আকবরকে পালানোর পরামর্শ দেওয়া কে সেই ‘সিনিয়র অফিসার’?

প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২০

আকবরকে পালানোর পরামর্শ দেওয়া কে সেই ‘সিনিয়র অফিসার’?

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :  সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে ‘নির্যাতনে’ রায়হান আহমদ নিহতের প্রায় এক মাস পর এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত বহিস্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে আটক করা হয়েছে।

সোমবার সকালে তাকে আটকের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়- আটককারীদের একজন প্রশ্নের জবাবে আকবর বলছেন- ‘আমাকে সিনিয়র অফিসার বলছিলো তুমি আপাতত পালাইয় যাও। পরে আইসো। দুই মাস পরে মোটামুটি সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। এরপর থেকে প্রশ্ন ওঠেছে, কে সেই সিনিয়র অফিসার যিনি আকবরকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কানাইঘাট থেকে আকবরকে সিলেটে নিয়ে আসার পর সোমবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। এসময় ‘সিনিয়র অফিসারের’ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চান পুলিশ সুপারের কাছে।

জবাবে ফরিদ উদ্দিন বলেন, আকবর যেসব জায়গায় পালিয়ে ছিলো বলে জানা গেছে সেখানেই যারাই তাদের সহযোগিতা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশের কেউ যদি সহযোগিতা করে থাকে তবে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

Manual8 Ad Code

তিনি বলেন, এটা হবে দুই প্রক্রিয়ায়। একটি হচ্ছে মামলার তদন্তের মাধ্যমে। পিবিআই এই মামলার তদন্ত করছে। তদন্তে তারা কারো সম্পৃক্ততা পেলে তাকে আইনের আওতায় আনবে। এছাড়া পুলিশের ইসন্সেপ্টকর জেনারেল (আইজিপি) তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। এই তদন্ত কমিটি যদি রায়হানের পালানোর সাথে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পায় তবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ১১ অক্টোবর মারা যান নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদ। রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ফাঁড়িতে ধরে এনে রাতভর নির্যাতনের ফলে রায়হান মারা যান।

এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান শেষে ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ওইদিনই পালিয়ে যান আকবর।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ১৪ অক্টোবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যা আকবর। নোমান নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক ও স্থানীয় এক দালাল তাকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করেন বলেও গোয়েন্দা কর্মকর্তরা জানান।

তবে প্রথম থেকেই আকবরের পালানোর সাথে সিলেট মহানগর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে। রায়হানের পরিবার থেকেও এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।

Manual5 Ad Code

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আকবর হোসেন ভূঁইয়ার পলায়নের ঘটনায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কেউ জড়িত কি না সেটি খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ক্রাইম অ্যানালিসিস) মো. আয়ুবকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটি গত ২৬ অক্টোবর তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে আকবরের পালানোর জন্য মহানগর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়।

এদিকে, এই তদন্ত কমিটি সিলেটে এসে তদন্ত কাজ শুরু করার পর গত ২১ অক্টোবর আকবরকে পালানোতে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে বন্দরবাজার ফাঁড়ির আরেক এসআই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

Manual5 Ad Code

এরপর সমালোচনার মুখে গত ২২ অক্টোবর সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা হয়।

সিলেটের নতুন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ দায়িত্ব গ্রহণের পর জানিয়েছেন, আকবরের পালানোর সাথে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত নিজেদের ওই ‘সিনিয়র অফিসার’কে খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে, রায়হান হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। এই মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবর ছাড়াও এই ঘটনায় পিবিআই এ পর্যন্ত আরও ৩ পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

এদের মধ্যে কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন উর রশিদকে দুই দফায় আটদিন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহীকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে তারা কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হননি। এছাড়া রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী সাইদুর শেখ নামের এক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2020
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..