ছাতকে ইউপি সদস্যের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অনশন

প্রকাশিত: ৩:৩১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০

ছাতকে ইউপি সদস্যের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অনশন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের ছাতকে স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে প্রেমিকের বাড়িতে ২ দিন ধরে  অনশন করছেন প্রেমিকা। শনিবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে তিনি অনশন শুরু করেন।
জানা যায়, প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতর উপজেলার ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য ও বাউসা গ্রামের বাসিন্দা। আর প্রেমিকার বাড়ি একই ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামে। প্রায় ৭ বছর আগে তাদের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক প্রেমে পরিনত হয়। ভিকটিম তরুণীর অভিযোগ
সম্পর্কের এক পর্যায়ে ছাতক পৌর শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে খাবার খেতে যান দু’জন। খাবারের সঙ্গে নেশা মিশিয়ে ভিকটিমকে অজ্ঞান করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ধর্ষন করে প্রেমিক আতর আলী। এ ঘটনার পর আতর আলী ভিকটিমকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বস্থ করা হয়। পরে একাধিকবার  দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। সম্প্রতি ওই তরুণী বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে এড়িয়ে চলতে থাকে প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতর।
ভিকটিম তরুণীর পরিবার সুত্রে জানা যায়, স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করা হয়। ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধানের জন্য পরিষদের ৫ সদস্যে একটি বোর্ড গঠন করে দেন। ওই বোর্ড কতৃক সমাধানের চেষ্টা করা হলে সাড়া দেননি প্রেমিক ইউপি সদস্য আতর আলী। একপর্যায়ে থানা পুরিশের নিকট আইুন সহায়তা চান ভিকটিমের পরিবার।
ভিকটিম অভিযোগ শনিবার দিবাগত রাত ১০ টার দিকে তিনি ছাতক থানায় যান। থানা থেকে বের হওয়ার পর থানার সামনেই দেখা হয় প্রেমিক আতর আলীর সঙ্গে। বিয়ে করবেন সম্মতি দিয়ে ভিকটিমকে বাড়িতে নিয়ে যান প্রেমিক আতর আলী। রাত ১২ টার দিকে ভিকটিমকে ঘরের দরজার সামনে রেখে মকছুদুল হাসান আতর চলে যান। তখন থেকেই ভিকটিম অনশন শুরু করেন।
এ বিষয়ে ভিকটিম তরুণী বলেন, আমার সব শেষ হয়েছে। অনশন শুরু করার পর আতর আলীর চাচাতো ভাই আবদাল আমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। স্ত্রীর স্বীকৃতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি অনশন ভঙ্গ করবোনা। তাকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করবোনা। যদি তাকে বিয়ে করতে না পারি তাহলে এই ঘর থেকে আমার লাশ যাবে বলে হুমকি প্রদান করেন ভিকটিম।
ভিকটিম তরুণীর মা কুহিনুর বেগম বলেন, শনিবার রাতে মেয়ের খোঁজ না পেয়ে রোববার সকালে জিডি করার জন্য থানায় যাই। কিন্ত জিডি করতে পারিনি। তিনি কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, আইন গরীব ধনী সবার জন্য সমান শুনেছি। কিন্ত আমি শহীদ মুক্তিযোদ্বার মেয়ে হয়েও আইনি সহায়তা পাইনি। এটা আমারা মত গরীব অসহায়দের জন্য অভিশাপ। পরে জানতে পেরেছি মকছুদুল হাসান আতর আমার মেয়েকে তার বাড়িতে নিয়ে গেছে। পওে আবার থানায় গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছি।
সে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। সেখানে আমার মেয়েকে নির্যাতন করা হচ্ছে। মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার একটাই দাবি মেয়েটি যেনো স্ত্রীর স্বীকৃতি পায়।
অভিযুক্ত প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতরের পিতা আছন আলী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা। আমি অসুস্থ্য মানুষ।
অভিযুক্ত প্রেমিক মকছুদুল হাসান আতরের চাচা পরিচয়ে আব্দুর রহীম বলেন, মেয়েটি আমাদের বাড়িতে রয়েছে। কোন নির্যাতন করা হয়নি। মকছুদুল হাসান আতরকে (সোমবার) দুপুর ১২ টার মধ্যে আসতে বলেছি।
ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মুহিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এখন শুনলাম মেয়েটি আমার ওয়ার্ডের। যদি ঘটনাটি সত্যি হয় আমি এর বিচার চাই।
৪ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ময়না মিয়া বলেন, এ বিষটি সমাধানে আমরা ব্যর্থ বলে দিয়েছি। ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য ইব্রাহিম আলী বলেন,  বিষয়টি সমাধানের জন্য পরিষদের  চেয়ারম্যান ৫ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত সমাধান করা সম্ভব হয়নি। আজকে খবর পেয়েছি মেয়েটি ইউপি সদস্য মকছুদুল হাসান আতরের বাড়িতে অনশন করছে।
ছাতক থানার এস আই ওসমান বলেন, ভিকটিমের মা পরিচয়ে একজন এসে মৌখিক ভাবে বলেছেন। ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদ আমার দায়িত্বে। তাই পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিষটি নিয়ে মুঠোফোনে কথা বলেছি।
ছাতক সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে।  কিন্ত সমাধান করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান বিষয়টি নিয়ে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে আইনত ব্যবস্থা নেওয়াই ভাল মনে করি।
ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামাল এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ এসপি সার্কেল (ছাতক) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..