জাফলং রাতের আধারে পাথর হরিলুট : চার ছাত্রদল নেতার চাঁদাবাজি!

প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০২৪

জাফলং রাতের আধারে পাথর হরিলুট : চার ছাত্রদল নেতার চাঁদাবাজি!

Manual6 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক :: আজির, সুমন, পারভেজ, রুবেল। জাফলংয়ে এক আতঙ্করে নাম। তারা চার জনই আছেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের কমিটিতে। প্রকৃতি কন্যা জাফলংকে ধ্বংস করে রাতের আধারে পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। শ্রমিকদের নাম মাত্র মূল্য দিয়ে বাকি টাকা নিচ্ছেন বাগবাটোয়ারা করে। আর এই ভাগে যুক্ত রয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, বিএনপির নাম ব্যবহারকারী কয়েকজন নেতা ও কিছু নামধারী সাংবাদিকরা। ফলে তারা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন এই ধ্বংসজজ্ঞ। এসংক্রান্ত বেশ কিছু ভিডিও চিত্র “ক্রাইম সিলেট” এর হাতে এসেছে।

 

Manual1 Ad Code

জানা যায়, গত প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে জাফলংয়ে পিয়াইন নদীতে চলছে পাথর উত্তোলন। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করা হয় ক্রেতাদের কাছে। প্রতিটি গাড়ি পাথর তুলতে স্থানীয়ভাবে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা, আর তা বিক্রি করা হয় ৩৪ থেকে ৩৬ হাজার টাকা করে। পরিবেশ বিধ্বংসী এই ধ্বংসজজ্ঞের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন (২৬), ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ সভাপতি সুমন শিকদার (২৮), সহ সভাপতি পারভেজ শিকদার (৩০) ও রুবেল আহমেদ (২৭)।

 

পাথর বহনের কাজে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা জানান, তারা আজির, সুমন, পারভেজ, রুবেলের নির্দেশে তারা পাথর উত্তোলন করছেন। এই চার ছাত্রদল নেতা এলাকায় খুবই প্রভাবশালী। এছাড়াও তারা স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে রেখেছন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। প্রতিদিন রাতে ট্রাক ভর্তি এসব পাথর যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদ্য বিলুপ্ত বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শাহ আলম স্বপনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ায় এই চার জনকে বহিষ্কারও করেছিল গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রদল। কিন্তু গত ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর তারা আবারো ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন।

Manual3 Ad Code

 

Manual1 Ad Code

জানা যায়, জাফলংকে প্রতিবেশ-সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ইতিমধ্যে ঘোষনা করা হয়েছে। তবে সেখানে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এতে ওই এলাকার পরিবেশ হুমকিতে রয়েছে।

 

এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে সারি-গোয়াইন ঘাট নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত প্রবাহমান জাফলং-ডাউকি নদীকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়। গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ১১টি মৌজা নিয়ে মোট ১৪.৯৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকেও ইসিএ-এর আওতায় আনা হয়।

 

ইসিএ এলাকার মধ্যে আরও রয়েছে, জাফলং-ডাউকি নদী ও এ নদীর উভয় পাড় থেকে ৫০০ মিটার প্রস্থের এলাকাসহ বল্লাঘাটের বিপরীত দিকে পিয়াইন নদী পর্যন্ত বিস্তৃত পুরো খাসিয়াপুঞ্জি এলাকা।

 

সূত্র বলছে, পাথর উত্তোলনে যন্ত্রনির্ভরতা জাফলংকে সংকটাপন্ন করে তোলে। এছাড়া ২০১১ সালে জাফলংয়ে ডাউকি নদীতে অবৈধভাবে একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি অপসারণে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে রিট করে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালত সেতু অপসারণসহ ওই নদীকে সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে আদেশ দেন। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়। ২০১৬ সালে গেজেটটি সিলেট জেলা প্রশাসকের কাছে যায়।

 

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পাথর উত্তোলন কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে ইসিএ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে।

 

ইসিএর প্রজ্ঞাপন জারির এক বছরের মাথায় ২০১৬ সালে জাফলংকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে জাফলংয়ের ২২.৫৯ একর জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়। তবে এর পরেও পাথর উত্তোলন থামছে না।

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ সভাপতি সুমন শিকদার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এটি একটি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে করা হয়েছে।

 

অভিযুক্ত পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ সভাপতি পারভেজ শিকদার বলেন, এটি সত্য নয়। আমরা পরে এটি ক্লিয়ার করতে সক্ষম হব।

 

এছাড়াও অভিযুক্ত পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন (২৬) ও সহ সভাপতি রুবেল আহমেদ (২৭) মোবাইল ফোনে কল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয় নি।

 

Manual7 Ad Code

গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক এডভোকেট সাহেদ আহমদ বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ায় তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের সাথে দলের কোন সম্পর্ক নেই।

 

গোয়াইনঘাট থানার ওসি তোফায়েল আহমদে বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ শীঘ্রই যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে।

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..