গ্রুপগুলোর অন্যতম সোনার বাংলা গ্রুপ মূলত গড়ে উঠেছে সাগরদীঘির পাড়ে সোনার বাংলা কমিউনিটি সেন্টার ঘিরে। একসময়ের দাপুটে গ্রুপ এখন কিছুটা নিষ্ক্রিয়।

নতুন আরো অন্তত তিনটি গ্রুপ নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী কেন্দ্রিক একটি, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ কেন্দ্রিক একটি এবং যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর আরেকটি গ্রুপ।

Manual6 Ad Code

ছাত্রলীগ সিলেট জেলা বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন, ‘গ্রুপ বা বলয় ছাত্রলীগের মূল রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে আমি মনে করি না। গ্রুপ বা বলয় ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু, আমরা তো একই মতাদর্শের মানুষ।’ খুনের বিষয়ে বলেন, ‘গ্রুপের কারণে নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে ছাত্রলীগের কতিপয় ছেলেদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আমরা কাজ করছি।সূত্র-কালের কন্ঠ

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..